ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভায় জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২০ জুন ২০১৭

মন্ত্রিসভায় জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুমোদন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বেতার, টেলিভিশনের মতো অনলাইন সংবাদমাধ্যমকেও সম্প্রচার কমিশনের অধীনে এনে নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭’-এর খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া মন্ত্রিসভা লাইসেন্স ছাড়া কৃষিকাজের জন্য নলকূপ স্থাপনে শাস্তি বাড়িয়ে তৈরি করা আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। পাশাপাশি অতিবৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানিতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যম নীতিমালার আলোকেই অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা করা হয়েছে। অনলাইন মিডিয়াটা যেন সুনিয়ন্ত্রিতভাবে কাজ করে- নীতিমালায় সে গাইডলাইন দেয়া হচ্ছে, উদ্দেশ্যও বলা আছে। তিনি জানান, অনলাইন সংবাদমাধ্যম পরিচালনার জন্য সম্প্রচার কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। এ কমিশন গঠিত হবে জাতীয় সম্প্রচার আইনের অধীনে, যা প্রণয়নের কাজ চলছে। জাতীয় সম্প্রচার কমিশন অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্য ‘গাইডলাইন’ তৈরি করবে। বিজ্ঞাপনের হার ও ফি সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে আর কমিশন গঠন না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমের দেখভাল করবে। নীতিমালায় অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের একটি বিষয় রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অনলাইন গণমাধ্যমকে কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। কমিশন হচ্ছে প্রস্তাবিত সম্প্রচার কমিশন। জাতীয় সম্প্রচার আইন যখন পাস হবে তখন কমিশন এক্সিসটেন্সে (দৃশ্যমান) চলে আসবে। যারা পত্রিকা বের করে তাদের যদি অনলাইন ভার্সন প্রয়োজন হয় তবে তাদের আর নতুন করে নিবন্ধন করতে হবে না। তারা যে ১৯৭৩ সালের প্রেস এ্যান্ড পাবলিকেশন আইনে লাইসেন্স নিয়েছে তাদের নতুন করে আর লাইসেন্স নিতে হবে না। তবে এ তথ্যটি কমিশনকে জানাতে হবে। নির্দিষ্ট আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বলে বেসরকারী টেলিভিশনগুলোকেও অনলাইন ভার্সনের জন্য কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে না। নিবন্ধন ফি কমিশন নির্ধারণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন যে ফি নির্ধারণ করবে তা দিতে হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের পরিচালনা পদ্ধতি (কোড অব গাইডেন্স) কী হবে সেটা কমিশন তৈরি করে জানিয়ে দেবে। কমিশনের কোন বিষয়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অভিযোগ করতে পারবে। কমিশন ওই অভিযোগ ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। কমিশন শুনানি করার পর নির্দেশনা জারি ও জরিমানা আরোপ করতে পারবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুক্ত, ইতিহাস, ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুভূতি, সংবাদ ও তথ্যমূলক অনুষ্ঠান, উন্নয়ন ও বিনোদনমূলক কর্মকা-, শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্য, পণ্য, পণ্যের মান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, শিশু ও নারীর অধিকার বিষয়ে ২০১৪ সালের জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালায় যে বিধান আছে, সে বিধান এখানে প্রযোজ্য হবে। অনলাইন গণমাধ্যমের সংজ্ঞা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী অনলাইন গণমাধ্যম বলতে বাংলাদেশের ভূখ- থেকে হোস্টিং করা বাংলা, ইংরেজী বা অন্য কোন ভাষায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটভিত্তিক রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে সম্প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্থির ও চলমান চিত্র, ধ্বনি ও লেখা বা মাল্টিমিডিয়ার অন্য কোন রূপে উপস্থাপিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা সম্প্রচারকারী বাংলাদেশী নাগরিক বা বাংলাদেশে নিবন্ধিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে। বর্তমানে কার্যক্রম চালানো সব অনলাইকে কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। যতদিন কমিশন গঠন হচ্ছে না, ততদিন অনলাইনগুলো কিভাবে চলবে- জানতে চাইলে শফিউল আলম বলেন, ততদিন তথ্য মন্ত্রণালয় এর ব্যবস্থাপনা করবে। ইতোমধ্যে তথ্য মন্ত্রণালয়ে এক হাজার অনলাইন গণমাধ্যম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর মধ্যে কিছু হয়ত অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। অনলাইন গণমাধ্যম রাষ্ট্রবিরোধী কোন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাতে এ বিষয়ে সরাসরি বলা নেই। অনেকগুলো আইন আছে যেমন- সেন্সরশিপ অব ফিল্মস এ্যাক্ট-১৯৬৩, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬, কপিরাইট ট্রেড মার্কস প্যাটেন্ট আইননহ অন্য যে কোন আইন, সেগুলো এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সেটা যদি লঙ্ঘন করে তাহলে সেজন্য দায়ী হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এ পর্যন্ত ১৮০০ অনলাইন পত্রিকা নিবন্ধনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। লাইসেন্স ছাড়া নলকূপে সাজা বাড়ছে লাইসেন্স ছাড়া কৃষিকাজের জন্য নলকূপ স্থাপনে শাস্তি বাড়িয়ে তৈরি করা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসনামলে প্রণীত ‘দ্য গ্রাউন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অর্ডিন্যান্স-১৯৮৫’-কে বাংলায় অনুবাদ করে আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে। নলকূপ স্থাপনে লাইসেন্স নেয়ার বিধান আগের অর্ডিন্যান্সেও ছিল। প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্স ছাড়া নলকূপ স্থাপনে দ-ের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। আগে জরিমানা ছিল সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। নতুন আইনে তা বেড়ে হচ্ছে ১০ হাজার টাকা বা অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদ-। আগের আইনে জরিমানা, অনাদায়ে কারাদ-ের বিষয়টিও ছিল না। উপজেলা পরিষদ নলকূপের লাইসেন্স স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে। বিদ্যমান নলকূপগুলোকে সময় দিয়ে লাইসেন্স নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। যদি কোন লাইসেন্স এক বছরের মধ্যে তিনবার স্থগিত হয় তবে উপজেলা পরিষদ শুনানি দিয়ে তা বাতিল করে দিতে পারবে। তিনি বলেন, খসড়া আইনেও আগের মতোই ‘উপজেলা সেচ কমিটি’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে, যা উপজেলা পরিষদের নির্দেশনায় পরিচালিত হবে। সেচ কমিটি গঠন ও তার কাজের পরিধি নির্ধারণে একটি বিধি তৈরি করা হবে, জানান তিনি। লাইসেন্সের জন্য ফি নির্ধারণ করা হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স দেবে উপজেলা সেচ কমিটি। লাইসেন্স দেয়ার আগে কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করবে। কোন জায়গায় নলকূল স্থাপনের প্রয়োজন আছে কি-না সেটা দেখবে। নিকটবর্তী নলকূপের দূরত্ব কতটুকু তাও দেখবে। কারণ আমরা যদি ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করতে থাকি তাহলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা আছে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ আইনে বিধান রাখা হয়েছে। শোক প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও মৌলভীবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ১৬০ জনের মতো ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের উদ্দেশে মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেছেন, ‘পাশাপাশি লন্ডনে অগ্নিকা-ে অনেক লোকজন হতাহত হয়েছে। অনেক লোক নিখোঁজ রয়েছে এখন পর্যন্ত। তাদের উদ্দেশেও শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। গত ১৩ জুন পশ্চিম লন্ডনে লাটিমার রোডে নর্থ কেনসিংটনে ‘গ্রেনফেল টাওয়ার’ নামের বহুতল আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায়ও মন্ত্রিসভা শোক জানিয়েছে।
×