ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ধু টিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ২৭ মে ২০১৭

বন্ধু টিয়া

রণজিৎ সরকার ॥ রাফিয়ার এতিমখানায় ভাললাগে না। তার জানালার পাশে একটা টিয়াপাখি নিয়মিত আসত। সে ইশারায় মাথা নাড়তে নাড়তে টিয়াপাখির সঙ্গে অনেক কথা বলত। কিন্তু কয়েকদিন হলো টিয়া পাখিটা আসছে না। কেন আসছে না? কী হলো ওর? ভীষণ চিন্তায় পড়েছে রাফিয়া! পাখিটার খোঁজ কার কাছ থেকে নেবে। তার তো কোন বন্ধু পাখি নেই। রাফিয়ার পক্ষে তো কোথাও গিয়ে খোঁজ নেয়া সম্ভব না। এতিমখানায় তো সে এক ধরনের নিজেই বন্দী। রাফিয়া ভীষণ মন খারাপ করে ভাবল- সবাই আমাকে পর করেছে, শেষ পর্যন্ত পাখিটাও। তাহলে আমার আপন বলতে আর কেউ রইল না। রাফিয়া জানালার গ্রিল ধরে কাঁদছে। এতিমখানার অন্য মেয়েরা কাছে এলো। তাকে সান্ত¡না দিল। কিন্তু সে স্বস্তি পেল না। তার কান্না দেখে মিতা বলল, কান্না করলে কিন্তু তোকে বের করে দেবে। আমরা বাবা-মায়ের জন্য কান্না করি না, আর তুই একটা পাখির জন্য কান্না করছিস। আমরা তো এতিম। আমাদের প্রতি কার মায়া-মমতা আছে বল। কারও নেই। রাফিয়া তার কথার কোন জবাব দিল না। তার মন আরও ভীষণ খারাপ হলো। সে ভাবল, এতিমখানায় আর থাকবে না। যদি কেউ তাকে নিয়ে বাসাবাড়িতে কাজ দেয় তাহলেও সেখানে গিয়ে কাজ করবে। তবুও এতিমখানায় আর না। কিন্তু কে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যাবে। রাফিয়া নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল। সে স্বপ্ন দেখছে আজ তার জন্মদিন। তার বাবা-মা এসেছেন। তাদের সঙ্গে জন্মদিনের কেক। রাফিয়া মহাখুশি। ভোরে তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম ভাঙাতে মন খারাপ হলো। আজ যদি আরও কিছু সময় সে ঘুমাতে পারত বাবা-মার সঙ্গে কত কথা বলতে পারত, তাহলে বেশ ভাল সময় কাটত তার। কিন্তু সে সৌভাগ্য হলো না রাফিয়ার। ঘুম ভাঙার পর সে জানালার কাছে গেল। গ্রিল ধরে দাঁড়াল। একটু পর দেখে তার সেই টিয়া পাখিটা ছোট্ট একটা বাচ্চা পাখি নিয়ে হাজির। ছোট্ট পাখিটা একটু একটু উড়তে পারে। রাফিয়া দেখে বুঝতে পারল এতদিন টিয়া পাখিটা কেন আমার কাছে আসেনি। রাফিয়া হাত জোড় করে পাখির কাছে ক্ষমা চাইল। রাফিয়ার সামনে ছোট্ট পাখিটা নাচানাচি শুরু করল। ওর অনেক বন্ধু পাখির নাচ দেখতে এলো। ছোট্ট পাখির নাচন দেখে রাফিয়ার মন ভাল হয়ে গেল। খুশিতে পাখিটাকে ধরতে চাইল সে। কিন্তু ধরতে পারল না। টিয়াপাখি বলল, ‘আজ যাই রাফিয়া।’ রাফিয়া বলল, ‘তাড়া থাকলে যাও। তবে এখন থেকে নিয়মিত আসবে কিন্তু বন্ধু।’ ‘অবশ্যই আসব। তুমি আর মন খারাপ করবে না।’ এই বলে পাখি দুটো উড়ে গেল। রাফিয়ার ইচ্ছা হলো ওদের সঙ্গে উড়ে যেতে। কিন্তু রাফিয়ার যে ডানা নেই। অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×