ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আবারো গাজীপুরে পোশাক কারখানার চার শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য ॥ কারখানা ছুটি

প্রকাশিত: ০২:০২, ২৫ মে ২০১৭

আবারো গাজীপুরে পোশাক কারখানার চার শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ্য ॥ কারখানা ছুটি

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে প্রচন্ড তাপদাহে কোনাবাড়ির কাশিমপুর শিল্প এলাকার অন্ততঃ ১০টি পোশাক কারখানার চার শতাধিক শ্রমিক বৃহষ্পতিবারেও অসুস্থ্য হয়েছে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার অধিকাংশ কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার এ পরিস্থিতির কারণে ওই এলাকার সকল পোশাক কারখানার উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পোশাক রফতানীতে ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছেন কারখানার মালিকগণ। তাদের দাবী ঈদের প্রাক্কালে গার্মেন্টস শিল্প খাতকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি মহল সুপরিকল্পিত ভাবে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর মোঃ আব্দুল খালেক ও পোশাক শ্রমিকরা জানায়, গাজীপুরে কোনাবাড়ির কাশিমপুর, জরুন, নয়পাড়া শিল্প এলাকার কারখানাগুলোর শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো বৃহষ্পতিবার সকালে কাজে যোগ দেয়। কাজে যোগ দেয়ার আধা ঘন্টা পর থেকে স্বাধীন গার্মেন্টস লিমিটেড, এবিএম ফ্যাশন, রিপন গার্মেন্টস, মাল্টি ফ্যাব্স্ লিমিটেড, কটন ক্লাব বিডি লিমিটেড, মুনটেক্স, পালকি, তাসনিয়া ফ্যাব্রিক্স ও আলিম নিটওয়্যার লিমিটেডসহ ওই এলাকার অন্ততঃ ১০টি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে বমি ভাব, মাথা ঘোরানো ও পেট ব্যাথা শুরু হলে তারা অসুস্থ্য হতে থাকে। অসুস্থ্যদের অনেকের খিচুনীও দেখা দেয়। এতে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এদিন ওই কারখানাগুলোর অন্ততঃ চার শতাধিক শ্রমিক পর্যায়ক্রমে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। প্রচন্ড তাপদাহের কারনে তারা অসুস্থ্য হয় বলে জানা গেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ ও তাদের লোকজন অসুস্থ্যদের উদ্ধার করে স্থানীয় শরীফ জেনারেল হসপিটাল, পপুলার হাসপাতাল, কোনাবাড়ি ক্লিনিক ও হক জেনারেল হসপিটালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়। অসুস্থ্যদের মধ্যে কারখানার সুয়িং সেকশনের নারী শ্রমিকের সংখ্যা বেশী। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়লে অন্য শ্রমিকরা কারখানার কাজ বন্ধ করে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই ১০টিসহ প্রায় সব ক’টি পোশাক কারখানা এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কোনাবাড়ী শরীফ জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক বাবুল আহমেদ শরীফ জানান, এটি Hysterical conversion reactions disease। এ রোগে একজন মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তাকে দেখে আরেকজন অসুস্থ্য হয়ে পড়ে যাবে। তাছাড়া প্রচন্ড গরমে কেউ হিটস্ট্রোক করলে একজনের দেখাদেখি অপরজনও মনে করবে তারও স্ট্রোক হয়েছে। আবার সেও অজ্ঞান হয়ে ঢলে পড়তে পারে। তবে অসুস্থ্যদের অধিকাংশরাই চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এ ব্যাপারে কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকার মাল্টি ফ্যাব্স্ লিমিটেড পোশাক কারখানার মালিক ডা. মেজবাহ ফারুকী বলেন, এ কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করে। কারখানায় শ্রমিকদের চিকিৎসাসহ নিজস্ব সকল ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি কারখানা অভ্যন্তরে কুলিং প্যাডের মাধ্যমে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শীতল রাখা হয়। অথচ বৃহষ্পতিবার সকালে কারখানায় কাজে যোগ দেওয়ার ১০/১৫ মিনিট পরই গরমের অজুহাতে কয়েক শ্রমিক অসুস্থ্য হওয়ার কথা বলে। এদের দেখাদেখি আরো কয়েক শ্রমিক ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ্যতার ভান ধরে। এসময় কয়েক শ্রমিক হঠাৎ কারখানার সাইরেন বাজায়। এতে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি শুরু করে। অসুস্থ্যদের বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরে যায়। গত কয়েকদিন ধরে এ পরিস্থিতি অব্যহত রয়েছে। এতে রফতানীমুখী এ কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চরম বিঘিœত হচ্ছে। ঈদের প্রাক্কালে এ অবস্থা অব্যহত থাকলে বিদেশী ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পোশাক উৎপাদন করে তা সরবরাহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শুধু কাশিমপুরের এ এলাকার কারখানাগুলোতেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অথচ দেশের সর্বত্র তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলেও পাশর্^বর্তীসহ আশুলিয়া কোনাবাড়িসহ অন্য এলাকার কারখানাগুলোর উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরীর কারনে ওই এলাকার কারখানাগুলোর বেশ কিছু শ্রমিক ছাটাই করা হয়। ছাটাইকৃত ওইসব শ্রমিকদের অনেকেই এ এলাকার কারখানাগুলোতে যোগ দিয়ে বিশেষ গোষ্ঠির ছত্রচ্ছায়ায় অসুস্থ্যতার অজুহাতে আবারো এখানকার গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প বিশ^ বাজারে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, পোশাক কারখানার শ্রমিক অসুস্থ্য হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। গত শনিবার থেকে প্রতিদিনই এ এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা অসুস্থ্য হচ্ছে। তবে বৃহষ্পতিবার স্থানীয় প্রায় সব ক’টি পোশাক কারখানা বেশ কিছু শ্রমিক অসুস্থ্য হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন প্রচন্ড গরমে কারখানাগুলোর কিছু শ্রমিক অসুস্থ্য হয়। তবে এসব অসুস্থ্যদের দেখে আরো কিছু শ্রমিক অসুস্থ্য হওয়ায় অসুস্থ্যতার সংখ্যা বেড়েছে। তাদের মাস হিস্টেরিয়া হতে পারে। আবার অনেক শ্রমিক কাজে ফাঁকি দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে অসুস্থ্যতা দেখিয়ে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। অসুস্থ্য শ্রমিকদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অসুস্থ্য প্রায় সব শ্রমিকই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছে। এঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাশিমপুর, নয়াপাড়া, জরুন এলাকার অধিকাংশ পোশাক কারখানা এদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
×