ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণতন্ত্রের অস্তিত্ব ছিন্নভিন্ন করতে হামলা ॥ বিএনপি

ফখরুলের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচীতে সাড়া নেই

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২০ জুন ২০১৭

ফখরুলের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির কর্মসূচীতে সাড়া নেই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচীতে কোন সাড়া নেই। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজধানী ঢাকার প্রতিটি থানায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয় সোমবার। কিন্তু রাজধানীর কোথায়ও বিএনপির ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। তবে দেশে বিভিন্ন জেলা শহরের বিচ্ছিন্নভাবে এই কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবেও কোন বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করতে দেখা যায়নি। শুধু মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার প্রতিবাদে পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবে এ হামলার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এক মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে। এতে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশেই বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা বলেন, গণতন্ত্রের সর্বশেষ অস্তিত্ব ছিন্নভিন্ন করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে। এ হামলায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। গত রবিবার বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পথে গাড়িবহর আক্রান্ত হয়। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদরের ইছাখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এতে মির্জা ফখরুলসহ দলের নেতাকর্মীরা আহত হন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এ আঘাত গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। আমাদের ওপরই যদি এ ধরনের হামলা করা হয় তাহলে সাধারণ জনগণের অবস্থা কি সহজেই বোঝা যায়। বিএনপি মহাসচিবের ওপর এই হামলার প্রতিবাদে রবিবার কুমিল্লা জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সারাদেশে জেলায় জেলায় এবং মহানগরে এবং রাজধানীর প্রতিটি থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। কিন্তু রাজধানীতে এ কর্মসূচী থাকলেও বিএনপির কোন নেতাকর্মীকে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এদিকে বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আওয়ামী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশেই বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। গু-ামির এই নব সংস্করণ জনসমর্থন ছাড়া দুঃশাসন টিকিয়ে রাখারই ইঙ্গিতবহ। গণতন্ত্রের সর্বশেষ অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার জন্যই এটি একটি সহিংস আগ্রাসী পদক্ষেপ। এরা বিরোধী দলের মানবকল্যাণধর্মী, সমাজসেবামূলক কর্মসূচীকেও বানচাল করতে হিংস্র আক্রমণ চালায়। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক ভদ্রতার নিয়ম-কানুন মানা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে নেই। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস আর গু-ামিকেই নিজেদের জীবনে, আচরণে, কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আওয়ামী লীগ সমালোচনা ও বিরোধী দলের গণতন্ত্রস্বীকৃত তৎপরতাকে স্তব্ধ করে দেয়া বাধ্যতামূলক কর্মসূচী বলে মনে করে। গণবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এক অজানা ভয় থেকে আওয়ামী লীগের মনস্তাত্ত্বিক আবহাওয়া বদলে গেছে। সেখানে পতনের আশঙ্কায় তারা উদভ্রান্ত গু-ামিতে নেমে পড়েছে। এখন সবকিছু হারিয়ে আওয়ামী লীগ শেষ ভরসা হিসেবে গু-া রাজত্ব কায়েম করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সেজন্যই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের তকমাধারী আওয়ামী লীগ নিরপরাধ, নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছে। লুট আর দখলবাজি অব্যাহত রাখতে সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে মারছে। এ সময় রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। বিএনপি তার অধীনে নির্বাচনে যাবে না উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রকোপ এখন বিপজ্জনক রূপ ধারণ করেছে। প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহ, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ, নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ, মুক্তচিন্তার লেখক, বিবেকবান সাংবাদিক সবাই শেখ হাসিনার চরম রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার। নির্বাচন আসার আগেই গু-ামি ও সন্ত্রাসকে যেভাবে প্রজনন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হলে অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কী শোচনীয় বিপর্যয় ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়। সেই নির্বাচন হবে একতরফা, সন্ত্রাসকবলিত। ভোটের দিন ও এর পূর্বাপর অবস্থা চরম অরাজকতায় ঢেকে থাকবে। এ সময় বিএনপি মহাসচিবের ওপর হামলার ঘটনায় বিক্ষোভ থেকে গ্রেফতারকৃত বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপিনর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয়বাদী মহিলা দল আয়োজিত এক মানবন্ধন কর্মসূচীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে দেশের গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকারের বাক্সে বন্দী। জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মানববন্ধনে তিনি আর বলেন, গণতন্ত্রের, দেশের মানুষের অধিকারের স্বার্থে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। এ শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হলে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন যাতে করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না করে বিএনপির উপর আক্রমণ, হামলা, মামলা, খুন চালিয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের গণতন্ত্রে একটা সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। শেষে তিনি বিএনপির মহাসচিবের গাড়িবহরে হামলার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি করেন। মানববন্ধনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর (উত্তর) মহিলা দলের সভাপতি পেয়ারা মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সাধারণ সম্পাদক সামছুন্নাহার ভূঁইয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
×