ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ আজ মাশরাফিদের

প্রকাশিত: ০৭:১০, ২৭ মে ২০১৭

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচ আজ মাশরাফিদের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দুই বছর আগেই নিশ্চিত হয়েছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণ। ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ঘোষিত র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ দল ছিল ৭ নম্বরে। তবে দুই বছরের মধ্যে আরেক ধাপ উন্নতি হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজাদের। আয়ারল্যান্ডে সদ্য সমাপ্ত তিন জাতির ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ফলাফলের জন্য এখন আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের ৬ নম্বর দল বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মূল লড়াই একেবারে প্রথমদিনেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। তবে এর আগে পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে দুটি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। আজ এজবাস্টনে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নামছেন উজ্জীবিত মাশরাফিরা। বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে এ ম্যাচটি শুরু হবে। গত দুটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ দল। কারণ র‌্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে ছিল। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ৮ দল নিয়ে এ মর্যাদার টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়ে থাকে। কিন্তু ২০০৯ ও ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি বাংলাদেশ ৯ নম্বরে থাকার কারণে। সেই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে ২০১৫ সালে। সে বছর টানা তিনটি সিরিজে ক্রিকেট পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয় টাইগাররা। প্রথমে আট নম্বরে এবং পরে প্রথমবারের মতো ৭ নম্বরে উঠে আসে বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ দলগুলোর কাতারে ওঠার পর থেকেই বিশ্বের সবগুলো দলের কাছে ভীতিকর ও মর্যাদার একটি দলে পরিণত হয় টাইগাররা। সেটার ছাপ দেখা যায় ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে। ওয়ানডেতে উন্নতির গ্রাফ উর্ধমুখী হওয়া দলটি এ ক্ষুদ্র ফরমেটে অনেক পিছিয়ে থাকলেও বিশ্বব্যাপী আলোচনার মূলে ছিল বাংলাদেশ। এর কারণ ওয়ানডের পারফর্মেন্সটা সে বছর টি২০ এশিয়া কাপে দেখিয়ে দেয় তারা। ওঠে ফাইনালে। টি২০ বিশ্বকাপেও আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর থেকে এক সময় টানা পরাজয়ের বৃত্তে থাকা দলটি একই সঙ্গে জয় আর পরাজয়ের সমান অবস্থান নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে থেকেই বাংলাদেশ দল ছিল আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এ টুর্নামেন্টের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলার দারুণ সুযোগ আসে মাশরাফিদের। এই সিরিজের দিকেও সবার নজর ছিল। কারণ বাংলাদেশ সবগুলো ম্যাচ জিতলে নিশ্চিতভাবেই শ্রীলঙ্কাকে হটিয়ে ৬ নম্বরে উঠে আসবে আর নিশ্চিত হয়ে যাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলা। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচেই হোঁচট খেতে হয়েছে মাশরাফিদের। বৃষ্টির কারণে আইরিশদের বিরুদ্ধে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে উল্টো রেটিং কমে যায়। তখন শঙ্কা তৈরি হয়েছিল এমনকি আট নম্বরে নেমে যাওয়ার। কিন্তু এরপর টানা দুই ম্যাচ জেতে টাইগাররা। হারিয়ে দেয় আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে। ফলে রেটিংয়ে সমান হয়ে যায় বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ভগ্নাংশের ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ৬ নম্বরে ওঠে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের রেটিং ৯৩.৩২ আর শ্রীলঙ্কার ৯২.৮৯। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে অনেক বড় অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মাশরাফিরা ত্রিদেশীয় সিরিজের এই সাফল্যে। ফুরফুরে মেজাজে থাকা দলটি এখন যে কোন দলের জন্যই ভয়ানক হয়ে উঠেছে, বিবেচনায় এসেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অভাবনীয় কিছু করে ফেলার যোগ্য দল হিসেবে। সেরা আট দলের মধ্যে ষষ্ঠ দল হিসেবে এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ। মাঝের দুটি আসরে খেলতে না পারা টাইগারদের প্রত্যাবর্তন হয়েছে দারুণভাবে। মাশরাফিদের নিচে আছে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের এই উত্থানের কারণে তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই আসরের ডার্ক হর্স হিসেবেই খেলবে বাংলাদেশ দল। শক্তিমত্তায় কতখানি এগিয়েছে বাংলাদেশ দল সেটার প্রমাণ হয়ে যাবে আজকেই। আট নম্বরে থাকা পাকদের বিরুদ্ধে লড়াই আজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে গা-গরমের ম্যাচ হলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এ লড়াইটি। ৮৮ রেটিং এখন পাকিস্তানের। র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে এখন তুলনামূলকভাবে দুর্বলতর দল হিসেবেই বিবেচিত পাকরা। তাদের বিরুদ্ধে ফলাফল নিজেদের পক্ষে না আসলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে উজ্জীবিত মনোভাবে কিছুটা ঘাটতি তৈরি হবে। অবশ্য ত্রিদেশীয় সিরিজের স্কোয়াডে থাকা বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টে খেলবেন না। এর মধ্যে নাসির হোসেন, শুভাশীষ রায়, নুরুল হাসান সোহান আছেন। বেশ কয়েকজন স্কোয়াডে থাকার পরেও খেলার সুযোগ পাননি যারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ১৫ সদস্যের দলেও আছেন। এর মধ্যে ইমরুল কায়েস, শফিউল ইসলাম খেলেননি। তারা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে থাকায় আজ পাকদের বিরুদ্ধে ওয়ার্মআপ ম্যাচে সুযোগ পেতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ‘এ’ গ্রুপে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ছাড়াও বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও রানার্সআপ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে হবে বাংলাদেশ দলকে। সেদিক থেকেও প্রস্তুতি ম্যাচ হওয়ার পরও পাকদের বিরুদ্ধে আজকের লড়াইটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ মাশরাফিদের জন্য। নিজেদের ঝালিয়ে নেয়া এবং ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রতিযোগিতামূলক ওয়ানডে খেলে পরিবেশ ও উইকেট পরিস্থিতি বুঝে ওঠার সুযোগ বাংলাদেশ দলের জন্য। অবশ্য ত্রিদেশীয় সিরিজের আগেই সাসেক্স কাউন্টিতে ১০ দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছে বাংলাদেশ দল। ওই সময় দুটি অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে। এবার মূল প্রস্তুতি মূল লড়াইয়ের আগে। আয়ারল্যান্ড থেকে সুখস্মৃতি নিয়ে ফেরা দলটির দিকে তাকিয়ে থাকবে এখন পুরো বিশ্ব। টাইগাররাও প্রস্তুত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য।
×