ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কুরআন নাযিলের মাস রমাদান

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৬ মে ২০১৭

প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ কুরআন নাযিলের মাস রমাদান

কুরআন মাজীদ আল্লাহ্র কালাম। এই কালাম শাশ্বত এবং পবিত্র। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : বাল হুয়া কুরআনুম মাজীদ ফী লাওহিম মাহফুজ- বস্তুত এ সম্মানিত কুরআন সংরক্ষিত ফলকে (সূরা বুরুজ : ২১-২২)। মানব জাতির হিদায়াতের জন্য লাওহে মাহফুজ থেকে এই কিতাব মক্কা মুকাররমায় অবস্থিত হেরা পর্বত গুহায় মুরাকাবার জন্য অবস্থানরত হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকটে নাযিল করার জন্য, গোটা কুরআন মাজীদ সপ্ত আসমানের উপরে শেষ প্রান্তে অবস্থিত সিদরাতুল মুনতাহা বা সীমান্ত কুলবৃক্ষ মকামে বার্তাবাহক ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল আলায়হিস সালামের নিকট দেয়া হয় এবং তা নিয়ে তিনি দ্রুত প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে স্বর্ণপাত ঝলমল পৃষ্ঠা খুলে ধরে বলেন : পড়ুন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন : আমি তো পড়তে পারিনে। এভাবে বাক্য বিনিময় করেন এবং প্রতিবারে হযরত জিবরাঈল আলায়হিস সালাম তাকে বুকে চেপে ধরেন। তারপর তিনি সূরা ‘আলাকের প্রথম পাঁচখানি আয়াতে কারীমা আত্মস্থ করেন। ওই পঁাঁচখানি আয়াতে কারীমায় ইরশাদ হয়েছে : ইকরা বিইসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক, খালাকাল ইনসানা ‘মিন আলাক, ইকরা ওয়া রাব্বুকাল আকরামাল্লাযী আল্লামা বিল কালাম আল্লামাল ইনসানা মালাম ইয়ালাম।’ পাঠ কর তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক হতে, পাঠ কর আর তোমার রব মহা মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না (সূরা আলাক : আয়াত ১-৫)। এই আয়াতে কারীমা নাযিলের মাধ্যমে কুরআন নাযিলের সূচনা হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমাদান মাসের শেষ দশকের এবং বেজোড় রাতে। অধিকাংশের মত হচ্ছে সেটা রমাদানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ছিল কুরআন নাযিলের সেই রাত, আর সেই কারণেই রমাদান মাসকে বলা হয় কুরআন নাযিলের মাস। এই মাস আরবী বর্ষ গণনার নবম মাস হলেও কুরআন নাযিলের কারণে একে সর্বশ্রেষ্ঠ মাসের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। একে বরকতের মাস তথা মুবারক মাস বলা হয়েছে। এই মাসের প্রতিটি ক্ষণ ও মুহূর্তকে প্রাচুর্যমণ্ডিত করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে এই মাসের উল্লেখ করে এই মাসের অতিশয় গুরুত্বের কারণ এবং এই মাসে কী করা প্রধান কর্তব্য তা বর্ণিত আছে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু দ্বিতীয় হিজরীর মধ্য শাবান মুতাবিক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে সিয়াম বিধান সংবলিত বিধিবিধান দিয়ে এবং সেই সিয়াম কখন পালন করতে হবে তা নির্দেশ করে ইরশাদ করেন : শাহ্রু রমাদানাল্লাযী উনযিলা ফী হিল কুরআন হুদাল লিন নাসি ওয়া বায়নাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরকান, ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহ্রা ফালইয়া সুম্হুÑ রমাদান মাস যাতে নাযিল হয়েছে মানুষের জন্য সৎপথের দিশারী, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী আল কুরআন। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস প্রত্যক্ষ করবে তারা যেন তাতে সিয়াম পালন করে (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)। রমাদান মাসের যে রাতটিতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ থেকে নাযিল করা হয় পৃথিবীতে নাযিল করার জন্য যে রাতে পৃথিবীতে নাযিলের সূত্রপাত হয় সেই রাতকে আল্লাহ জাল্লা শানুহু লায়লাতুল কদর নামে অভিহিত করে ইরশাদ করেন : ইন্না আন্যালনাহু ফি লাইলাতিল কাদরি ওয়ামা আদরাকা মা লাইলাতুল কাদরি, লায়তুল কাদরি খায়রুম মিন আলফি শাহ্র, তানায্যলুল মালায়ুকাতু ওয়ার রূহু ফীহা বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমরি, সালামুন, হিইয়া হাত্তা মাতলাইল ফাজর। নিশ্চয়ই আমি তা নাযিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। (হে রসুল)! আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রজনী কী? এই মহিমান্বিত রজনী হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেয়। এতে নাযিল হয় ফেরেশতাগণ ও রুহ প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি যতক্ষণ না ঊষার আবির্ভাব হয় (সূরা কদর)। সেই যে কদরের রাতে কুরআন নাযিল হওয়া শুরু হলো অংশ অংশ করে তা চলতে থাকে দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে। কখনও একখানি সম্পূর্ণ সূরা কখনও এক বা একাধিক আয়াতে কারীমা আবার কখনও একখানি আয়াতে কারীমার একটি অংশ নাযিল হতে থাকে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে যাকে বলা হয় শানে নুযুল। সর্বপ্রথম নাযিল হয় সূরা আলাকের শুরুর পাঁচখানি আয়াতে কারীমা এবং সর্বশেষ সূরা মায়িদার তিন নম্বর আয়াতে কারীমার অংশ বিশেষ। এটা নাযিল হয় দশম হিজরী মুতাবিক ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে দুপুর বেলায় হজ্বের খুতবা দেয়ার পর পরই। সেই হজ্ব বিদায় হজ নামে বিশেষভাবে পরিচিত। কেননা এই হজ্বই ছিল প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মুবারক জীবনের প্রথম এবং শেষ হজ্ব। একে হজ্জাতুল বিদা; হজ্জাতুল ইসলাম, হজ্জাতুল বালাগ প্রভৃতি বলা হয়। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের সেই দীর্ঘ খুতবা বা ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন : হে মানুষ, আমার হয়ত তোমাদের সঙ্গে আর দেখা হবে না। আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি আল্লাহর কিতাব এবং তার রসূলের সুন্নাহ। তোমরা যদি তা দৃঢ়তার সঙ্গে অবলম্বন কর তাহলে পথভ্রষ্ট হবে না (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)। সেই দীর্ঘ ভাষণ শেষে তিনি হাত নেড়ে সবাইকে আলবিদা জানান। এর পরই নাযিল হয় ওই আয়াতে কারীমার অংশবিশেষ। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন ‘আল ইয়াওমা আক্্মালতু লাকুম দীনাকুম ওয়া আত্্মাম্্তু ‘আলায়কুম নিমাতি ওয়া রাদীতু লাকুমুল ইসলামা দীনাÑ আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাঙ্গ করলাম তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্যই তোমাদের দীন ইসলামকে সানন্দ অনুমোদন দান করলাম (সূরা মায়িদা : আয়াত ৩)। গোটা কুরআন মাজীদ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট নাযিল হয় প্রায় ২৩ বছর ধরে। কেন কুরআন মাজীদ এত বছর ধরে অংশ অংশ করে নাযিল হলো সে সম্পর্কে আল্লাহ জাল্লা শানুহু হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন : আমি কুরআন নাযিল করেছি খণ্ড খণ্ড ভাবে, যাতে আপনি তা মানুষের নিকট পাঠ করতে পারেন ক্রমে ক্রমে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১০৬)। ৬১০ খ্রিস্টাব্দের রমাদান মাসের কদরের রাতে সূরা আলাকের পাঁচখানি আয়াতে কারীমা নাযিল হওয়ার পর প্রায় তিন বছর আর কোন ওহী নাযিল না হওয়াতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে থাকেন এবং ওহী নাযিলের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। তারপর দ্বিতীয় ওহী নাযিল হলো। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠুন। সতর্কবাণী প্রচার করুন এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখুন অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকুন (সূরা মুদ্দাছছির : আয়াত ১-৫)। এরপর থেকে নিয়মিত ওহী নাযিল শুরু হয় পর্যায়ক্রমে নানা প্রেক্ষিতে। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশে মক্কা মুকাররমা থেকে মদিনা মনওয়ারায় হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দের রবিউল আউয়াল মাসে। হিজরতের পূর্ববর্তী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামে মক্কী জীবনে যে সকল ওহী নাযিল হয় তা মক্কী সূরা নামে পরিচিত হয়। আর হিজরতের পরে তার মাদানী জীবনে নাযিল হওয়া ওহীসমূহ মাদানী সূরা নামে পরিচিত হয়। মক্কী সূরার সংখ্যা ৮৬ আর মাদানী সূরার সংখ্যা ২৮। এই মোট ১১৪ খানি সূরা কুরআন মাজীদে রয়েছে। ৩০ পারা সংবলিত কুরআন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং অতি পবিত্র গ্রন্থ। সমগ্র কুরআন মাজীদে সাতাত্তর হাজার চার শ’ সাঁইত্রিশটি শব্দ এবং তিন লাখ তেইশ হাজার ছয় শ’ একাত্তরটি হরফ রয়েছে। গণনার হেরফেরের কারণে এর আয়াত সংখ্যা নিয়ে একাধিক মত রয়েছে, তবে অধিকাংশের মতে এর আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬। কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করাকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সর্বোত্তম নফল ইবাদত হিসেবে অভিহিত করেছেন। হাদিস শরীফে আছে : কেউ যদি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পাঠ করে তাহলে সে নেকি পায় আর সে নেকির পরিমাণ হচ্ছে দশ গুণ (তিরমিযী শরীফ)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওহী নাযিল হলে তা নির্দিষ্ট সাহাবিদের দ্বারা ক্রম অনুযায়ী লিপিবদ্ধ করাতেন এবং হাফিজ সাহাবিগণ তার কাছ থেকে শ্রবণ করে হিফজ করতেন। যে কারণে কুরআন মাজীদে একটি হরফেরও হেরফের হয়নি এবং কোন অবস্থাতেই তার হেরফের হতে পারবে না। বিশ্বে এই একখানি কিতাবই আছে যা লাখ লাখ মানুষ মুখস্থ করে রেখেছে। এই বাংলাদেশেই বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার হাফেজ রয়েছে। প্রিয় নবী (স)-এর সময় কয়েক হাজার হাফেজ সাহাবি ছিলেন। প্রিয় নবী (স) যাদের দ্বারা ওহী লিপিবদ্ধ করাতেন তাদের সংখ্যা ৪০। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : আমিই কুরআন নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমি এর হিফাজতকারী (সূরা হিজর)। আরও ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই এ এক মহিমাময় গ্রন্থ, কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না। (সূরা হা-মীম আস্্ সাজ্্দা : আয়াত ৪১-৪২), এ সেই কিতাব যাতে কোন সন্দেহ নেই। (সূরা বাকারা আয়াত-২)। আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু এরশাদ করেন : এই কিতাব আমি নাযিল করেছি যা কল্যাণময়। সুতরাং এর অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর। (সূরা আন’আম : আয়াত ১৫৫)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে এবং তদনুসারে আমল করে কিয়ামতের দিন তার পিতা-মাতার মাথায় নূরের টুপি পরিধান করানো হবে। (আবু দাউদ শরীফ)। কুরআন মাজীদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আয়াতই রয়েছে প্রায় ৮৫০ খানি। সৃষ্টিজগতের তাবত রহস্য এতে বিধৃত হয়েছে। এমনকি বর্তমানকাল পর্যন্ত বিজ্ঞান যা কিছু আবিষ্কার করেছে তার নিদর্শন কুরআন মাজীদে রয়েছে, এমন অনেক নিদর্শন কুরআন মাজীদে রয়েছে, যা বিজ্ঞান এখনও আবিষ্কার করতে পারেনি। কুরআন মাজীদ সত্য পথের দিশা দেয়, তওহীদ রিসালত, রবুবিয়ত ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত উল্লেখ এতে রয়েছে। রয়েছে মানবিক মূল্যবোধের কথা, অসংখ্য উপদেশ, সুখী-সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলবার তাকীদ। এ ছাড়াও রয়েছে বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, সৌরজগত, বিশ্বজগত সৃষ্টি রহস্যের কথা, মানব সভ্যতা, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু জগত, অর্থনীতি, জীবনের এপার ওপার, আখিরাত, হাশর-নশর প্রভৃতির সঠিক বিবরণ, ভূতত্ত্ব, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি জ্ঞানরাজ্যর তাবত বিষয়ের কথা। কুরআন মাজীদ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : কত মহান তিনি (আল্লাহ্্) যিনি তার বান্দার প্রতি ফুরকান নাযিল করেছেন যাতে তিনি (রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারেন। (সূরা ফুরকান : আয়াত ১)। এখানে কুরআন মাজীদকে ফুরকান বলা হয়েছে যার অর্থ সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (স) সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ
×