ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসের জরুরী অবস্থা জারি

মিসরে কপটিক খ্রিস্টানদের ওপর হামলা, নিহত ২৬

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৭ মে ২০১৭

মিসরে কপটিক খ্রিস্টানদের ওপর হামলা, নিহত ২৬

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মিসরে কপটিক খ্রীস্টানদের বহনকারী বাসে একদল মুখোশধারীর বন্দুক হামলায় শিশুসহ অন্তত ২৬ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার বাসগুলো যাত্রীদের নিয়ে একটি চার্চে যাওয়ার পথে রাজধানী কায়রোর ১৫৫ মাইল দক্ষিণে মিনইয়া প্রদেশে এই হামলা হয়। খবরে বলা হয়েছে, তিনটি পিকআপ ট্রাকযোগে হামলাকারীরা কপটিক খ্রীস্টানদের বহনকারী বাসগুলোতে হামলা চালায়। এসব খ্রীস্টান মিনইয়া প্রদেশের সেন্ট স্যামুয়েল গির্জায় যাচ্ছিল। হামলাকারীদের খুঁজতে মিসরের নিরাপত্তাবাহিনী কাজ করছে। দেশটির তল্লাশি চৌকিগুলোতে কড়া নজর রাখা হয়েছে। আর মরুভূমিতে টহল বাড়ানো হয়েছে। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপির। এই হামলার দায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কেউ স্বীকার করেনি। গত কয়েক মাসে মিসরে কপটিক খ্রীস্টানদের ওপর আইএস বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল তান্তা ও আলেকজান্দ্রিয়ায় চার্চ লক্ষ্য করে দুটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪৬ জন নিহত হয়। শুক্রবারের হামলার পর মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি দেশজুড়ে তিন মাসের জরুরী অবস্থা জারি করে বলেছেন, জঙ্গীদের মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে। মিসরের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবারের হামলায় হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। মিনইয়া প্রদেশের গবর্নর ইসাম আল বেদোয়াই বলেছেন, হামলায় স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই হামলার নিন্দা জানিয়ে হতাহতদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন রোমান ক্যাথলিক খ্রীস্টানদের প্রধান গুরু পোপ ফ্রান্সিস। মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ধর্মীয় নেতারা এই হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তায়েব বলেছেন, মিনইয়ার এই হামলা মুসলিম ও খ্রীস্টানদের জন্য মেনে নেয়া কঠিন। মূলত মিসরকে অস্থিতিশীল করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে। কপটিক অর্থডক্স চার্চ মিসরে খ্রীস্টানদের প্রধান গির্জা। কপটিকরা বেশিরভাগ মিসরের অধিবাসী হলেও দেশের বাইরে গির্জার প্রায় ১০ লাখ সদস্য রয়েছে। খ্রিস্টীয় ৫০ সালে সম্রাট নিরোর শাসনামলে এ্যাপোস্টল মার্ক মিসর সফরে এসে আলেকজান্দ্রিয়ায় ‘চার্চ অব আলেকজান্দ্রিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই কপটিক ধারার যাত্রা শুরু বলে অনুসারীদের বিশ্বাস। কপটিক গির্জার নিজস্ব গির্জাপিতা বা পোপ রয়েছে, যারা সেইন্ট মার্কের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হন। পবিত্র ভূমির বাইরে এরাই সবচেয়ে প্রাচীন খ্রীস্টান গোষ্ঠী। যিশুখ্রিস্টের মানবিক ও ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে ৪৫১ খ্রিস্টাব্দে কাউন্সিল অব চ্যালসেডনে অন্য খ্রিস্টীয় মূল্যবোধের সঙ্গে এই চার্চের বিচ্ছেদ ঘটে। রোমান সাম্রাজ্যে এই চার্চকেন্দ্রিক খ্রীস্টানরা নিধনের শিকার হয়েছিল। মিসর মুসলিম দেশ হওয়ার পরও তা চালু থাকে, যা এখনও চলছে বলে অনেকে মনে করে।
×