ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বইয়ের আলো

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৯ মে ২০১৭

বইয়ের আলো

আমরা জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে থাকি সঙ্গত কারণেই। শিক্ষার আলো বিনা সমাজ থেকে নানাবিধ অন্ধকার দূর করা সম্ভব নয়। জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার সঙ্গে কয়েকটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। প্রথমেই আসে জ্ঞানের বাহন বইয়ের প্রকাশ ও বিতরণ সহজ এবং সুলভ করার বিষয়টি। বলাবাহুল্য, একাডেমিক শিক্ষাস্তরের পাঠ্যপুস্তকও এর বাইরে নয়। তবে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেই থাকে সুবিশাল জ্ঞানের ভা-ার। এই জানার কোন শেষ নেই। জ্ঞান আহরণ তাই শিশুকাল থেকে জীবনাবসানের মুহূর্ত পর্যন্ত বহাল থাকা প্রয়োজন। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে বইয়ের প্রচার-প্রসারের পাশাপাশি সর্বস্তরে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং পাঠপ্রতিক্রিয়া জানানোর মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে সংহত ও কর্মোপযোগী করাও জরুরী। বিষয়টি ব্যাপক। যদি আমরা বইয়ের বিতরণ বা বিপণনের প্রসঙ্গ সামনে নিয়ে আসি তাহলেও আলোচনা সংক্ষিপ্ত হবে না। পাঠাগারের প্রয়োজন অস্বীকার করা যাবে না, তবে পাঠাগার গড়ে তুলতে হলেও বই সংগ্রহ করা চাই। সেই সংগ্রহটি সম্পন্ন হবে বইয়ের বাজার থেকেই। সে কারণেই বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা বইয়ের দোকান গড়ে তোলার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলে থাকেন। বইয়ের দোকান শুধু বাজার বা মার্কেটে হবে, তা নয়। এটি হতে হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক মিলনকেন্দ্রের কাছাকাছি। একইসঙ্গে প্রতিটি আবাসিক এলাকাতেই থাকতে হবে বইয়ের দোকান। আরেকটু খুলে বললে বলতে হবে যে বইয়ের দোকান চাই প্রতিটি পাড়া-মহল্লায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্বাধীনতা অর্জনের অর্ধ শতাব্দীকালের মধ্যেই দেশে বইয়ের দোকানের সংখ্যা শোচনীয় হারে কমে গেছে। বিলাসবহুল বহুতল মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে বইয়ের দোকান প্রায় অনুপস্থিত। শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেট ছিল রাজধানীর দ্বিতীয় বাংলাবাজার। সে জায়গায় এখন তৈরি বাহারি পোশাকের শোরুম গড়ে উঠেছে। বইয়ের বাজার এভাবেই হয়ে উঠেছে পোশাক কিংবা জুতার বাজার। নিউমার্কেটের উল্টো দিকে বলাকা সিনেমা হলের মার্কেটে ‘বইবিচিত্রা’ নামের বিখ্যাত বইয়ের দোকানটি এখন পাদুকালয়। এসব দেখেশুনে শঙ্কা জাগে গত শুক্রবার রাতে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানগুলো আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নেপথ্যে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা। যেখানে আরও অনেক বইয়ের বাজার গড়ে তোলা দরকার, সেখানে চালু একটি বইয়ের মার্কেটে আগুন লাগলে আমাদের বুক কেঁপে ওঠে। নীলক্ষেত ইসলামিয়া মার্কেটের বই মার্কেটে ৮টি দোকানে শুক্রবার রাতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। প্রসঙ্গত দুয়েকটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়। শিশুমন কোমল, নরম মাটির সঙ্গে তার তুলনা চলে। নরম মাটিকে যে কোন রূপ দেয়া যায়, শিশুর মনের ওপর চাপ দিয়ে বা প্রভাব বিস্তার করেও তাকে আকাক্সিক্ষত রূপ দেয়া সম্ভব। তাই শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে সুষ্ঠু শিক্ষা অপরিহার্য। সাহিত্যের বই সুখপাঠ্য হবেÑ সেটি নিশ্চয়ই প্রথম শর্ত। পড়তে সুখ, পড়েও আনন্দ পাওয়া যাবেÑ এটি জরুরী বটে। তবে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পশ্চাৎপদ বই, নীতিবর্জিত বইও সুখকর ভঙ্গির আবরণে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব। তাই বইকে শুধু সুখপাঠ্য হলে চলে না, হতে হয় শিক্ষামূলক, মানসিক বিকাশের জন্য উপকারী এবং দেশ ও মানুষের প্রতি দায়িত্ববান করে তোলার প্রয়াস তথা সমাজহিতৈষী। জীবনকে সুন্দর নিরাপদ ও আলোকিত করার জন্য বইয়ের আলোর কোন বিকল্প নেই। তাই এই আলো জ্বালানোর ও ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি সুপরিকল্পিত হওয়া চাই।
×