ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ট্রাম্প জামাতার রুশ কানেকশন

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ জুন ২০১৭

এবার ট্রাম্প জামাতার রুশ কানেকশন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জারেড কুশনারকে নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছে। তার রাশিয়ান কানেকশনের খবর তদন্ত করে দেখছে এফবিআই। কুশনার প্রেসিডেন্টের জামাতাই শুধু নন, তিনি তার সিনিয়র উপদেষ্টাও। তিনি হোয়াইট হাউসের একজন সাইফারও ছিলেন যা কখনও প্রকাশ্যে শোনা যায়নি। বিশিষ্ট ডেমোক্র্যাটিক পরিবারের সন্তান কুশনার ধর্মমতে ইহুদী। বলা হয় ট্রাম্পের প্রতি তার মেয়ে অনুগত আর কেউ নেই। সেই কুশনার এখন পাদপ্রদীপের আলোয় চলে এসেছেন তার রাশিয়ান কানেকশন নিয়ে। ক’দিন আগে খবর বেরিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসলিয়াক গত ডিসেম্বরে ক্রেমলিনকে জানিয়েছিলেন যে কুশনার মস্কোর সঙ্গে একটা প্রাইভেট যোগাযোগ চ্যানেল খুলতে চান এবং তা করার জন্য সম্ভবত রাশিয়ার গোপন যোগাযোগ সরঞ্জামও ব্যবহার করতে চান। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কিসলিয়াকের বার্তা ইন্টারসেন্ট করে এই তথ্য জেনে হতবাক হয়। এখন এফবিআই নিয়ে তদন্ত করছে। আরও জানা গেছে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিসলিয়াকের অনুরোধে কুশনার রাশিয়ার একটি ব্যাংকের প্রধান সার্গেই গরকোভের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এই ব্যাংকটি রুশ সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত এবং সরকারের গোয়েন্দা সার্ভিসগুলোর ক্রিয়াকলাপের সঙ্গেও জড়িত। এই ব্যাংকের নিউইয়র্ক অফিসের এক কর্মকর্তা ২০১৫ সালে গোয়েন্দাবৃত্তির দায়ে গ্রেফতার হন। গত বছর আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ত্রিশ মাসের কারাদ- লাভের পর শেষে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হয়। শোনা যায় যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এই ব্যাংকের প্রধান গরকোভের ঘনিষ্ঠতা আছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে ট্রাম্পের রাশিয়া কানেকশনের ব্যাপারটা কি তার এই জামাতার মাধ্যমেই হয়েছিল? রাশিয়া সম্পর্কিত ব্যাপারটার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন সাবেক এফবিআই প্রধান জেমস কোমি। শোনা যায় যে ট্রাম্পের সিনিয়র উপদেষ্টাদের মধ্যে একমাত্র কুশনারই কোমিকে বরখাস্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যাই হোক, ক্রেমলিনের সঙ্গে কুশনারের কথিত যোগাযোগের খবরটি নিয়ে যেমন হৈচৈ হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে। পরিণতিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করা হয়েছে। তাছাড়া এফবিআইও তার তদন্তে কুশনারের এই যোগাযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এর তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক পরিণতিটা বড়ই অস্বাস্থ্যকর। জামাতার এই ঘটনাটি নিয়ে ট্রাম্পের জন্য নতুন দুঃস্বপ্ন তৈরি হয়েছে। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার নাক গলানোর বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কংগ্রেসের তদন্তে প্রধান দৃষ্টি পড়েছে ট্রাম্পের অন্যতম শীর্ষ অনুগত মাইকেল কোহেনের ওপর। তার ওপর নতুন করে যোগ হলো জামাতার রাশিয়া কানেকশন। বিদেশী সরকারগুলোর সঙ্গে গোপন সংলাপ চালানোর নানা উপায় মার্কিন সরকারের হাতে আছে। কিন্তু আশ্চর্যের ও ব্যতিক্রম ব্যাপার হলো কুশনার মার্কিন সুযোগগুলো ব্যবহার করার পরিবর্তে রাশিয়ার সুযোগ-সুবিধাগুলো কাজে লাগানোর প্রস্তাব করেছিলেন সেই গোপন চ্যানেলটির জন্য। এ প্রসঙ্গে অত্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী জন কেলি বলেন, ‘ব্যাকচ্যানেল থেকে বা অন্য কোন চ্যানেল হোক রাশিয়ার মতো দেশের সঙ্গে যে কোন রকম চ্যানেল থাকাই একটা উত্তম ব্যাপার।’ এ থেকে বোঝা যায় যে ট্রাম্প প্রশাসন কুশনারের এই গোপন তৎপরতায় স্পষ্টতই খারাপ কিছু দেখছে না এবং দরকার হলে দৃঢ়ভাবে তার পক্ষে অবস্থান নেবে। কিন্তু বলা হচ্ছে রুশ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা কুশনার এই একবার মাত্রই যে করেছিলেন তা নয়। রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলোর অন্যতম ভেনেশেকোনম ব্যাংকের প্রধান গরকোভের মাধ্যমে আরেকবারও করেছিলেন। গরকোভের সঙ্গে কুশনারের আধ ঘণ্টার মতো বৈঠক হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠিত কূটনেতিক চ্যানেলের বাইরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা। এখানে দুটো বিষয় লক্ষণীয়। এক. গরকোভ পুতিনের ঘনিষ্ঠ এবং দুই. তার ব্যাংক ভেনেশেকোনম ব্যাংকে রুশ গোন্দো সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে গুপ্তচর নিয়োগের কাজে ব্যবহার করেছিল। রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কিত এই কাহিনী শুধু হোয়াইট হাউসকে নয়, সরাসরি ট্রাম্প পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা যেতে পারে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×