ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিসংখ্যান ব্যুরোর এমএসভিএসবি রিপোর্টে তথ্য

দেশে নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩০ মে ২০১৭

দেশে নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট জনসংখ্যায় পুরুষ ও নারীর অনুপাতে ভারসাম্য অবস্থা বিরাজ করছে। তবে নারীরা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে দেশের শতকরা ৮৭ দশমিক ২ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছে পুরুষ। অপরদিকে বর্তমানে ১০০ নারীর বিপরীতে পুরুষের আনুপাতিক সংখ্যা ১০০ দশমিক ৩। ২০১২ সালে নারী-পুরুষ এ লিঙ্গানুপাত ছিল ১০৪ দশমিক ৯। গত ৫ বছর ধরে এ লিঙ্গানুপাত কমেছে। উন্নত সমাজব্যবস্থার জন্য ভারসাম্যপূর্ণ লিঙ্গানুপাত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ কোটি ১০ লাখ ও ৮ কোটি ৭৫ হাজার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (্এমএসভিএসবি) প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। দেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যানকে গুরুত্ব দেয়া হয়। সোমবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিবিএস এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কেএম মোজাম্মেল হক, আইএমইডির সচিব মফিজুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোঃ আমির হোসেন। আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যে উন্নতি- বিদ্যুত সুবিধার আওতায় ৮১ শতাংশ মানুষ প্রতিবেদন অনুযায়ী বিবিএসের খানার গড় সদস্য সংখ্যা ২০১২ সালে ছিল ৪ দশমিক ৫ যা ২০১৬ সালে হয়েছে ৪ দশমিক ৩। তবে বাংলাদেশের মহিলারা এখনও উচ্চমাত্রায় পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা ৮৭ দশমিক ২ ভাগ পরিবারের খানা প্রধান হচ্ছে পুরুষ। বয়স্ক শিক্ষার হার বেড়েছে। ২০১১ সালে যা ছিল ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং এ হার ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৭২ দশমিক ৩ ভাগে। জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায় বয়স্ক পুরুষ জনসংখ্যার চেয়ে বয়স্ক মহিলা জনসংখ্যা বেশি শিক্ষিত, শিক্ষার হার বৃদ্ধির হার মহিলাদেরই বেশি (২২ দশমিক ৮ শতাংশ), পুরুষ ১৬ শতাংশ। ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশের ৮১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে, ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর ৭ মাস গড় আয়ুতে প্রতিবছর উন্নতি ঘটছে বাংলাদেশের। ২০১৬ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৬ বছর। গড় আয়ুর হিসাবটি করা হয়েছে ভগ্নাংশ হিসেবে। অর্থাৎ মাস-দিনের হিসাবে একজন মানুষ ৭১ বছর ৭ মাস ৬ দিন বাঁচেন। এর আগের বছরের হিসাবে গড় আয়ু ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর বা ৭০ বছর ১০ মাস ২৪ দিন। এক বছরের ব্যবধানে গড় আয়ু বেড়েছে প্রায় ৮ মাস। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু বেশি বেড়েছে। মহিলাদের বাচার সম্ভাবনা বেশি হওয়ার কারণে তাদের গড় আয়ু বেশি বেড়েছে। ২০১৬ সালে নারীদের গড় আয়ু দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৯ বছর (৭২ বছর ১০ মাস ২৪ দিন) এবং পুরুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭০ দশমিক ৩ বছর (৭০ বছর ৩ মাস ১৮ দিন)। তবে পুরুষ ও নারী উভয়েরই গড় আয়ু বেড়েছে। ২০১৫ সালে পুরুষের গড় আয়ু ছিল ৬৯ দশমিক ৪ বছর (৬৯ বছর ৪ মাস ২৪ দিন) এবং নারীদের ছিল ৭২ বছর। পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ২৬, নারীর ১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স বর্তমানে ২৬ দশমিক ৩ বছর। আর নারীদের বিয়ের গড় বয়স ১৮ দশমিক ৮ বছর। গত ৫ বছরে পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ১ দশমিক ৬ বছর বেড়েছে, ২০১২ সালে পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ দশমিক ৭ বছর। এ বয়স গড়ে প্রতি বছর শূন্য দশমিক ৩ বছর করে বেড়েছে। পুরুষের বিয়ের গড় বয়স বাড়লেও মহিলাদের বিয়ের গড় বয়স গত ৫ ধরেই ১৯ বছরের কাছাকাছি রয়ে গেছে। ২০১২ সালে মহিলাদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১৯ দশমিক ৩ বছর যা ২০১৬ সালে হয়েছে ১৮ দশমিক ৮ বছর। পুর্ণ বয়স্কদের মরণশীলতা ও শিশুমৃত্যুর হার কমেছে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রতি হাজার জনসংখ্যায় মরণশীলতা ৫ দশমিক ১ জন, যা পল্লী এলাকায় ৫ দশমিক ৭ জন এবং শহর এলাকায় ৪ দশমিক ২ জন। ২০১২ সালে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩। অর্থাৎ এ সময়ে মরণশীলতা কমেছে। এ সময়ে শিশুমৃত্যুর হারও কমেছে। ২০১২ সালে প্রতি হাজার জীবিত জন্মের ক্ষেত্রে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৩৩ এবং ২০১৬ সালে কমে যা দাঁড়িয়েছে ২৮। জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি গত ৫ বছরে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি, প্রায় একই রকম রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে দেখা যায় যে, প্রত্যাশা অনুযায়ী শহরাঞ্চলের মহিলারা (৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ) গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের চেয়ে (৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ) বেশি হারে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। প্রতি হাজারে প্রতিবন্ধী ৯ জন প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতি হাজারে ৯ জন মানুষ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। মহিলাদের (৮ দশমিক ৩ জন) চেয়ে পুরুষদের (৯ দশমিক ৮ জন) প্রতিবন্ধিতার হার বেশি। প্রতিবেদন মতে, মহিলাদের তুলনায় পুরুষের প্রতিবন্ধিতার ঝুঁকি বেশি। সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ ১৫ বছর ও তদুর্ধ জনসংখ্যা শিক্ষার হার (সাক্ষরতা) বেড়েছে। ২০১৬ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। ৫ বছর আগে (২০১১ সাল) সাক্ষরতার এ হার ছিল ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের মোট প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যা যথাক্রমে ৮ কোটি ১০ লাখ ও ৮ কোটি ৭৫ হাজার। জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্য ধর্মাবলম্বীদের শতকরা হিসাব আলাদাভাবে প্রকাশ করা হয়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। জনসংখ্যার মধ্যে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। জনসংখ্যার অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে শহর এলাকায় আগমনের হার বাড়ছে। অর্থাৎ গ্রামের মানুষ শহরমুখী বেশি হচ্ছে।
×