ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কোন্ কালো হাতের থাবায় পড়েছে দেশ?

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২৮ মে ২০১৭

কোন্ কালো হাতের থাবায় পড়েছে দেশ?

একটার পর একটা এজেন্ডা তৈরি করছে সরকারী দল। শ্যামল কান্তি নামের নিরীহ স্কুল টিচারকে নিয়ে রাজনীতির নাটক এখন বেশ জমে গেছে। বেচারা একে মাস্টার তাতে হিন্দু। একবার কান ধরে বেঁচে গেলেও এখন আর পার পাবে বলে মনে হয় না। তার পেছনে যে মানুষেরা জমায়েত হয়েছিলেন তারা এখন আর আগের জায়গায় নেই। তাদের জীবনে কত সমস্যা। একটা নিয়ে পড়ে থাকলে কি চলে? আলো আছে তো পানি নেই। পানি থাকলে গাড়ি চলে না। গাড়ি চললে বেতন মেলে না। রাজনীতি তাদের নতুন নতুন সমস্যার জালে ফেলে বাপের নাম ভুলিয়ে দেয় সেখানে শ্যামলবাবু কোন্ ছাড়? সেলিম ওসমানেরা এসব ভাল বোঝে। এমনকি কথিত বিচারও বোঝে কখন আবার খপ করে ধরতে হবে। এবার আর আগের মতো শোরগোল নেই। তাছাড়া ঘুষ দেয়াটা দেশের একটা সহজ ব্যারাম। সেটা যে কারও বেলায় সত্য হতে পারে। ফলে মানুষ এই বটিকা গিলতেই পারে। কিন্তু ঘুষ দেয়াটা যে সমান অপরাধ সেটা কেউ বলছে না। আওয়ামী লীগের আমলে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। এবার যোগ হয়েছে শেখ হাসিনার উদ্যমী নেতৃত্ব। তাঁকে সামনে রাখা মানুষগুলো এসব মানতে পারছেন না। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। তাছাড়া বাম ও ছোট দলগুলো বাদ দিলে তাঁর দলই জাতির শেষ ভরসা। সেখানে যদি এমন গোঁজামিল আর ভয়ঙ্কর চেহারা ওঁৎপেতে থাকে তো মানুষ যাবে কোথায়? সঙ্গে জুটেছে সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য তুলে ফেলার নতুন ঘটনা। যদি এমন হতো ভাল লাগছে না বা বদলে যাওয়া আদর্শের কারণে আওয়ামী লীগ সুপ্রীমকোর্টের সামনে থাকা ভাস্কর্যটি মানতে পারছে না, আপত্তি ছিল না। সেটা তারা বললেই পারত। কিন্তু যারা এই সরকারকে উৎখাতের জন্য শাপলা চত্বরে এমন এক সমাবেশ করেছিল যার পেছনে মদদ দিতে খালেদা জিয়া মাঠে নেমেছিলেন, যাতে আগতদের জন্য পানি সাপ্লাই দিয়ে সওয়াব কামাতে এরশাদ ডাক দিয়েছিলেন তাদের কথামতো কেন এটি সরাতে হবে? সে রাতে যারা দুই হাত তুলে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের জন্য দোয়া করেছিলেন আর যারা আতঙ্কে শেখ হাসিনা ও সরকার থাকার জন্য চোখের পাতা এক করতে পারেনি তারা কি এক? কাদের বেছে নিতে হবে বা কাদের সঙ্গে থাকলে সারাজীবনের অঙ্গীকার পাওয়া যাবে সেটাও কি তারা জানেন না? একটা বিষয় আমরা কেউই বলছি না, ভাবমূর্তি বা ধর্মের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হলে এটি আগে কারও চোখে পড়েনি কেন? এখন তো আওয়ামী লীগ ওলামা লীগ আর আওয়ামী মুসলিম লীগ মিলেমিশে একাকার। তাহলে এতদিন এটা নিরাপদ থাকল কিভাবে? যেই মাত্র হেফাজত বলল সরাতে হবে অমনি টনক নড়ল সরকারের। আমরা যারা বাংলাদেশের রাজনীতি দেখে বড় হয়েছি তাদের কাছে এ এক চরম অভিজ্ঞতা। একটা শর্ত মানলে যাদের বাকি শর্তগুলো মাথাচাড়া দেবে তাদের গর্তে পা দেয়ার ফল আমরা আগেও দেখেছি। যাদের কথামতো, যাদের মন রাখার জন্য এই ভাঙ্গাভাঙ্গি তাদের এজেন্ডায় নারী নেতৃত্ব সরানোও আছে বৈকি। এখন বেকায়দায় তারা নারী নেতৃত্ব মানলেও তাদের জন্য খালেদা জিয়া একটু-আধটু হালাল হলেও শেখ হাসিনা একেবারেই হারাম। সে কথা ভুলে কিসের আঁতাত? সোজাসাপটা কথা হলো, এভাবে আপোসের যে মূল কারণ তার নাম গদি। আর সে গদি বাঁচানোর চেষ্টার জন্য জনগণের কাছে যাবার মুরোদ বা সাহস কোনটাই নেই হয়ত বা। একটা স্বপ্নের দেশ মধ্য আয়ের দেশ ডিজিটাল সমাজের চেহারা কি আফগানিস্তানের মতো? যেখানে বুদ্ধ মূর্তিও উড়ে যায় বোমার আঘাতে? নাকি মুচলেকা দিতে দিতে পাকিস্তানে পরিণত হয়ে যাওয়া কোন দেশের মতো? ভাস্কর্য ভাঙ্গায় যত আপত্তি তার চাইতে আমার আপত্তি রাজনীতির এই দ্বিমুখী আচরণের বিষয়ে। আমি তো দিব্যি বলতে পারি জামায়াত এ কাজ করত না। তারা হয় সবগুলো ভেঙ্গে দিত নয়ত সবগুলোকে অন্যভাবে রাখার মতো ঈমানের কথা বলত। বেঈমান রাজনীতি মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও তার দু’বগলের একটাতে সাম্প্রদায়িকতা আরেকটায় মৌলবাদের ইট। এটাই আসল পরাজয়। যারা এভাবে নত হয় তাদের কপালে আর যাই থাক সম্মান থাকে না। কে না জানে এদেশের হিন্দু-বৌদ্ধ প্রগতিশীল মুসলমানের আশ্রয়ের জায়গা আওয়ামী লীগ। যারা একাত্তরের রাজাকারদের ফাঁসিতে ঝোলায় তারাই নব্য রাজাকারদের ভয়ে ভাস্কর্য সরায় এটা কি ইতিহাসের উল্টোযাত্রা নয়? আমরা এ কথা লিখে দিতে পারি জামায়াত হেফাজতের একটি ভোটও নৌকায় পড়বে না। নৌকার ভোট মানে প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসীদের ছাপ। তারা যদি এভাবে বিশ্বাস হারায় সেটা কি আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর হবে? অনেকে বলছেন, ভোটারহীন নির্বাচন বলে জনগণের মনের তোয়াক্কা করছে না কেউ। এটাও ধোপে টেকার মতো কিছু না। এভাবে দলকে হীনবল করে ফেললে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? আওয়ামী লীগ চিরকাল মানুষের পায়ে ভর দিয়ে যেসব অপশক্তির মোকাবেলা করেছে আজ সে অপশক্তির কাছে নতজানু হওয়াটা আগামী প্রজন্মের জন্য আসলেই ভয়ের বিষয়। এমন হলে কোথাও কারও কোন শক্তি নেই গর্জে ওঠে। তবে কি আমরা শেষ জায়গাটুকুও হারাতে বসেছি রাজনীতিতে?
×