ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন

ভাগ্যের সন্ধানে সৌদিতে গিয়ে ৩১১ বাংলাদেশী মহাবিপাকে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৯ জুন ২০১৭

ভাগ্যের সন্ধানে সৌদিতে গিয়ে ৩১১ বাংলাদেশী মহাবিপাকে

ফিরোজ মান্না ॥ ভাগ্য বদল হয়নি ওদের। উল্টো এখন ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে ৩০০ বেশি বাংলাদেশী কর্মীকে। দালালরা সৌদি আরবের ‘আল নাদা’ কোম্পানিতে এদের চাকরি দিয়েছিল। কোম্পানিটি এক দিনের মাথায় ৩১১ জন কর্মীকে ছাঁটাই করে দেয়। এরপর থেকে কর্মীরা দালালদের খুঁজে বেড়ালেও তাদের কোন সন্ধান পাননি। ফলে এখন তারা চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চাকরিদাতা কোম্পানি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করায় অন্য কোন কোম্পানিতে কাজও করতে পারছেন না। জেদ্দায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, আল নাদা নামের কোম্পানিটির কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের বিষয়ে নানা বদনাম রয়েছে। তারা কর্মী নিয়োগ করে কয়েকদিন কাজ করিয়ে আবার তাদের ছাঁটাই করে নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেয়। আর এ কাজে সহযোগিতা করে বাংলাদেশী কিছু অসাধু দালাল। তারা কোম্পানির কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে নতুন করে কর্মী জোগাড় করে দেয়। দালালরা কর্মীদের এই কোম্পানিতে মানুষ কেনাবেচার কাজ করে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিষয়টি সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েক দফা জানানো হয়। এরপরও কোম্পানিটি এভাবে কর্মী নিয়োগ করে যাচ্ছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে চাকরি হারানো ৩১১ জন কর্মীর জন্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশি দিন এই সহযোগিতা চালানো সম্ভব হবে না। সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানিটি সৌদি আইন ভঙ্গ করে কর্মীদের বেতন ঠিক করেছিল মাত্র ৩০০ রিয়াল। চাকরি দেয়ার আগে কর্মীদের কাছ থেকে ইকামা বাবদ এক বছরের জন্য ৮৫০ রিয়াল নিয়েছে। এখন তাদের ওই টাকাও কোম্পানিটি ফেরত দিচ্ছে না। বর্তমানে তারা একটি বাড়িতে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন। তারা অন্য কোন কোম্পানিতে কাজেও যোগ দিতে পারছেন না আইনী জটিলতার কারণে। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় শ্রম আদালতে ওই কোম্পানি একটি মামলা করেছে। কোম্পানি মামলা তুলে না নিলে এই কর্মীরা অন্য কোন কোম্পানিতে কাজও করতে পারবেন না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অল্প দিনের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হতে পারে। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এই কর্মীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হযেছে। খাবার, পানি, বিদ্যুত সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে তারা কয়েক মাস ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। নিয়োগকারী কোম্পানি আল নাদার সদর দফতর জেদ্দা থেকে ৮০০ কিলোমিটার দূরে আসির প্রদেশের আবহা শহরে অবস্থিত। এত দূরে হওয়ায় সেখানে দূতাবাসের কর্মকর্তারা সব সময় যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছেন না। এ জন্য বিষয়টি সমাধানে কিছুটা সময় চলে যাচ্ছে। গত বছর খরচ কমানোর শর্তে দীর্ঘদিন পরে শ্রমবাজার খুলে দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই বাজারেই সব চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে কর্মীদের যেতে হচ্ছে। দালাল ফড়িয়া আর জনশক্তি রফতানিকারকরা প্রতি কর্মীর কাছ থেকে ৭-৮ লাখ টাকা করে নিচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীও যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রণালয় ও বায়রা যৌথভাবে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে খরচ নির্ধারণ করে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। নির্ধারিত খরচের বাইরে কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বেশি টাকা নিতে পারবে না। বেশি টাকা নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়। এমন অভিযোগের কথা মন্ত্রণালয় জানলেও এ বিষয়ে অভিযুক্ত কোন জনশক্তি রফতানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সূত্র জানিয়েছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ অভিবাসন ব্যয় কমানোর শর্তে কর্মী নিয়োগের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়টি মেনে নিয়ে কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়টি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি মনিটর করবে। সৌদি কর্তৃপক্ষকে আড়াল করে কর্মী প্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
×