ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল্লাহ আল মাছুম

পিছু ছাড়ে না দুর্ঘটনার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২২ জুন ২০১৭

পিছু ছাড়ে না দুর্ঘটনার শঙ্কা

সংবাদপত্রের পৃষ্ঠাসজ্জা যখন হচ্ছে সড়কপথের যাত্রী দুর্ভোগ আর নৌপথে ভয়াবহতম প্রাণহানির শঙ্কার সতর্কবাণী উচ্চারণের মাধ্যমে, আর তা স্থান পাচ্ছে লিড নিউজে তখন এবারের ঈদযাত্রায় নামা সাধারণ মানুষ যে স্বস্তিতে নেই তা অনুমেয়। এমন নয় যে, সমস্যাগুলো ঈদ উপলক্ষে হঠাৎ অপ্রত্যাশিতভাবে সামনে এসেছে। বরং সমস্যাগুলো সকলের জানা এবং ঈদ উপলক্ষে কী কী মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তাও নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে। আফসোস, চোখের সামনে সব ঘটলেও, চেতনায় সব বুঝতে পারলেও আমাদের যেন কিছুই করার নেই। কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো দুর্ভোগ আর প্রাণহানি নিয়ে দায়সারা মন্তব্য করবে আর ভোগান্তিতে পড়া জনসাধারণ সরকার আর অদৃষ্টে দোষারোপ করতে করতে কষ্ট সহ্য করবে। শত ঝামেলা সয়েও যারা বাড়িতে সুস্থ দেহে পৌঁছবে তারা ঈদের আনন্দেস্তান করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। বাকিরাও বাড়ি পৌঁছবে আহত শরীর ও মনে। কেউ পৌঁছবে আসল নাড়ির ঠিকানায়। এ চিন্তা মোটেই অমূলক নয়। গত বছরের ঈদের সময়কার হতাহতের পরিসংখ্যান বুক কাঁপিয়ে দেয়। বিগত দুই বছরে ঈদ-উল-ফিতরের আগে ও পরের ৭ দিনে রাজপথে হতাহত কয়েক শ’ মানুষ। অন্যসব হিসাব বাদ, সরকারী হিসাবেই গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা গেছে ৩৪ হাজার ৯১৮ জন। আর বেসরকারী হিসাবে যার সংখ্যা ১৫ বছরে ৫৫ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের এসব সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ ঘটেছে ঈদের সময়ে আর সার্বিক দুর্ঘটনার ৪৪ শতাংশ ঘটে দুই বা ততোধিক যানবাহনের সংঘর্ষে। আর কিছু দিন পরেই বছর ঘুরে আবার আসছে ঈদ-উল-ফিতর। ভোগান্তি আর দুর্ঘটনার অনুঘটক প্রতি বছরের ন্যায় একই আছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভাঙাচোরা সড়ক, নির্মাণ সামগ্রীর স্তূপ, হাটবাজার, স্বল্প গতির যানবাহন, লোকাল গাড়ির আধিক্য, অবৈধ পার্কিং, বাজার, ময়লা, সড়ক বর্ধিত ও মেরামতের কাজের জন্য ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, যমুনা সেতুর পূর্ব স্টেশন, আশুলিয়া, বাইপাইল মোড়, চন্দ্রা মোড়, কোনাবাড়ি, কালিয়াকৈর, নবীনগর, কাঁচপুর, ভুলতা, মেঘনা ও চিরচেনা পয়েন্টগুলোতে যানজট সহ্যের সীমা অতিক্রম করবে। আর এআরআই এর চিহ্নিত ২০৯টি ব্ল্যাকস্পট মেরামত না হওয়া, অদক্ষ মাতাল চালক, ঈদ উপলক্ষে রাস্তায় নামা ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় বাস, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, পানি জমে থাকা সড়কে সে রাস্তার সঙ্গে অপরিচিত চালক, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ঘটার আশঙ্কা প্রাণহানির মতো দুর্ঘটনা। অপরদিকে বর্ষায় নৌপথের আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সাধারণকে শঙ্কিত করে তুলছে। যেখানে নিবন্ধিত ২ হাজার ২২৫টি যাত্রীবাহী নৌযানের ১ হাজার ৩৫৪টিই ত্রুটিপূর্ণ সেখানে ঈদের ৪/৫ দিন আগে থেকে নামবে নতুন ধোয়া-মোছা ফিটনেসবিহীন নৌযান। গত বছর ঈদুল ফিতরে ৩টি নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১১ জন। এবারের ভরা বর্ষার প্রতিকূল আবহাওয়ায় যখন উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট ফিটনেসবিহীন নৌযান অপ্রতুল বয়া বাতির নির্দেশনায় লাইফ জ্যাকেট, ফায়ার বাকেট, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র, বালুভর্তি বাক্স বা বালতি, হস্তচালিত পানির পাম্প ইত্যাদি আপদকালীন সময়ের প্রয়োজনীয় উপকরণ ছাড়াই অদক্ষ মাস্টার ও চালকের দায়িত্বে কানায় কানায় ভর্তি অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা নদী বন্দরের পল্টুনের রেলিং ভেঙে অথবা নৌকা দিয়ে লঞ্চে উঠতে গিয়ে পানিতে দুই নৌযানের মাঝে পড়ে আহত, নিহতদের পেছনে ফেলে সক্ষমতার চাইতে অতিরিক্ত গতিতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে তখন খোদাই জানেন কার ঈদ কীভাবে লেখা হবে। এসব শঙ্কার কথা যাত্রী, মালিক, সরকার সকলের ভালভাবেই জানা আছে। তবু কয়েকগুণ দামে টিকেট কিনে পরিবহন সঙ্কট, সময়মতো না ছাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী, চাকু পার্টি, টানা পার্টি, অজ্ঞান পার্টি, নারী ছিনতাইকারীসহ সকল ফাঁড়া মোকাবেলা করে স্বজনের সান্নিধ্য পাওয়ার প্রত্যাশায় মানুষ ছুটে চলবেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় থেকে
×