ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের সঙ্গে জাইকা’র সহযোগিতা কখনো বন্ধ হবে না : জাইকা প্রধান

প্রকাশিত: ০২:৫২, ২৬ মে ২০১৭

বাংলাদেশের সঙ্গে জাইকা’র সহযোগিতা কখনো বন্ধ হবে না : জাইকা প্রধান

অনলাইন ডেস্ক ॥ জাপান আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা (জাইকা) বাংলাদেশে তাদের উন্নয়ন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়টি পুনরায় আশ্বস্ত করে বলেছে, তারা কখনো ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করবে না। জাইকার প্রেসিডেন্ট ড. শিনিচি কিতাওকা বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে এবং জাইকা কখনোই ঢাকার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করবে না।’ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফকালে জাইকার প্রেসিডেন্টকে উদ্ধৃত করে এ কথা বলেন। ড. শিনিচি কিতাওকা বৈঠকে গতবছর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার পর বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হলি আর্টিজান বেকারীতে জঙ্গি হামলার পর আপনার সন্ত্রাস ও জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’ জাইকা প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে সামাজিক সমস্যা নির্মূলে সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, জনগণের দৃষ্টিশক্তি উপেক্ষা করা সহজ নয় এবং আপনার এ পদক্ষেপটি যথার্থ হয়েছে। জাইকা প্রেসিডেন্ট এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখে আমি অভিভূত। আপনি অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজকের এ অবস্থানে এসেছেন এবং আমরাও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পেরে খুবই আনন্দিত।’ জাইকা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনের প্রশংসা করে বলেন, আমরা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিক্ষা খাতে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার মুসলমানরা জাপানের সঙ্গে দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করে আসছে এবং তারা কোথাও কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি করছে না। প্রধানমন্ত্রী গতবছর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৭ জাপানী নাগরিকের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেন। সন্ত্রাসবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’ শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবিরোধী প্রচারের অংশ হিসেবে দেশের সকল বিভাগের সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স করে তাদের মধ্যে এই সমাজিক সমস্যা বিরোধী সচেতনতা সৃষ্টিতেও তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এই প্রচারের ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এই সামাজিক ক্ষত দু’টি সারাতে এর অর্থের উৎস এবং অস্ত্রের জোগান বন্ধের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোন দেশ নেই, কোন ধর্ম নেই, একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় সে কেবলই একজন সন্ত্রাসী।’ দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানে তাঁর সরকার সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ধর্ম যার যার হলেও উৎসব সবার। এ দেশে সকল ধর্ম মতের মানুষ নানা ধর্মীয় উৎসব এক সঙ্গে পালন করে থাকে। ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাপানের জন্য তাঁর হৃদয়ে সবসময়ই একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমুলক পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্যই সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যের পরিবর্তন এবং তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোর সংস্থান করা। সরকারের সামষ্টিক অর্থনীতির সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গেল অর্থবছরে আমাদের জিডিপি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। এ সময় জাইকার প্রেসিডেন্ট ঢাকার রাজপথে যানজটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সামর্থ্যও বাড়ছে এবং তারা বেশি করে গাড়ি ক্রয় করছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে এবং জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট জাইকা প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন জাইকা প্রেসিডেন্ট ড. শিনিচি কিতাওকা। বাংলাদেশে জাইকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনায় দলটি তিন দিনের সফরে বুধবার বাংলাদেশে এসেছে। সূত্র:বাসস
×