ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ওস্টাপেঙ্কোর চমক

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১৪ জুন ২০১৭

ওস্টাপেঙ্কোর চমক

ফ্রেঞ্চ ওপেনে নতুন এক ইতিহাস গড়লেন জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো। ব্রাজিলের গুস্তাভো কুয়ের্তেনের পর রোঁলা গারোতে প্রথম ট্যুর লেভেলের শিরোপা জয়ের রেকর্ড গড়েন তিনি। ১৯৯৭ সালের ৮ জুন ফরাসি ওপেন জিতে প্রথম টেনিস শিরোপা হতে তুলেছিলেন গুস্তাভো। শনিবার ফাইনালে রোমানিয়ান তারকা সিমোনা হ্যালেপের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকে দুর্দান্ত এক জয় দিয়ে শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন ওস্টাপেঙ্কো। প্রথম সেটে ৪-৬ এ পিছিয়ে থাকার পর দ্বিতীয় সেটে ঘুরে দাঁড়িয়ে সমান ব্যবধানে জয় দিয়ে সমতা আনেন তিনি। এরপর শেষ সেটে হ্যালেপকে ৬-৩ সেটে গুঁড়িয়ে দিয়ে উল্লাসে মাতেন ওস্তাপেঙ্কো। ক্যারিয়ারের কোন ডব্লিউ ট্যুর জিততে না পারা এ অবাছাই খেলোয়াড় তার দেশ লাটভিয়া থেকেও ফাইনালে খেলা কোন প্রথম মেয়ে। তার এ জয়ে প্রথম গ্র্যান্ড সøাম জয়ের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল দ্বিতীয়বারে মতো ফ্রান্স ওপেনের ফাইনালে ওঠা সিমোনার। মাত্র ২০তম জন্মদিনে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে পা রেখেছিলেন ওস্টাপেঙ্কো। ১৯৮৩ সালের পর তিনিই ছিলেন প্রথম অবাছাই ফাইনালিস্ট। রোঁলা গ্যারোতে ১৯৮৩ সালে ফাইনাল খেলেছিলেন অবাছাই মিমা জসোভেচ। ক্রিস এভার্টের কাছে যিনি হেরে গিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার সেটার পুনারাবৃত্তি হতে দিলেন না ওস্টাপেঙ্কো। মৌসুমের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের আগে কোন গ্র্যান্ডসøামের চতুর্থ রাউন্ডেই উঠতে পারেননি ওস্টাপেঙ্কো। প্যারিসের এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত ওস্টাপেঙ্কো। ম্যাচ শেষে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বলার কোন ভাষা নেই। দারুণ খুশি আমি। এটা আমার স্বপ্নের জয়। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না ২০ বছর বয়সে আমি গ্র্যান্ডসøাম জিততে যাচ্ছি। এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার এবং আনন্দেরও। আমি জানতাম হ্যালেপ অনেক বড় মাপের একজন খেলোয়াড়। কিন্তু আমি চেষ্টা করে গেছি আক্রমণাত্মক খেলতে। আমি প্রতিটি পয়েন্টের জন্য খেলেছি। আর সবকিছুই আমার পক্ষে চলে আসে। যেভাবে শেষ করতে পেরেছি তাতে আমি খুশি।’ ১৯৯০ দশকে জন্মগ্রহণকারী তৃতীয় মহিলা হিসেবে গ্র্যান্ডসøাম জয়ের স্বাদ পেলেন ওস্টাপেঙ্কো। ম্যাচ শেষে জানতে চাওয়া হয় তার আদর্শ কে? উত্তরে লাটভিয়ার এই টেনিস তারকা বলেন সেরেনা উইলিয়ামসের নাম। প্যারিসের এই টুর্নামেন্টে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে এবারের আসরে খেলতে পারেননি তিনি। সেরেনার অনপুস্থিতিতে এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেন যে নতুন রানী পেতে যাচ্ছে তা ধারণা করা হয়েছিল টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই। শেষ পর্যন্ত টেনিসবোদ্ধাদের সেই ধারণাই বাস্তবতার মুখ দেখল। ওস্টাপেঙ্কো জানান, তা খেলার ধরন অনেকটাই সেরেনার মতো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে অসাধারণ চ্যাম্পিয়ন। আমি মনে করি সে আমার স্টাইলের মতোই খেলে। যে কারণেই সে আমার আদর্শ।’ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ওস্টাপেঙ্কোর নাম জানা মানুষের সংখ্যা যে খুব কম ছিল তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে প্যারিসের এই টুর্নামেন্টই বদলে দিলো তার ভাগ্য। তাই তো, ওস্টাপেঙ্কো এখন উইম্বলডনেও ফেবারিট হিসেবে কোর্টে নামবেন। তবে মজার ব্যাপার হলো, ঘাসের কোর্টে যে টেনিস খেলা যায় তা নাকী জানতেন না ওস্টাপেঙ্কো। ১৫ বছর বয়সে প্রথম যখন উইম্বলডনে খেলতে গিয়েছিলেন সেই স্মৃতি মনে করে তিনি বলেন, ‘ঘাসের কোর্টে যখন প্রথম খেলি তখন এটা আমার ভাল লাগেনি। সত্যি বলতে, আমি বুঝতেই পারতাম না। এখানে কিভাবে অন্যরা খেলে তাও বুঝতে পারতাম না। ভাবতাম ঘাসের কোর্ট তো ফুটবলারদের জন্যই!’ এবারের আসরের আগে ওস্টাপেঙ্কোর জন্য বাজি ছিল ১০০-১। তিনি এবারের আগে চার গ্র্যান্ডসøামে মাত্র আটবার অংশ নেন। এর চেয়ে কম খেলায় অংশ নিয়ে কেবল মারিয়া শারাপোভা ২০০৪ সালে উইম্বলডন শিরোপা জেতেন। ফরাসি ওপেন জয়ের পর ওস্টাপেঙ্কোর র‌্যাঙ্কিংয়েও অগ্রগতি হয়েছে। ৪৭ থেকে ১২ নাম্বারে উঠে এসেছেন তরুণ প্রতিভাবান এই টেনিস খেলোয়াড়। লাটভিয়ার এই টেনিস খেলোয়াড় সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা তথ্য দেয়া হলো, যা টেনিসপ্রেমীদের অনেকের কাছেই অজানা। গত বছর আলোচনায় আসেন অকল্যান্ডে বৃটিশ খেলোয়াড় রাওমি ব্রডির সঙ্গে গ-গোলের কারণে। খেলা শেষে ওই দুজন তর্কে জড়ান। ব্রডি দাবি করেন, বল বয়ের দিকে র‌্যাকেট ছুঁড়ে মারার কারণে ওস্টাপেঙ্কাকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত। ওস্টাপেঙ্কো তার টেনিস ক্যারিয়ার শুরুর আগে বলরুমের নৃত্যশিল্পী ছিলেন। এখনো সপ্তাহে চারদিন নাচের অনুশীলন করেন তিনি। তার ফেভারিট নাচ হলো সাম্বা। ওস্টাপেঙ্কোর কোচ হলেন তার মা জেলেনা। আর ফিটনেস ট্রেনারের দায়িত্ব পালন করেন বাবা ইয়েভগেনিস। স্প্যানিশ খেলোয়াড় আনাবেল মেডিনা গ্যারিগসও ওস্টাপেঙ্কোকে প্রশক্ষিণে সহায়তা করে থাকেন। সেমিফাইনালে জয়ের পর লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট রায়ম-স ভেয়নিস ওস্টাপেঙ্কোকে ফোন করে শুভকামনা জানান। লাটভিয়ার রাজধানীতে বিশাল পর্দায় দেখানো হয় ফাইনাল খেলা। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন সিমোনা হ্যালেপ। কিন্তু সেবার তিনি হার মানেন রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল মারিয়া শারাপোভার কাছে। এবার শারাপোভা খেলারই সুযোগ পাননি রোঁলা গ্যারোয়। তাই সুযোগ ছিল রোমানিয়ান তারকার। কিন্তু এবারও ব্যর্থ তিনি। হারলেন অখ্যাত জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোর কাছে।
×