ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের অর্থ পাচারকারীদের তথ্য দেবে সুইস ব্যাংক

প্রকাশিত: ২০:০৬, ১৮ জুন ২০১৭

ভারতের অর্থ পাচারকারীদের তথ্য দেবে সুইস ব্যাংক

অনলাইন ডেস্ক ॥ সুইস ব্যাংকে ভারতীয় নাগরিকদের জমাকৃত অর্থ ও আর্থিক লেনদেনের তথ্য দিতে রাজি হয়েছে সুইজারল্যান্ড। ভারত থেকে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এসব তথ্য চেয়েছিল নরেন্দ্র মোদির সরকার। প্রথমে সুইজারল্যান্ড এসব তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি জানালেও ভারতের প্রবল চাপের মুখে অবস্থান বদলাতে বাধ্য হয় তারা। গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের সুইস ফেডারেল কাউন্সিল ভারত সরকারের চাহিদা মাফিক তাদের নাগরিকদের অর্থ লেনদেনের তথ্য বিনিময় করার এই সিদ্ধান্ত নেয়। খবর ইকোনমিক টাইমসের। উল্লেখ, বিশ্বজুড়ে টাকা পাচারকারীদের একটি পছন্দের গন্তব্য হচ্ছে সুইজারল্যান্ড। সুইস ব্যাংক হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে পাচারের অর্থ জমা রেখে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে থাকেন পাচারকারীরা। কারণ সুইস ব্যাংকগুলো গ্রাহকের তথ্যের গোপনীয়তার ব্যাপারে খুবই কঠোর। আর খোদ রাষ্ট্রই তাদেরকে এই বিষয়ে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। ফলে কোনো রাষ্ট্র ও সরকারের অনুরোধেও এসব ব্যাংক ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের লেনদেনের কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। নরেন্দ্র মোদির সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে দেশটি সুইজারল্যান্ডের কাছে সে দেশের ব্যাংকগুলোতে ভারতীয় নাগরিকদের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিল। তবে তাতে তেমন কোনো সাড়া দেয়নি সুইজারল্যান্ড। ২০১৬ সালের জুন মাসে সুইজারল্যান্ড সফরের সময় এই বিষয়ে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাতে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, মুদ্রা পাচারের দিক থেকে বিশ্বে ভারতে অবস্থান চতুর্থ থেকে পঞ্চমে উঠানামা করে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিআইএফ) এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ভারত থেকে ১৬৫ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১১ লাখ কোটি রুপি পাচার হয়েছে। গত শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল কাউন্সিল গ্লোবাল কনভেনশন অন অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন- এইওআই (global convention on automatic exchange of information-AEOI) এর স্বীকৃতি দেয়। এইওআই মেনে নেওয়ায় এখন থেকে সুইজারল্যান্ড তাদের ব্যাংক রক্ষিত অর্থের তথ্য প্রকাশ করবে। এইওআই-এর বরাত দিয়ে ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে ভারতীয় নাগরিকদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য ২০১৮ সালে ভারত সরকারের কছে দেওয়া হবে। অটোমেটিক এক্সচেঞ্জ অফ ইনফরমেশনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করবে ভারত সরকার; শিগগির এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় তারা। ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসএনবি (সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বেশি অর্থ গচ্ছিত রাখা নাগরিকদের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই তালিকায় ভারতের অবস্থান ৭৫তম। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতীয় নাগরিকদের ১২০ বিলিয়ন ফ্রাঁ বা ৯৫৫৯ কোটি টাকার বেশি সুইস ব্যাংকগুলোতে জমা ছিল। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ৫৫ কোটি ৮ লাখ ফ্রাঁ বা প্রায় ৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা ছিল। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিআইএফ) এর রিপোর্ট অনুসারে, ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে ৬ লাখ কোটি টাকা। আর শুধু ২০১৪ সালে পাচার হয়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এই রিপোর্টটি সারাদেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। সরকার অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা জানায়। তবে এখন পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড সরকার বা অন্য কোনো দেশের কাছে সে দেশের ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থ লেনদেনের তথ্য চেয়েছে কি-না তা জানা যায়নি।
×