ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বপ্নীল মাহফুজ

যমজ যারা কেমন তারা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৯ জুন ২০১৭

যমজ যারা কেমন তারা

ধারণা করা হয় পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ৩% লোক যমজ। কিন্তু এই ৩% লোককে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। ফলে যমজদের বিভিন্ন সময় উৎসুক মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এমন অভিজ্ঞতা প্রায় সব যমজদেরই আছে। আর মানুষের এই আগ্রহের প্রেক্ষিতে চলুন যমজদের নিয়ে ১২টি তথ্য জেনে নেই। যে তথ্যগুলো হয়তো আপনার জানার আগ্রহকে সহায়তা করতে পারে। আঙ্গুলের ছাপ ও ডিএনএও আলাদা অনেকেরই ধারণা, যমজদের আঙ্গুলের ছাপ এবং ডিএনএ একই হয়ে থাকে। কিন্তু মজার বিষয় হলো, যমজদের এর কোনটাই এক হয় না। যদিও যমজরা একই গর্ভে জন্ম হয় তবুও তারা একই গর্ভে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকে। যার ফলে তাদের ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গুলের ছাপ তৈরি হয়। আবার ডিএনএর ক্ষেত্রেও আলাদা হয়ে থাকে। অভিন্ন যুগল অর্থাৎ ছেলে-ছেলে অথবা মেয়ে-মেয়ে যমজদের ক্ষেত্রেও আলাদা ডিএনএ এর সিকোয়েন্স দেখা যায়। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, ছেলেমেয়ে যমজরা কখনোই প্রায় হুবহু একইরকম নয়, কিন্তু ভ্রাতৃসুলভ। প্রজন্ম ব্যাহত হয় না অনেকের ধারণা যমজ সন্তান হলে প্রজন্ম ব্যাহত হয় কিন্তু বিজ্ঞান এটাকে সমর্থন করে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল। যমজ সন্তান লাভ বিষয়টি জেনেটিক হতে পারে। তবে আইডেন্টিক্যাল যমজ জেনেটিক কারণে হয় না, ফ্র্যাটারনাল যমজ জেনেটিক কারণে হয়। একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, যখন মা দুটি ডিম্বাণু উৎপন্ন করতে সক্ষম হন শুধু তখনই যমজ হবার সম্ভাবনা হয়। আর এটি মূলত পরিণত বয়সে অথবা কিছু গর্ভাবস্থার পদ্ধতির কারণে এমনটা হয়ে থাকে। জন্মগতভাবেই সেরা বন্ধু যমজেরা জন্মগতভাবেই অনেক ভাল বন্ধু, তাদের মধ্যে সম্পর্ক অকৃত্রিম। তবে অনেক যমজ আছেন যারা এটাকে স্বীকার করেন না। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে যমজদের মধ্যে একটা আলাদা সম্পর্ক আছে। অনেক যমজ তাদের রুম, পোশাক, অভিভাবকদের মনোযোগ শেয়ার করে। নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে না যেহেতু আমরা সবসময় নিজেকে অপরের সঙ্গে তুলনা করে থাকি তাই অনেকেই ভাবি যে, যমজরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। যমজদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাব থাকতে পারে, এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও তা তাদের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলে না। অভিন্ন যুগলদের মধ্যে এমনটা হয় না বললেই চলে। একজনের মনে কি চলছে তা আরেকজন জানতে পারে যমজদের মধ্যে অনেকেই দাবি করেন যে, তারা একজন অপরজনের মনে কি চলছে তা জানতে পারেন। অধিকংশ ক্ষেত্রেই আপনি এমন যমজদের খুঁজে পাবেন যে, তারা এমন অনুভূতি কোন না কোন সময় অনুভব করেছেন। এমনকি যমজরা একে অন্যের থেকে অনেক দূরে থাকলেও তারা তাদের একজনের বিপদ বা কোন সমস্যায় পড়লে তা বুঝতে পারেন। সম্পূর্ণ আলাদা দু’জন ব্যক্তি আমরা সবসময় সব মানুষকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ব্যক্তিত্বে দিক দিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করি কিন্তু সেটাই যখন কোন যমজদের ক্ষেত্রে তখন কেন যেন মনে হয়, যমজ মানে তাদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ব্যক্তিত্বতে মিল থাকতেই হবে, এমনটাই ভেবে বসে থাকি। কিন্তু বিষয়টি ঠিক এমন নয়। দুইজন সাধারণ মানুষ যেমন আলাদা ব্যক্তি তেমনি যমজরাও সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি। ধরুন আপনি যমজদের জন্য উপহার কিনবেন তখন আপনাকে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, একটি উপহার যমজের একজনের পছন্দ হলে যে অন্যজনেরও পছন্দ হবে এমন কিন্তু নয়। যেহেতু যমজেরা সাধারণত একই বাড়িতে একই বাবা মায়ের কাছে বেড়ে ওঠেন তাই তাদের অনেক ক্ষেত্রেই মিল থাকে কিন্তু তাই বলে যে তাদের নিজস্বতা থাকবে না, এটা নয়। নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করে প্রায়ই দেখা যায় যে, যমজেরা যমজ হিসেবে খুবই গর্ববোধ করে। তারা যখন অন্য যমজদের সঙ্গে দেখা করে তখন খুব আনন্দিত হয় আর তাদের গল্প শেয়ার করতে থাকে। এমনকি প্রতি বছর যমজদের নিয়ে অনুষ্ঠান হয় যেখানে শুধু যমজেরা একত্রিত হন এবং খেয়াল করলে দেখা যায় সবাই যমজ হিসেবে খুবই গর্বিত। অবশ্য আলাদা হতে কার না ভাল লাগে। পুরো পৃথিবীর ৩% লোক যমজ। তাই এটা নিয়ে গর্ব করা যেতেই পারে। যে বড়, সে এটা নিয়ে বেশি গর্ববোধ করে যমজদের নিকট সবচেয়ে বেশিবার যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, তা হলো কে বড়? আর এই প্রশ্নের উত্তর মনে হয়, যমজদের মধ্যে বড় যে, সে সব থেকে দ্রুত দেয়। সাধারণত যমজদের মধ্যে বয়সের পার্থক্য কয়েক মিনিট হয়ে থাকে। তবে কখনও কখনও তা কয়েক ঘণ্টাও হয়। তবুও বয়সে বড় যমজরা এটা নিয়ে গর্ব অনুভব করে। ভিন্ন ভিন্ন যমজ হওয়া ভাল যমজদের ক্ষেত্রে প্রথম যে প্রশ্নটি অনেকেরই থাকে, তা হচ্ছে তারা ফ্র্যাটারনাল যমজ নাকি আইডেন্টিক্যাল যমজ? আইডেন্টিক্যাল যমজরা একই রকম হয় না। ফ্র্যাটারনাল যমজদের মধ্যে মনের মিল বেশি থাকে। যমজ লালন পালন করা বেশি সহজ অনেকেই ভেবে থাকেন যমজ বাচ্চা অর্থাৎ একসঙ্গে দু’জনকে লালন পালন করা বোধহয় বেশি কঠিন। কিন্তু ধারণাটি একেবারেই ভুল। ভিন্ন বয়সী দুই বাচ্চা থেকে যমজ বাচ্চা লালন পালন করা বেশি সহজ। কেননা তাদের মনের মিল থাকে এবং বয়স ও একই হওয়ায় চাহিদাও একইরকম থাকে। যমজ না হলে কখনই বুঝবেন না যমজদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পরিবারের মধ্যেই যেন আরও একটা পরিবার। আর যমজদের মধ্যে যে সম্পর্কটা অন্য যে কোন পারিবারিক সম্পর্ক থেকে আলাদা। আর যমজ না হলে এই অনুভূতিগুলো অনুভব করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের অনেক প্রশ্ন যমজদের কাছে সাধারণ মানুষের অনেক প্রশ্ন থাকে। আর আপনি যমজ হলে দেখবেন আপনি তাদের কৌতূহল মেটাতে মেটাতে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন। যমজদের কাছে খুবই সাধারণ কিছু প্রশ্ন হলো- তোমাদের মধ্যে কে বড়? তোমরা কি একে অন্যের মন পড়তে পার? তোমাদের অসুখ বিসুখ কি একসঙ্গে হয়? ইত্যাদি ইত্যাদি। তথ্যসূত্র : বিজনেস ইনসাইডার
×