ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৬ মে ২০১৭

কবিতা

ভালোবাসাও ভ্রমণে যায় রাহমান ওয়াহিদ মৃত্যুও কথা বলে। তুমি বেদনার্ত নূপুর হলে আকাশলীনা বেহুলা হলে শুনতে। বৃষ্টিও বোবা হয়। তুমি মেঘের ভাঙা টুকরো হলে নির্লিপ্ত পেখম হলে দেখতে। কাঠ ঠোকরাও বৃক্ষ হয়। তুমি রাজহংসি হৃদয় হলে নীল পাহাড়ী মৌন হলে বুঝতে। দূরত্বও দৃষ্টি কাড়ে। তুমি গন্ধ ছোঁয়া অন্ধ হলে কষ্ট ধোয়া পাতকী হলে দেখতে। ভালোবাসাও ভ্রমণে যায়। তুমি নোনতা জলে হিরণ হলে বালু পদ্মা শিরিন হলে মানতে। ** অদ্ভুত সব মানজুর মুহাম্মদ অদ্ভুত সব খেয়াল, বেঁচে থাকার বাহানা বাঁচিয়ে রাখেÑ সকাল হতে সন্ধ্যা, গ্রীষ্ম হতে বসন্ত, অদ্ভুত সব মায়া, কুহেলিকা সময় বাজায় করুণ সুরে রাত দিবসে অনন্ত পরম আবেশে দেয়াল আঁকড়ে থাকে মানি প্লান্ট, জীবন ঝুলে থাকে সবুজের নিঃশ্বাসে অদ্ভুত সব আয়োজন অভিনয় প্রাণ আদৌ আছে কিনা, দ্বন্দ্ব কড়া নাড়ে বিশ্বাসে। ** চিঠি সোহেল মাজহার চিঠি-২ রাতের নৈঃশব্দ থেকে ডাক হরকরা তার পথ খুঁজে নেয় অবশিষ্ট কান্না জমে যে কচুপাতা জলের মতো পবিত্র ও মৃদু স্পর্শের ভারে নুয়ে পড়ে পৃথিবীর অগণন পথে... তবু ডাক হরকরা সরাইখানার মাটির পাত্রে শেষ চুমুক দিয়ে গেরিলার মতো চালা চালি করে তোমার আমার গোপন দীর্ঘশ্বাস... তোমাকে কেন এসব কথা বলছি প্রিয়া আমরা শুধু ফেসবুকের ফেক আইডিতে আড়াল করি ইমেজ লাবণ্য আর দ্যাখো একটা রঙিন মাছি কেমন উড়ে যায় স্তনের ঘ্রাণ শুষে নিয়ে তাকে প্রজাপতি ভেবে ভুল কর না যেন... চিঠিতে তবু কান্নার কিছু রেশ ছিল বহুকাল পর তার অদৃশ্য দাগ গড়িয়ে যেত ধীরলয়ে জলের চিনচিনে রেখা ** চিঠি-৩ হয়তো প্যাপিরাস গাছের জন্মের আগে জোছনায় কলাপাতা নড়েচড়ে ওঠার আগে মধ্যবয়সী লোকটি পাড়ার বিধবা নারীর ঘর থেকে গোপন অভিসারে ছায়ার বিলীন হওয়ার আগে বাঁশের কঞ্চি থেকে কিছু রক্ত মাটিতে চুইয়ে পড়ার আগে, তালপত্রলিপি ছিল। দূর দেশে বাইসনের পিঠে সওয়ারী হলে কাঠ কয়লার যে শিকার ও মিথুন ভঙ্গির চিত্র দৃশ্যের ভেতর দিয়ে রক্ত কণিকার প্রবাহে চোখ ও ঠোঁটের শিরায় যে অর্থ বয়ে যেত শরীরে প্রবাহিত বিদ্যুত তরঙ্গ, শিমের কালি তাও এক অর্থে চিঠি ছিল যা আজও আদৃত। সোহেল মাজহার একগুচ্ছ হাইকু শোষকের থাবা সুজন হাজারী ধনীরা ধনী গরীব মারা শনি যমের খনি। শোষণ ক্রিয়া মোক্ষম হাতিয়ার ঠকের ফাঁদ। শ্রেণী বুর্জোয়া পুঁজির ভোজবাজি ভোক্তারা সাক্ষী। অবৈধ অর্থে গড়ে তোলে পাহাড় দুর্নীতিবাজ। কর বকেয়া ভাল নয় কাজ মাথায় বাজ। শোষিত শ্রেণী জীবনের সে ঘানি বলদে টানি। করের বোঝা ফাঁকি দেয় এলিট তারা সলিট। নীতি আউরে শাসক ছাড়ে বোল বাজাও ঢোল। মুনাফা লুটো বর্গীরা দেয় হানা ভাড়ার ফুটো। দুনিয়া জোড়া ঠকের কারবার রাজ্য উজাড়। ** বসন্ত বচন সাদিক ইসলাম চাঁদটা উঠেছে আজ চৈত্র মাসে রাতে কোথায় যেন মিল- তোমার চাঁদের সাথে; সবুজ বনের প্রাণে একাকী কোকিল গায়- শীতের মরণ ডাক; কেয়া ফুল পেতে চায়- জল ঝরা শিশির নিশীথ আনন্দে মত্ত; বাতাস বাজায় বাঁশি ফুলের বনে হাসি- শীততো সর্বনাশী; পৃথিবীর বুকে আরেক পৃথিবী খেলা করে অশরীরী অপ্সরী তোমরা বলো বসন্ত; টইটম্বুর মধু নিয়ে ফুল ভ্রমরের আনাগোনা খুব সকালকে চুমু খায় উপচে পড়া মধু; ডানা মেলে প্রথম করবী উড়ে যেতে চায় আকাশে- বসন্তের প্রথম মুখ; কুমারী পাতায় খেলা করে বাতাস জড়িয়ে ধরে কচি ফুল- কোনো কুমারীই সুরক্ষিত নয়; বাতাসে নেশার গন্ধ - চাঁদও পান করে উন্মত্ত শিশিরের ঠোঁট লাল; নগ্ন পুষ্প - শিশিরের সাথে খেলা করে লজ্জায় আড়ষ্ট ঘাসের বিছানা; বসন্ত কি নারীর মতন মাত্র দু’মাস যৌবন বৈশাখী পুরুষে রসহীন? নারীকে দেখেছিলো ফালগুন তারপর তার ডাল থেকে টুপটাপ পড়ে ফুল; বাহিরে ঝরবে ফুলের বৃষ্টি আজ বিদায় শীত বিদায় এসেছে ঋতুরাজ; আমার প্রেমিকা দিয়ে দিলো আজ বাদ আমি চেয়ে দেখি চৈত্র মাসের চাঁদ; চৈত্র ডালে আগুন দেখেছি তার চেয়ে আগুন এই মনেতে বেশি; মানুষ মাতে বসন্তকাল এলে মানুষ দিলো তাকেই দূরে ঠেলে; শুধু ফুলে কি বসন্তকাল আসে রঙ খুঁজে পাই দক্ষিণ বাতাসে; কোকিল ডাকেনি এবার বসন্তে কাকের ডাক কর্কশ লাগেনি; রাত কি ঘুমায় রাত জেগে থাকে এখন ফাগুন মাস- জেগে জেগে রাত পান করে ফাগুনের সুবাস; কতদিন কতদিন দেখিনা তাঁকে এই বসন্ত - একে কি ভালো লাগে? ** এক পশলা বৃষ্টিতে জোবয়দা আক্তার চৌধুরী এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজছে আমার মন। চাইছি আমি তোমার সাথে ভিজছে সারাক্ষণ। টাপুর টুপুর ছন্দে তালে নাচছে আমার মন। ভেঁজা ঘাঁসে নুপুর পায়ে তুলবো আলোড়ন। বৃষ্টি ভেঁজা মিষ্টি দুপুর টিনের চালে বাজছে ঝুমুর রিনিঝিনি ছন্দ যেনও পায়ে আমার বাজছে ঘুঙ্গুর। বৃষ্টি ভেঁজা সন্ধ্যা ভিজছে আমার মন। সুর সারথী গান ধরেছে ভুলাবে এই ভূবন।
×