ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আকিল জামান ইনু

নাসার সূর্য অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৬ জুন ২০১৭

নাসার সূর্য অভিযান

সূর্যপৃষ্ঠে কোন নভোযানের অবতরণ এখনও সুদূর কল্পনা। সূর্য এক জ্বলন্ত অগ্নিপি- যার শীতলতম অংশের তাপমাত্রাও শত হাজার ডিগ্রী। তারপরও আগামী বছর পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে নভোযান যাত্রা করবে সূর্যের নিকটবর্তী হবার লক্ষ্য নিয়ে। অন্তত যতটা কাছে যাওয়া সম্ভব। আর এই মিশনকে কেবল বিজ্ঞানের জন্যই নয় পৃথিবীবাসীর জন্যও বড় অর্জন বলে গণ্য করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরকে সামনে রেখে নাসা পরিকল্পনা করছে একটি প্রোব উৎক্ষেপণের। যা ৯০ মিলিয়ন মাইল পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবে সূর্যের ৩.৮ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে। আশা করা হচ্ছে এই পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের বহিস্থ গ্যাস স্তরে পৌঁছবে, যা পরিচিত করোনা নামে। আর এ থেকে যে কেবল সূর্যের পরিবেশ থেকে ধারণা পাব তা নয়। অন্যান্য স্টার সি্েস্টম সম্পর্কেও জানতে পারব। যেখানে আমাদের নিকটবর্তী স্টার সিস্টেমের দূরত্ব চার আলোকবর্ষ। মাইলের হিসেবে ২৪ ট্রিলিয়ন। সে তুলনায় সূর্যকে বলা যায় হাতের কাছেই। মাত্র ৯৩ মিলিয়ন মাইল দূরত্বে। নাসার বিজ্ঞানীরা আশা করছেন ২০১৮ নবেম্বরের মধ্যেই পার্কার সোলার প্রোব সূর্যের বহিস্থ গ্যাস স্তরে পৌঁছে যাবে। তবে এর অর্থ এই নয় এ অর্জন হবে সহসাধ্য। ইতোপূর্বে নাসার প্রোাব প্লুটো বা সোলার সিস্টেমের বাইরে যাত্রা করেছে। কিন্তু সূর্য সব সময়ই বিবেচিত হয়ে আসছে অজেয় হিসেবে। সূর্যের নিকটবর্তী হয়ে উত্তাপ সহ্য করার মত নভোযান তৈরি প্রায় দুঃসাধ্য বিবেচিত হয়ে আসছিল। সে কারণেই এ পথে এতদিন পা বাড়াননি কেউ। একটু পিছনে ফিরে তাকালে ফিরে যেতে হয় ১৯৫৮ তে। ইউজেনি পার্কার যার নামে নামকরণ নাসার প্রোবটির। তিনি তখন তরুণ পদার্থবিদ। তিনি প্রকাশ করেন তার গবেষণাপত্র। যেখানে তিনি প্রথম বলেন উচ্চগতিসম্পন্ন ঝড়, স্টেলার পার্টিকেলস আর চুম্বকীয় পদার্থের কথা যার উৎস সূর্য। এই পরিস্থিতি এখন পরিচিত সোলার উইন্ড নামে। সেই আবিষ্কারের পর থেকেই পার্কার আজ ৮৯ বছর বয়সেও সূর্যের নিকটবর্তী অভিযানের দাবি করছেন। শেষ পর্যন্ত সেই প্রযুক্তি পাওয়া গেছে হাতের নাগালে। মনুষ্যবিহীন এই নভোযানটি যাত্রা শুরু করে পৌঁছে যাবে সূর্যের নিকটে। এতটাই নিকটে যে এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে মাত্র ৮৮ দিনে। পার্কার সোলার প্রোবের গতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সর্বোচ্চ গতিতে এটি মাত্র এক সেকেন্ডে পৌঁছে যাবে ফিলাডেলফিয়া থেকে ওয়াশিংটনে। করোনার কোন অংশের তাপমাত্রা যখন ১ মিলিয়ন ডিগ্রী ফারেনহাইট তখন প্রোবটি খুঁজে নেবে এমন অঞ্চল যেখানে তাপমাত্রা ২৫০০ ডিগ্রী ফাঃ। যা সিসার গলনাংকের চার গুণ বেশি। এই নভোযানের নির্মাণ, উৎক্ষেপণ আর পরিচালনার ব্যয় ধরা হচ্ছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। এই প্রোবের ক্যামেরা আর বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ কক্ষটি নিরাপদ থাকবে ৪.৫ ইঞ্চি হিট শিল্ডের আড়ালে। এই অভিযান থেকে জানা যাবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। কেন করনোস্ফেয়ারের তাপমাত্রা সূর্যপৃষ্ঠ থেকে ১০০ গুণ বেশি। বহুল আলোচিত এ প্রশ্নের জবাব পাবেন বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক মত প্রচলিত। অনেকেই বলেন সূর্য থেকে বিকরিত প্লাজমা স্রোত যা এখানে ভেঙে পড়ে সেটিই করনোস্ফেয়ারের উষ্ণতার কারণ। অনেকেই আবার অন্যান্য কারণ চিহ্নিত করে মতামত প্রদান করেছেন। এ সমস্যা সমাধানের পথ একটাই। যতটা সম্ভব সূর্যের নিকটে পৌঁছে যাওয়া। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন এ অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য স্টার ফিজিক্স বিষয়ে তাদের ধারণা দেবে। তাদের মতে, সূর্য হয়ত আমাদের জন্য বিশেষ কিছু। কিন্তু মহাকাশে এটি খুবই সাধারণ এক নক্ষত্র। এটি সম্পর্কে যত বেশি জানব অন্যান্য নক্ষত্র সম্বন্ধেও ততো বেশি ধারণা পাব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সৌরঝড় বিষয়ে জানা। একটি সৌরঝড় যেমন অকার্যকর করে দিতে পারে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপরদিকে পৃথিবীর বড় অংশ জুড়ে ডেকে আনতে পারে বৈদ্যুতিক বিপর্যয়। ন্যাশনাল একাডেমি অব সাইন্সের এক প্রতিবেদনে জানা যায় একটি প্রবল সৌর ঝড় কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ক্ষতি করবে তার আর্থিক মূল্যমান দুই টিলিয়ন ডলার। আর অন্যান্য বিপর্যয় তো আছেই। কাজেই এ সম্পর্কে আমরা যত বেশি জানব ততোই প্রতিকূলতা বা বিপর্যয় মোকাবেলার সামর্থ্য অর্জন সম্ভব। আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহটির বৃহত্তর স্বার্থেই নাসার এই অভিযানের সাফল্য কামনা সবার। সূত্র : টাইম
×