ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

বর্ণমালার ঘরসংসার

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৬ মে ২০১৭

বর্ণমালার ঘরসংসার

র. আমিনের লেখা বর্ণমালার ‘ঘরসংসার’ বইটি মুক্তি পায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, ২০১৭তে। গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ছায়াবীথি। প্রচ্ছদ অঙ্কনে সাদ্দাম হোসেন তানভীর। মাতৃভাষা মানেই বর্ণমালার নিবিড় সংযোগ আর সুসংবদ্ধ উপস্থাপনা। কবির গ্রন্থটি বাংলার প্রতিটি বর্ণমালার ক্রমানুসারে বর্ণ দ্বারা রচিত কাব্যিক অনুভব। অ দিয়ে শুরু করে শেষ অবধি হ দ্বারা পরিসমাপ্তি। ‘অ’ দিয়ে লেখা কবিতাটির প্রতিটি লাইনের অদ্যাক্ষর অ দিয়ে শুরু করা হয় যা কবির প্রতিভাস্ফুরণের এক অনুপম দীপ্তি। যা প্রতিটি কবিতার বেলায় প্রযোজ্য। শব্দের অর্থ অনুভবের মাত্রায় কবিতাগুলো ভিন্ন এক আমেজ পাঠকের সামনে উপস্থাপন করে। বর্ণমালার অক্ষর সংযোজনে শব্দচয়নের যে শৈল্পিক সুষমা তা কবির প্রকাশ ভাবনার এক বলিষ্ঠ প্রত্যয়। প্রতিটি বর্ণকে নিয়ে ভিন্নমাত্রার নান্দনিক পঙ্ক্তি কবিতার ছন্দোবদ্ধ আবহকে পাঠকের কাছে এক অন্য রকম রূপমাধুর্য নিয়ে আসে। বাংলার বর্ণমালার প্রতি কবির এই অনন্য নিবিষ্টতায় অবাক হওয়ার মতো কিছু না থাকলেও পাঠকচিত্ত নতুন এক স্রোতে আন্দোলিত হয়। কবিতাগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় বাংলার চিরায়ত বর্ণমালার সমৃদ্ধ অবয়বের অনির্বাণ শিখা। যে আলোকিত শিখা মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ করে, ভাষার প্রতি দরদ জন্মায়। সর্বোপরি এই বর্ণমালার সমন্বয়ে সুসংবদ্ধ শব্দমালার নিরন্তর গতি পাওয়া তেজোদ্দীপ্ত বাক্যের সমাহার এগিয়ে চলার পথকে নিষ্কণ্টক করে, নির্বিঘœ করে। আর এরই প্রমাণ দিয়েছে বাঙালী বর্ণমালার সুরক্ষার জীবনবাজি রেখে। বর্ণমালার অপূর্ব সমাহারে কবিতাগুচ্ছ সাজানোর যে অভিনব এবং চমৎকার শৈল্পিক সম্ভার কবিকে প্রাণিত করে তা যেমন মাতৃভাষার প্রতি দায়বদ্ধতা একইভাবে কাব্যিক জগতেও এর সুষ্ঠু সংযোজন সৃষ্টিশীলতার এই আঙিনাকে সমৃদ্ধ করে। ভাষার মাসে এমন একটি কবিতার মিছিল পাঠককে উপহার দেয়ার জন্য কবিকে সশ্রদ্ধ অভিবাদন। পাঠক সমাজে গ্রন্থটি আদৃত হবে এই আশা করাই যায়। বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি। খুদে আইনস্টাইন ‘তোমার হাতে আলোর মশাল’ ক্ষুদে আইনস্টাইন সুবর্ণ আইজ্যাক’ বইটি লিখেছেন জাহিদ জীবন। প্রচ্ছদ এঁকেছেন লেখক নিজেই। প্রকাশনার দায়িত্বে ‘শিল্পৈষী। বইটি শুরু করা হয় এক বিস্ময়কর প্রতিভাদীপ্ত শিশুর জন্মমুহূর্তের প্রতীক্ষিত প্রহর গোনার মধ্য দিয়ে। বাবা প্রফেসর রশিদুল বারী বড় ছেলে অপূর্বকে নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন আর এক সন্তান সুবর্ণের পৃথিবীর আলো দেখার শুভ মুহূর্তটির। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল নিউইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালে মা শাহেদা বারীর কোল আলো করে জন্ম নিল এক আলোকিত শিশু। যার নাম রাখা হলো সুবর্ণ পথিক বারী। লেখকের পরিচ্ছন্ন ভাবসম্পদে তৈরি বইটি একেবারে বাস্তবের সমৃদ্ধ ভূমিতে বেড়ে ওঠা এক অসাধারণ গাণিতিক মেধা এবং বিজ্ঞান সাধকের মাত্র ৬ মাস বয়সের অভূতপূর্ব কাহিনী সম্ভার। গণিতের শিক্ষক বাবা লক্ষ্য করেন তার শিশু পুত্রটি পিতাকে অনুসরণ করে নোট বইয়ে গণিত এবং বিজ্ঞানের কঠিন সূত্রগুলো চর্চা করে যাচ্ছে। বিস্মিত অধ্যাপক নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। সেই শুরুÑ তারপর কিভাবে শিশুটির বিজ্ঞান ও গণিত সাধনার অব্যাহত অগ্রযাত্রা সূর্যের কিরণের মতো উদ্ভাসিত হতে লাগল তা যেমন বিস্ময়কর একইভাবে প্রতিভাদীপ্ত ক্ষমতার এক অভিনব প্রকাশ। শিশু সুবর্ণের এই অসাধারণ বৈজ্ঞানিক শক্তির দক্ষতা বুঝতে অধ্যাপক বাবার সময় লাগেনি। গ্রন্থের রূপকার আকর্ষণীয় বৈভবে শিশু সুবর্ণের মেধা ও মননের যে সুস্পষ্ট রচনাশৈল পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন সেটা পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট করে রাখে। মাত্র ২ বছর বয়সে শিশু সুবর্ণের অপরিমেয় গাণিতিক পা-িত্য এবং রসায়নের নানা জটিল উপাদানের সুষ্ঠু সমন্বয় পিতামাতাসহ তাবত বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। সাড়া জাগানো এই শিশুটিকে নিয়ে জ্ঞানীগুণীদের মধ্যেও তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। প-িত মহল থেকে সুবর্ণের সাক্ষাতকারেরও প্রস্তাব আসে। আনন্দিত এবং গর্বিত পিতা সব ধরনের সুযোগ গ্রহণ করে শিশু সুবর্ণকে বিশ্বের দরবারে হাজির করেন। এমনকি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সুবর্ণ চিঠি লিখে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে তুলনা করা হলো বিশ্ব শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের সঙ্গে। নিউটনেরও নাকি প্রতিভাস্ফুরণ ঘটেছিল অতি বাল্যকাল থেকে। পিতার একজন নিকটতম শুভাকাক্সক্ষীর অনুরোধে সুবর্ণের নামের সঙ্গে আইজ্যাক সংযোজন করা হয়। সুবর্ণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দক্ষতা সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক ভাবনা নিয়ে জাহিদ জীবন যে গল্পকথা পাঠকদের উপহার দিলেন তা সত্যিই উপাদেয় এবং প্রতিভার চমৎকারিত্বে এক অভিনব জীবন ঘনিষ্ঠ আখ্যান। বইটি পাঠককুলকে যে জায়গায় নিয়ে যাবে সেই মুগ্ধতার বিষয়টি আসলে উপভোগ বইটির সর্বাঙ্গীন সফলতা আর শিশু সুবর্ণের একনিষ্ঠ বিজ্ঞান সাধনার সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি।
×