ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের চোখ ফাইনালে!

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৪ জুন ২০১৭

টাইগারদের চোখ ফাইনালে!

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের এক তরুণ ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ফাইনালে ওঠা সম্ভব? তাকে জিজ্ঞেস করতেই বলে দিলেন, ‘খুবই সম্ভব। এখন আর অসম্ভব বলে তো কিছু নেই। মাত্র একটি ম্যাচ জিতলে ফাইনাল। আরে ভাই, স্বপ্ন দেখতে হলে বড় দেখতে হয়। এই অবস্থায় এসে পড়ে তো আমি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।’ ক্রিকেটারদের মনের অবস্থাই এমন। তাহলে পুরো জাতির অবস্থা কী? সবাই চায় এখন বাংলাদেশ সেমিফাইনালে জিতুক। ফাইনালে উঠুক। সবার মুখে এখন শুধু ফাইনাল আর ফাইনাল। একটি ম্যাচ জিততে পারলেই যে হয়ে যায়। সেই ফাইনালের মিশন এবার বাংলাদেশের সামনে। বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে জেতে পারবে, এটাই তো শুরুতে কেউ ভাবেনি। এখন বাংলাদেশকে নিয়ে ফাইনালের ভাবনাও হচ্ছে সবার মনে। শুধু বাংলাদেশের মানুষ, ক্রিকেটাররা কিংবা ইংল্যান্ড প্রবাসী বাংলাদেশিরা মানুষরাও না, বিশ্বের বড় মাপের তারকা ক্রিকেটাররাও এখন বাংলাদেশকে ফাইনালে দেখছেন। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ইয়ান চ্যাপেল যেমন বাংলাদেশকে সতর্ক করে দিয়েছেন। আরও বড় স্বপ্ন দেখতে বলেছেন। কিভাবে সেমিফাইনাল জয় করে ফাইনালে খেলা যায়, সেই মানসিকতার পরিচয় দেয়া উচিত বলে মনে করেন চ্যাপেল। তিনি বলেন, ‘এটা এখন বাংলাদেশের উপর নির্ভর করবে। আমরা সেমিতে পৌঁছে গেছি। দারুণ অর্জন করে ফেলেছি। আমাদের কাজ শেষ। এমন কিছু ভাবলে হবে না। মানসিকতা থাকতে হবে জেতার। ভাবতে হবে, হ্যাঁ, আমরা সেমিফাইনালও জয় করব এবং ফাইনালে পৌঁছে যাব।’ সেমিফাইনালে যে দলই আসুক, বাংলাদেশকে সাহস জুগিয়েছেন চ্যাপেল। এই সাহস নিয়ে এখন প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুছড়ে দিতে পারলেই হলো। বাংলাদেশ যোগ্য দল হিসেবেই সেমিফাইনালে উঠেছে। এখন ফাইনালে উঠে গেলে তো পুয়াবারো। ইতিহাসের সেরা অর্জন আগেই হয়ে গেছে। সেই অর্জনকে আরও বাড়িয়ে নিতে পারলেই হলো। ইংল্যান্ডের কাছে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ায় ১ পয়েন্ট মিলেছে। এরপর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছে। এমনই অবস্থা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, তাতে বাংলাদেশকে নিয়ে সবাই ভয় পাবে; এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশ দলটি টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দলগুলোর আতঙ্ক ছিল। এখন রীতিমতো খুনী দল। আর এখন থেকে তো প্রতিপক্ষ কিংবা বাংলাদেশ, কারও হাতেই কোন অপশন খোলা নেই। হার মানেই বিদায়। জেতা মানেই আরও উপরে ওঠা। একটা জিতলে ফাইনালে ওঠা। দুইটা জিতলে চ্যাম্পিয়ন হওয়া। বাংলাদেশ দল আপাতত সেমিফাইনাল জেতার ভাবনাই করছে। বার্মিহ্যামে সেমিফাইনাল খেলবে বাংলাদেশ। বার্মিহ্যামেই আছে দল। রবিবার গেছে। সেদিন অনুশীলন করেনি। সোমবারও অনুশীলন থেকে দূরে ছিলেন ক্রিকেটাররা। সেমিফাইনাল ম্যাচের পর তিনদিন বিশ্রাম নিয়েছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। নিজেদের ফ্রেশ করে নিয়েছে। আজ থেকে আবার শুরু হবে অনুশীলন। যে অনুশীলনে সেমিফাইনাল ম্যাচে জিতে ফাইনাল ওঠার সব কৌশলই রপ্ত করা হবে। পারবে বাংলাদেশ ফাইনালে জেতে? ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বীরেন্দর সেওয়াগ আবার বাংলাদেশকে গোনাতেই ধরতে রাজি নন। ‘এ’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ‘বি’ গ্রুপ থেকে ভারতই হয় তো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে। শ্রীলঙ্কা অথবা পাকিস্তানের চেয়ে রানরেটে এগিয়ে ভারত। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়। ম্যাচটি শেষ হওয়ার আগে ভারত রানরেটে অনেক এগিয়ে। তাই সবাই ধরেই নিয়েছে ভারতই হতে চলেছে সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। আর তাই কথার লড়াইও শুরু হয়ে গেছে। এখন যে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের চেয়েও বেশি উত্তেজনা, উন্মাদনা ছড়ায় বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে। তাই সাবেক কিংবা বর্তমান ক্রিকেটাররাও এ ম্যাচ নিয়ে উত্তেজনায় থাকেন। সেওয়াগ যেমন টুইটে ভারতকে আগেই ফাইনালে শুভকামনা জানিয়ে ফেলেছেন। বলেছেন, ‘দুর্দান্ত এক জয় ভারতের (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে)। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য শুভকামনা।’ দেখা যাক, শেষপর্যন্ত কী হয়। তবে বাংলাদেশ-ভারত সেমিফাইনাল ধরেই সবাই এগিয়ে চলেছে। সবাই বার্মিহ্যামের সেমিফাইনাল দেখার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ম্যাচটিতে মনে হচ্ছে ভারতীয় দর্শকরা স্টেডিয়াম ঘিরে রাখবে। তারা এতটাই উত্তেজিত, সব টিকেট তাদের চাই। বাংলাদেশী দর্শকরা টিকেট পাচ্ছেনই না। টিকেটের চাহিদা হু হু করে বাড়ছে। ২৫ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে সেই চাহিদা মেটানোও সম্ভব নয়। আবার বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠবে, এটি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে কেউ ভাবেননি। তাই বার্মিংহ্যামের টিকেট নিয়ে বাংলাদেশি দর্শকদের মধ্যে তেমন মাথাব্যথাও ছিল না। কিন্তু এখন দল সেমিফাইনালে উঠে গেছে। তাই বাংলাদেশি দর্শকদের কাছে টিকেটের চাহিদাও বেড়ে গেছে। তাতে টিকেটের অভাবও তৈরি হয়েছে। ভারতের দর্শকরা অবশ্য আগে থেকেই বাজিমাত করেছেন। তারা ভারতকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরেই এগিয়েছেন। আগেই বার্মিহ্যামের টিকেট করে রেখেছেন। সঙ্গে ইংল্যান্ডের দর্শকরাও বার্মিহ্যামের খেলা দেখার জন্য আগেই টিকেট করে রেখেছেন। এমনই অবস্থা হয়েছে, স্টেডিয়ামে ভারত আর ইংলিশ দর্শকদেরই প্রাধান্য থাকবে। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে ওভালে ও কার্ডিফে খেলেছে। সব স্থানেই দর্শকদের চিৎকারে, আওয়াজে বাংলাদেশ দল প্রেরণা পেয়েছে। বার্মিহ্যামে হয় তো সেটি দেখা যাবে না। তবে, বাংলাদেশ দর্শক বলে কথা। যতজন থাকবেন। তারাই নিশ্চয়ই মাতিয়ে রাখবেন। আর তাতেই বাংলাদেশ দল অনুপ্রাণিত হবে। প্রেরণা নিয়ে জিততেও পারে দল। জিতলেই তো ফাইনালে ওঠা হয়ে যাবে। প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার গর্বও মিলবে। বাংলাদেশের সামনে এখন ফাইনালের মিশন।
×