ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

মৌসুমের শুরুতেই অবিরাম বর্ষণ সারাদেশে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২০ জুন ২০১৭

মৌসুমের শুরুতেই অবিরাম বর্ষণ সারাদেশে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সারাদেশে শুরু হয়েছে অবিরাম রর্ষণ। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সারাদেশে বিরাজমান মৌসুমি বায়ু সক্রিয়। এর প্রভাবেই সারাদেশে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে রাজধানী ঢাকাতে সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ভারিবর্ষণ। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। কাজের প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষজন পড়ে মহাভোগান্তিতে। বৃষ্টিপাতের কারণে সোমবার সারাদিনই যানজটে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। বর্ষার প্রথম দিন থেকেই আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সারাদেশে ভারি বর্ষণের সতর্কতা দেয়া হয়েছে। এতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি পাহাড়ী অঞ্চলে অতি বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করা হয়। আবহাওয়া অদিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকার কারণে দেশব্যাপী কোথাও ভারি, কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আরও তিনদিন এ ধরনের বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়। এদিকে সোমবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকার আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। সকাল ১১টার পর থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতায় জনজীবন ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়ে । বেশিরভাগ সড়কে পানি জমে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। সকাল থেকে বিরামহীন বৃষ্টিতের কারণে রাজধানীর প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে যায়। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন সড়কে দেখা দেয় তীব্র যানজট। অফিসগামী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়ে। গন্তব্যে পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। ঈদের শপিং করতে বের হওয়া লোকজন পড়ে ভোগান্তিতে। বৃষ্টিপাতের সময় রাজধানীর মিরপুর, কালশী, বেগম রোকেয়া সরণি, ধানম-ি ২৭ নম্বর হয়ে বাংলামোটর থেকে বসুন্ধরা সিটির পুরো রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে পরিবহনগুলোকে গতি নিয়ন্ত্ররণ রেখে চলাচল করতে হয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ জানায়, গতিনিয়ন্ত্রণে রেখে গাড়ি চলাচলের কারণেই জানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাস্তার মাঝখানে সিএনজি চালিত ছোট যানবাহন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তৈরি যানজট চরম আকার ধারণ করে। প্রধান সড়কজুড়ে উন্নয়ন কাজের কারণে খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোয় গাড়ির গতি নিয়ে চলাচল করতে পারেনি। জলাবদ্ধতার কারণে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত সৃষ্টি হয় যানজট। একই কারণে গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মতিঝিল, উত্তরা, মোহাম্মদপুরসহ পুরান ঢাকায় দুর্ভোগের কোন সীমা ছিল না। সরেজমিনে দেখা যায় শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা সড়কে জলজটের কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উন্নয়ন কাজের কারণে জলজটে ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া মিরপুর শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়া, কালশী, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, যাত্রাবাড়ী মোড়, জুরাইন, শহীদনগর, মধুবাগ এলাকায় জলজটে নাকাল হয় বাসিন্দারা। অলিগলিতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকেই হাঁটুপানি দেখা গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকায় অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমিবায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দম্কা/ঝড়োহাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে মৌসুমিবায়ু সক্রিয় থাকার কারণে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগে জোরালো প্রভাব পড়ছে। আগামী দু’একদিন এই অবস্থা থাকতে পারে। তার পরই ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আবহাওয়া অধিদফতরের এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী তিনদিন বৃষ্টিপাতের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এদিকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও সাগরে আপাতত কোন ঝড়ের সম্ভাবনা নেই। তারা জানায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেট, সন্দ্বীপ, সীতাকু- ও বদলগাছীতে।
×