ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫০ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় ২০ হাজার ৫০৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ২৬ মে ২০১৭

৫০ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় ২০ হাজার ৫০৮ জনের প্রাণহানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভ্যন্তরীণ নৌ দুর্ঘটনায় গত ৫০ বছরে ২০ হাজার ৫০৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অস্থাবর সম্পদ ধ্বংস হয়েছে ৩ হাজার ৪১৭ কোটি ২০ লাখ টাকার। ১৯৬৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সারা দেশে যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে ২ হাজার ৫৭২টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর পুরান পল্টনের মুক্তি ভবনে এক আলোচনা সভায় নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর) এই তথ্য প্রকাশ করে। ‘জাতীয় নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০১৭’ ও আসন্ন ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর’ উপলক্ষে ‘৫০ বছরের নৌ দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান’ প্রকাশ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে। সংগঠনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী, পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল আলম। মনজুরুল আহসান খান বলেন, পরিবহন খাত মাফিয়াচক্রের কবলে পড়ে গেছে। নিরাপদ নৌপথ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা অবৈধ অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগীতা। নৌ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সীমাহীন দুর্নীতির কারণে গঠনমূলক ও প্রত্যাশিত উন্নয়ন হচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনাও কমছে না। এর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষেকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। ড. মীর তারেক আলী বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনার হার গত দুই বছরে কমলেও নিরাপদ আধুনিক নৌ পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হলে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। পণ্যবাহী নৌযান দুর্ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে, সেগুলোর অনেক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। এ ক্ষেত্রে বহুমুখি সমস্যা রয়ে গেছে। তাঁরা বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টারশিপ-ড্রাইভারশিপ পরীক্ষায় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে অযোগ্যরা টাকার বিনিময় সনদ নিয়ে নৌযান চালাবে এবং অহরহ দুর্ঘটনা ঘটবে। নৌযানের ফিটনেস ও নিবন্ধন প্রদানেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আনেন তিনি। তবে সংকট নিরসনে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি ও সংস্থাটিকে গতিশীল করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এই নৌ পরিবহন বিশেষজ্ঞ। প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক বলেন, নদী খনন ও নৌপথের পলি অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএর বিরুদ্ধে পুকুর চুরির অভিযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণে নদী খননে পর্যাপ্ত অর্থবরাদ্দ পেয়ে বিআইডব্লিউটিএর কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী লাগামহীন দুর্নীতিতে মেতে উঠেছেন। নদীবন্দরগুলোতে টোল আদায়সহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, নদীর তীরভূমি অবৈধভাবে ইজারা প্রদান ও ইজারা ছাড়াই ভোগদখলের সুযোগ দেয়া এবং সারা দেশে অসংখ্য অবৈধ নৌযান চলাচলের জন্য বিআইডব্লিউটিএ-কে দায়ী করেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক এই মহাপরিচালক। সাংবাদিক নিখিল ভদ্র’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সিটিজেন্স রাইট্স মুভমেন্টের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. এনায়েতুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিডার্স- এর কর্মকর্তা মোহন কুমার ম-ল, জাতীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল ও সঞ্জিব বিশ্বাস, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, যাত্রী অধিকার পরিষদের সভাপতি তুসার রেহমান, নদী রক্ষা শপথের (নরশ) আহ্বায়ক জসি সিকদার, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক পরিচালক এমদাদুল হক বাদশা পরিবেশবাদী সংগঠন পিস- এর নির্বাহী পরিচালক ইফমা হুসেইন প্রমুখ। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে ১ হাজার ৪৫টি এবং ২০০৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে ১ হাজার ৫২৭টি নৌ দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ৩৮ বছরে ১৫ হাজার ৬৮ জনের ও শেষ ১২ বছরে ৫ হাজার ৪৪০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ১৯৬৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৪ কোটি ২০ লাখ এবং ২০০৫-২০১৬ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৭৩ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। অর্ধশত বছরে দুর্ঘটনাকবলিত নৌযান গুলোর মধ্যে ৯০১টি উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। বিপুলসংখ্যক নৌযান নিমজ্জ্বিত থাকায় সেসব স্থানে অতিমাত্রায় পলি পড়ছে। ফলে অনেক নৌপথে নিয়মিত নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে; যা নৌ দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
×