ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

ঈদ সিনেমায় হল সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২২ জুন ২০১৭

ঈদ সিনেমায় হল সঙ্কট

কয়েকদিন বাদেই ঈদ। সবার সব পরিকল্পনা শেষ হলেও এখনও পুরোন হয়নি বিনোদনের খোরাক, সিনেমা মুক্তির বনাঢ্য আয়োজন। রোজা শুরুর আগে এবং রোজার প্রথম দিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় অন্তত চারটি সিনেমা ঈদ উপলক্ষে দেশের হলগুলোতে মুক্তি পাবে। নবাব, বস-২, রাজনীতি, রংবাজ এর মধ্যে ‘রাজনীতি’ ছাড়া বাকি তিনটি চলচ্চিত্র যৌথ প্রযোজনার ছবি এমনটাই জানা যায়। কিন্তু, আনন্দের এই ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছো ততই অনিশ্চয়তার অন্ধকার ঘিরে ফেলেছে ঈদ সিনেমার রঙ্গিন ভুবন। দর্শক এখন কী করবে! দর্শকদের যে অংশ নিয়মিত হলে গিয়ে সিনেমা দেখেন না তারাও কিন্তু ঈদ সিনেমার অপেক্ষায় থাকেন। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে বন্ধু-বান্ধবযোগে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার রেয়াজ এখনও রয়েছে, যে কারণে সিনেমা এখনও ঈদ আনন্দের বিশেষ অনুষঙ্গ! কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো যেভাবে দিন দিন দেশীয় চলচ্চিত্র বা বাংলা সিনেমা পর্দায় এবং পর্দার বাইরে সৌন্দর্য হারিয়ে কুৎসিত রূপ ইচ্ছে তাতে ঈদের বিশেষ দর্শক ও বুঝি হাত ছাড়ার পর্যায়। বেশকাল যাবত চলচ্চিত্র শিল্পে অশুভ ছায়া কিছুতেই পিছন ছাড়ছেনা । মাস খানেক আগে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঘটনা কম রটেনি, এর প্রভাবে অভিনয় শিল্পীরা কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়েছেন তা মোটামুটি স্পষ্ট। সবশেষে যখন ঈদ দুয়ারে কড়া নাড়ল তখন আরেক দফা মতঐক্যের অভাবে রাজপথ থেকে সচিবালয় প্রকম্পিত হলো চলচ্চিত্র শিল্পীদের দাবি দাওয়ায়। আকারে বড় এবং অর্থে বেশ ভারি প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া গেলবারের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে দুটি সিনেমা মুক্তির পরিকল্পনা করেছে। সিনেমা দুটি ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত। নবাব এবং বস-২ ইতোমধ্যে সব আলোচনার তুঙ্গে, সিনেমার ট্রেইলর থেকে শুরু করে গান, শেষে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ভঙ্গের আশঙ্কা। এসব কারণে রাজপথে সরব হন শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কর্ণধার থেকে সাধারণ সদস্য। যৌথ প্রযোজনার নামে, দেশীয় চলচ্চিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে নির্মিত হচ্ছে এমন সব সিনেমা, এই দাবিতে ঢাকাই চলচ্চিত্র শিল্পীদের এক অংশের সরগরম গেল কয়েকদিন ধরে। রাজপথ অবরোধ থেকে সেন্সরবোর্ড ঘেরাও শেষে মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর দফতর। অন্য অংশে, একসময় দেশীয় চলচ্চিত্র রক্ষার কর্ণধার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির প্রাক্তন সভাপতি যিনি, এক সময় কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথ কাঁপিছেন, যে কোন মূল্যে দেশীয় চলচ্চিত্র রক্ষা করবেন এই দাবিতে। টালিউডের আইকন শাকিব খান। একইদিন তাকেও দেখা গেছে, তার অভিনিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘নবাব’ এবং একই ব্যানারের আর এক সিনেমা ‘বস-২’ এর নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজসহ মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর দফতরে। তারা অবশ্য কোন উচ্চবাচ্চ্য না করে কিভাবে ঈদে সিনেমা দুটি হলে প্রদর্শন করা যায় সেই চেষ্টাই করছেন। অন্যদিকে যৌথ প্রযোজনার নামে নাম রক্ষার যে করসত চলছে তা বন্ধের আন্দেলনও চলছে অপর প্রান্তে। এ সবের যাঁতাকলে সিনেমামুখী দর্শকদের কি হাল তা কেবল তারাই ভাল জানেন। যতদূর খোঁজ নিয়ে জানা যায় ‘নবাব’ সিনেমা নিয়ে যতখানি অভিযোগ তার থেকে বস-২ এর নিতিমালা ভঙ্গের আশঙ্কা করছেন বেশি করছেন আন্দোলনকারীরা। চলচ্চিত্র শিল্পীরা যখন রাজপথে প্রতিবাদে মুখর তখন, পরবর্তীতে যৌথ প্রযোজনার সব নিতিমালা মেনে চালার আশ্বাসে সিনেমার ছাড়পত্র পেতে শাকিব অংশের জোর প্রচেষ্টা। অবশ্য এমন আশ্বাস এর আগেও এই প্রযোজনা সংস্থা দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে ঢাকায় ‘বস-২’ এর নায়ক জিৎ ঢাকায় আসেন এবং সাংবাদিক সম্মেলনও করেন। তাকে প্রশ্ন করা হয় যৌথ প্রযোজনার সব নীতিমালা ‘বস-২’ ক্ষেত্রে মানা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে বিষয়টা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখবেন বলে জবাব দেন তিনি। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে দুইপক্ষের সব কথা শোনেন এবং অভিযোগপত্র গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। সব কিছু দেখে বিবেচনা করা হবে বলে তারা আশ্বস্ত করেন। তবে এবারের মতো শান্ত হয় আন্দোলনকারী শিল্পীরা। এই লেখা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে জানা যায়নি। অদৌ ঈদে কয়টি নতুন সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে। তবে হ্যাঁ। নতুন সিনেমা মুক্তি পাবে। তবে চলচ্চিত্র শিল্পী, সিনেমা এবং সিনেমামুক্তি নিয়ে এত জটিলতা পৃথিবী আর কোথাও হয় কিনা আমাদের জানা নেই। অন্যদিকে নবাব এবং বস-২ এর জন্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সিনেমা হল ইতোমধ্যে বুক হয়ে গেছে। যে কারণে দেশীয় পরিচালনা ও প্রযোজনা সংস্থার আর এক আলোচিত চলচ্চিত্র ‘রাজনীতি’ হয়ত হল সঙ্কটে ভুগবে এমনটাও জানা গেছে। এছাড়া ‘রংবাজ’ আদৌ এই ঈদে মুক্তি পাবে কিনা সেটাও অপেক্ষার বিষয়। জানা যায় রংবাজের সব কাজ এখনও শেষ হয়নি। অথচ রমজানের শুরুতেই প্রায় সব পত্রিকায় খবর আসে এসব সিনেমা মুক্তির। প্রচার চলে ঈদে আসছে পর্দা কাঁপাতে ও দর্শকদের হৃদয় জয় করতে এমন প্রচারণা। আর দর্শক কতখানি উৎফুল্ল হবে তা অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের আর একটি বড় সঙ্কট তা হলো গত দু’বছর ধরে এক নায়কের সিনেমা ছাড়া ঈদে হলের পর্দা উঠছে না। আর এসব কারণেই কি, দিন দিন সিনেমার সংখ্যায় সঙ্কট তৈরি হচ্ছে!
×