ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় স্প্যান নামছে আজ

মাওয়া প্রান্তের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৭ মে ২০১৭

মাওয়া প্রান্তের ১৩ ও ১৪ নম্বর পিলারের কাজ শুরু হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ অবশেষে স্প্যান পদ্মায় নামছে আজ শনিবার; তবে পিলারে স্থাপনের জন্য নয়, স্থাপনের আগের মহড়া। উচ্চ ক্ষমতার ভাসমান ক্রেন ১এফ স্প্যানটি পদ্মায় নামিয়ে পিলারের কাছে নিয়ে যাবে। স্প্যানটির ওজন প্রায় ৩ হাজার টন। আর ভাসমান ক্রেনটির ধারণক্ষমতা ৩ হাজার ৬শ’ টন। এর আগেই চীনা বিশাল এই ভাসমান ক্রেন মাওয়ায় আসে। কয়েক মাস ধরে এটি অলস বসেছিল। চীন থেকে আনা ১এফ স্প্যানটিও (সুপার স্ট্রাকচার) ফিটিং করে লোড টেস্ট করে মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কসপে রাখা ছিল। কিন্তু ভাসমান ক্রেন এই বিশাল স্প্যান তুলে নিয়ে স্থাপনে সক্ষম কি-না তার পরীক্ষা করা হবে আজ। এতে সফল হলে আর পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না একে একে বহন করে ওয়ার্কসপ থেকে পিলারের ওপর বসিয়ে দেবে স্প্যানগুলো। এদিকে তিন দিনের সভা শেষে পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেল গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে গত শনিবার ফিরে গেছে। দলটি সরেজমিন সভা করে ড্রইং ও ডিজাইনের নানা সমস্যার সমাধান দিয়ে যায়। তারা সেতুর অগ্রগতি ও গুণগত মান নিয়ে খোঁজখবর করে গুরুত্বপূর্ণ অবজারভেশন দিয়েছে। পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের এই দলের দেশী-বিদেশী সব বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ ১১ জনই সভায় অংশ নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ দলটির নেতৃত্ব দেন বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান দেশের খ্যাতনামা প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এদিকে সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে এখনও ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদন বাকি। দ্রুত এগুলো অনুমোদন দেয়ার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সদ্য অনুমোদন পাওয়া মাওয়া প্রান্তের ১৩ এবং ১৪ নম্বর পিলারে পাইলিং শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই স্টেজ করা হয়েছে পাইল ড্রাইভের জন্য। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৩, ৪ ও ৫ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপন চলছিল জোরেশোরে। তবে হ্যামারের অভাবে পাইল ড্রাইভ মন্থর গতি। জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পাইলের উপরের অংশে এখন ঢালাই চলছে। ইতোমধ্যেই উপরের বেজ ঢালাই হয়ে গেছে। এখন ক্রমশ পিলার দুটি দৃশ্যমান হচ্ছে। ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের অগ্রগতিও ভালও। সবচেয়ে বড় ১৬ পাইলবিশিষ্ট ৪২ নম্বর পিলারের সকল পাইলই কংক্রিটিং হয়ে গেছে। এখন উপরের দিকে পারবে। নদীর মাঝের ৪০টি পিলারের ২৪০টি ও দু’পারে ২টি পিলারের ২৮টিসহ মূল সেতুর মোট ২৬৮টি পাইল স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে নদীতে ৫৯টি এবং তীরের ১৬টি মিলে এখন পর্যন্ত মোট পাইল স্থাপন হয়েছে ১৪ পিলারে ৭৫টি। এছাড়া দেড় কিলোমিটার করে উভয়প্রান্তে তিন কিলোমিটার সংযোগসেতু (ভায়াডাক্ট) জন্যর আরও ৩৬৫টি পাইল হচ্ছে । এর মধ্যে মাওয়া অংশে ১৭২ এবং জাজিরা অংশে ১৯৩টি পাইল রয়েছে। জাজিরা অংশের ১০৪টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। কিন্তু মাওয়া অংশে সংযোগসেতুর কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। শুরু করা যায়নি পিলারের কাজ। মাওয়া প্রান্তে ১ নম্বর পিলার ১২ পাইলবিশিষ্ট। এটির চূড়ান্ত ডিজাইন অনুমোদন না হওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞ প্যানেল ডিজাইনগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী শীঘ্রই এসব ডিজাইনের অনুমোদন হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজও চলছে হরদম। এই কাজের অগ্রগতি ৩০ শতাংশ। এছাড়া পদ্মা সেতুর উজানে মাওয়া পুরনো ঘাট থেকে যশোলদিয়া ও কান্দিপাড়া এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের প্রতিরক্ষা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদী শাসনের কাজের পাশাপাশি তীরে ব্লক বিছানো, সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রায় ৪ শ’ ৩০ কোটি টাকা অর্থায়নে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) মোঃ সারফুল ইসলাম জানান, নদী শাসনের কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়নি। এই অংশের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্ল ঝুঁকিমুক্ত ছাড়াও এলাকার নদী ভাঙ্গন শঙ্কা কেটে গেছে। এতে এলাকাবাসীও খুশি। মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কসপে আসা ৮টি স্প্যানের ৩টি স্প্যান ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ১এফ ছাড়াও ৬এ ও ৬বি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে বসবে ৬এ। ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর পিলারে বসবে ৬বি। ১এফ বসবে মাওয়া প্রান্তের ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে। তবে নানা কারণে এই ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে পাইল ড্রাইভ সবার আগে শুরু করা হলেও এখন পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ৭ নম্বর পিলার এবং পরবর্তীতে শুরু করা ৬ নম্বর পিলারের কাজ দ্রুততার সঙ্গে করার তাগিদ রয়েছে।
×