ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ষোড়শ সংশোধনী মামলার এ্যামিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসির মন্তব্য

একজন বিচারক কি নিজের বিচার নিজে করবেন?

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ মে ২০১৭

একজন বিচারক কি নিজের বিচার নিজে করবেন?

আরাফাত মুন্না ॥ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের স্বার্থ জড়িত, তাই এই মামলায় সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, একজন বিচারক নিজের মামলার বিচার কি নিজেই করবেন? সুপ্রীমকোর্টের বিচারক অপসারণ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে করা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে দাবি করে এই সংশোধনীকে অবশ্যই আইনত বৈধ বলেও মত দিয়েছেন তিনি। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপীলের নবম দিনের শুনানিতে সোমবার এ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে তিনি এসব বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সোমবার বেলা সোয়া ৯টায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয় সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে। এদিন চার এ্যামিকাস কিউরি তাদের বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেছেন এবং একজন বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। শুরুতেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী তার অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেন। পরে বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। কামাল হোসেন তার বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করলে সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে মতামত দেন আইনজীবী আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া। এরপর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি তার বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। পরে দুপুর সোয়া ১টায় আদালতের কার্যক্রম সমাপ্ত হলে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে আপীল বিভাগ। এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিটকারীদের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। এ মামলায় মোট ১২ আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। এর মধ্যে সাতজন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করেছেন, যাদের সবাই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্টে বাতিলের রায়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। অষ্টম এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য উপস্থান শুরু করেছেন আজমালুল হোসেন কিউসি। তিনি তার অসমাপ্ত বক্তব্যেই ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের সাত বিচারপতির আপীল বেঞ্চে ষোড়শ সংশোধনী মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। এ বিষয়টি সুপ্রীমকোর্ট বেশ কয়েকটি রায়ে বলে দিয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম সংশোধনী মামলা এবং মাসদার হোসেন মামলা, ইদ্রিসুর রহমান মামলার রায়েও একই কথা বলা হয়েছে। হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ রায়কে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করছি। তিনি বলেন, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল রায়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান একমাত্র পাকিস্তানে রয়েছে। তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল ধারণাপ্রসূত। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, হংকং, জার্মানি, সুইডেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল, জাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, নিউসাউথ ওয়েলসসহ বিভিন্ন দেশে বিচারক অপসারণের জন্য সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অথবা এরকম পদ্ধতি রয়েছে। শুনানিতে কামাল হোসেন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে আপনারা এটিকে বাতিল করে দেন। ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদকে বলা হয়েছে সংবিধানের মৌলিক নীতির একটি। এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, যা থাকবে রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের হস্তক্ষেপমুক্ত। যা সংবিধানের ৯৪ (৪), ১৬ (ক), ১৪৭ ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জনগণের একটি ঐতিহাসিক সংগ্রামের নজির রয়েছে। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব সমুন্নত রাখা ও রাষ্ট্রক্ষমতা দ্বারা জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করা যা সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রীমকোর্ট বলে দিয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, প্রজাতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতার পৃথকীকরণ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, মৌলিক অধিকার হলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান করা হয়। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়া হলেও এই ব্যবস্থা রেখে দেয়া হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি। শুনানিতে কামাল হোসেন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মতো সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যা দেশের বিচার বিভাগকে ঝুঁকি ও অবৈধ হস্তক্ষেপের মুখে ফেলেছে। আইনের শাসনকে বিপন্ন করেছে। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হবে যদি নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেন। বিচারক অপসারণের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা নিরপেক্ষ ও উন্মুক্তভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়ায় বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। শুনানিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএফ হাসান আরিফ বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারকদের নিজস্ব প্রয়োজনে নয়। জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। এর আগে আনোয়ার হোসেনের মামলায় সুপ্রীমকোর্ট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অপরিহার্য অংশ অর্থাৎ বেসিক স্ট্রাকচার বলে রায় দিয়েছেন। পরে আরও দু’একটি রায়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার বলা হয়েছে। আমাদের আশে পাশের দেশে বিশেষ করে ভারতে এ ধরনের অনেক রায় হয়েছে, যেখানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে বেসিক স্ট্রাকচার, সংবিধানের বেসিক পিলার বলা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। কারণ এর মাধ্যমে জুডিশিয়ারিকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট এবং সরকার এক। যেহেতু একই সদস্য দিয়ে তারা কেবিনেট ফর্ম করেছে। সুতরাং, সে ক্ষেত্রে সেপারেশন অব পাওয়ার যেটা বলছি পার্লামেন্ট এবং কেবিনেটের ফর্মেশনের মাধ্যমে সেপারেশন অব পাওয়ারটা পুরোপুরি এখানে পালিত হচ্ছে না। একমাত্র জুডিশিয়ারিকে যদি আমরা এর বাইরে রাখি তবেই সেপারেশন অব পাওয়ারটা থাকে। আর সেপারেশন অব পাওয়ারটা যদি না থাকে তাহলে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে না। হাসান আরিফ বলেন, সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছিল, চতুর্থ সংশোধনীতে ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আনা হয়েছিল। অর্থাৎ সংসদের ক্ষমতা সরিয়ে দিয়ে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আসেনি। রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল সেটা বাতিল করে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এটা একটা ভুল ধারণা যে, পার্লামেন্টের ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা মার্শাল ল’ এসে সরিয়ে দিয়েছে, এটা ঠিক না। চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারক অপসারণে রাষ্ট্রপতিকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল মার্শাল ল’ এসে সেই ক্ষমতাটা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দিয়েছে। পরবর্তীকালে অষ্টম সংশোধনী মামলায় সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পঞ্চদশ সংশোধনীতেও সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বহাল রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটা পার্লামেন্ট নিজের কাছে নিয়ে নিয়েছে। যেটা দুবার আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই বিষয়টা সংশোধন করার কোন এখতিয়ার সংসদের নেই বলেও মত দেন তিনি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া শুনানিতে বলেছেন, সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে থাকতে হবে। যদি এটা সংসদের হাতে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হবে। ষোড়শ সংশোধনী করার মাধ্যমে দুটি জিনিস করা হয়েছে। প্রথমত বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (২) লঙ্ঘন করে এ সংশোধনী করা হয়েছে। ফলে ষোড়শ সংশোধনীটি অবৈধ। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ (২) এ বলা হয়েছে, ‘জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হইবে?’ ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানে কিছু মার্শাল ল’ ইনস্ট্রুমেন্ট থেকে থাকলেও সংসদে পাস হওয়ার পর এটি সংসদেরই আইন হয়ে গেছে। আর পঞ্চম সংশোধনীর কারণে সংসদে আইন পরিবর্তন করার ক্ষমতা সীমিত। পরে আজমালুল হোসেন কিউসি শুনানিতে মত দেন, সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এটি কার্যকর সংশোধনী এবং একইসঙ্গে এটি বৈধ আইন হিসেবে বিবেচিত। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিচার বিভাগকে উপলব্ধি করতে হবে এর সঙ্গে তাদের স্বার্থের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগ কখনও বিচারকদের স্বার্থে রায় দেয় না। রায় দেয়া হয় জনগণ ও বিচার বিভাগের স্বার্থে। সংবিধান ও আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতেই রায় দেয়া হয়। এখানে বিচারকদের ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। তবে এই মামলার রায় কি হবে আমরা জানি না। এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, পিতামাতা ও ছেলেমেয়েদের ভালবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে কি? আমি বলব অবশ্যই আছে। কারণ পিতামাতা তার সন্তানকে নিঃশর্তভাবে ভালবাসে। এ সময় কিউসি বলেন, কিভাবে বিচারক অপসারণ করা হবে সে বিষয়টি এই মামলার সঙ্গে জড়িত। যা একটি মৌলিক প্রশ্নের উদ্রেগ করেছে। বিচারক অপসারণের পদ্ধতি কে নির্ধারণ করবে ? তার উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সংসদ। পরবর্তী প্রশ্ন হচ্ছে, কে এই পদ্ধতির আইনগত বৈধতা দেবে ? উত্তর হচ্ছে, অবশ্যই সুপ্রীমকোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, একজন বিচারক নিজের মামলার বিচার কি নিজেই করবে? অথচ এই মামলায় বিচার বিভাগের স্বার্থ জড়িত। তাই এ মামলায় সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অবশ্যই আইনত বৈধ। কানাডায় এ ধরনের পদ্ধতিতে বিচারক অপসারণ করা হয়। তিনি বলেন, বিচারক অপসারণটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ কিন্তু অপসারণের পদ্ধতিটা মৌলিক কাঠামোর অংশ নয়। সংসদের হাতে বিচারক আপসারণের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই বলেও মত দেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতেই ছিল। বঙ্গবন্ধুর সময় চতুর্থ সংশোধনী হলে তা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পরে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়। ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হয়। এর বিরুদ্ধে কয়েক আইনজীবী আদালতে গেলে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে হাইকোর্টে ওই রায় আসে। হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপীল শুনানি শুরু হয়। এরপর ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায়ের ওপর আদালতে শুনানি করেন। এর পর ওইদিনই আদালতে চার এ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। তারা হলেন, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। সেদিন আদালত ২১ মে শুনানির পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় আপীল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আপীল বিভাগ। তারা হলেন- সাবেক বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ এফ হাসান আরিফ, এম আই ফরুকী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া।
×