ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট চায় অর্থনীতি সমিতি

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ২৮ মে ২০১৭

৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট চায় অর্থনীতি সমিতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সংগঠনটি মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট এমন হওয়া উচিত যেন তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও অসাম্প্রদায়িক মানস কাঠামো বিনির্মাণে সহায়ক হয়। কালের পরিক্রমায় মূল ধারার অর্থনীতির মধ্যে মৌলবাদের অর্থনীতি, সরকারের মধ্যে মৌলবাদের সরকার, রাষ্ট্রের মধ্যে মৌলবাদের রাষ্ট্র এবং ধর্মের রাজনীতিকরণ অর্থনীতির রন্ধ্রে অনুপ্রবেশ করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে অর্থনীতি সমিতি। অর্থনীতি সমিতি মনে করে, বরাবরের মতো বাজেটের অন্যতম দুর্বল দিক হলো সময়মতো এবং মানসম্মত বাস্তবায়ন। রবিবার বিকেলে ইস্কাটন গার্ডেন রোডের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন অধ্যাপক আবুল বারকাত। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও সমাজের সুষ্টু অগ্রগতির লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ বাঞ্চনীয়। ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য-বড় দুর্ভাবনার বিষয়। গত ৪০ বছরে সমাজ অর্থনীতিতে বহুমুখী দারিদ্র্য যেমন বেড়েছে তেমনি অঢেল বিত্ত সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে গুটি কয়েক ধনীর হাতে। দিনে দিনে শক্তভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে গেছে মৌলবাদের অর্থনীতি। মৌলবাদের অর্থনীতির পুঞ্জীভূত নীট মুনাফার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশে এখন প্রতি তিন জন ছাত্রের মধ্যে একজন মাদ্রাসার ছাত্র। এসবই হলো ভবিষ্যতে ধর্মের নামে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে বতর্মান বিনিয়োগ। আর এদের কর্পোরেট হেড অফিস হিসেবে কাজ করছে জামায়াত-ই ইসলাম, আর নীচের এক বাহুতে আছে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্যার্জনে পরিচালিত ১৩২টি সশস্ত্র জঙ্গী সংগঠন আর অন্য বাহুতে আছে মৌলবাদের অর্থনীতি এবং বিভিন্ন ট্রাস্ট ও ফাউন্ডেশনসহ ২৩১টি বেসরকারী সংস্থা। আবুল বারকাত বলেন, এই ভ্যাট-যা নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা চলছে। যার আয় যতো বেশি তিনি তত বেশি ভ্যাট ও ট্যাক্স দেবেন। এটাই অর্থনীতির নিয়ম। কিন্তু দেশে যিনি ১০০ টাকা আয় করছেন চাল কিনতে তিনি যে ভ্যাট দিচ্ছেন হাজার কোটি টাকার মালিকও সমহারে ভ্যাট দিচ্ছেন। এজন্য আমরা প্রত্যক্ষ করের কথা বলেছি। এখন যেভাবে বাজেট করা হচ্ছে তাতে প্রত্যক্ষ করের দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া প্রয়োজন। আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করছেন তার দ্বিগুনের চেয়ে বেশি বাজেট প্রস্তাবনা দিয়ে আবুল বারকাত আরও বলেন, ইতোপূর্বে আমরাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণের কথা বলেছিলাম। ওই সময় হিসেব করে দেখেছিলাম দেশীয় ব্যাংকগুলো বিশেষ করে জনতা, অগ্রণী এবং সোনালী যে সুদে ঋণ দেয়, বিশ্বব্যাংকের সুদ তার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুন বেশি। তাই বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ সঠিক হয়েছে। তিনি বলেন, ৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেটও অবাস্তব নয়। অর্থনীতি সমিতির বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় আসবে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেটে বরাদ্দের প্রায় ৭৯ শতাংশের বেশি যোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়। আর বাজেটের ২১ শতাংশ অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকার যোগান দেবে-সম্মিলিতভাবে সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্ব বা পিপিপি ৬০ হাজার কোটি টাকা বা ৩১ ভাগ, বিদেশে বসবাসকারী দেশীয় নাগরিকদের বন্ড ৪৯ হাজার কোটি টাকা বা ২৬ ভাগ, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ ৪৫ হাজার কোটি টাকা বা ২৩ ভাগ এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা বা ১৯ ভাগ। আসন্ন বাজেট সামনে রেখে বিশেষভাবে বিবেচনার জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে অর্থনীতি সমিতি। এর মধ্যে জাতীয় বাজেটকে উন্নয়নের দিকনির্দেশক দলিল উল্লেখ করে বলা হয়েছে-বণ্টন ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে জনসংখ্যাকে জন সম্পদে পরিণত করা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা, সম্প্রসারণমুখী বাজেট প্রণয়ন , দেশজ উৎপাদনের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি, বার্ষিক প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি নির্ধারণে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতি বলছে, এজন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যবসা ব্যয় কমিয়ে এনে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, রফতানি বহুমুখীকরণ, পুঁজিবাজার উন্নয়ন এবং এই বাজার ধ্বংসে ইতোমধ্যে যারা কারসাজি করেছে তাদের শাস্তি প্রদান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ, কৃষি ভর্তুকি বাড়ানো, কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার করা এবং গবেষণা উন্নয়ন খাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধির তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনুন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে উন্নয়ন ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।
×