ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফ রিমান্ডে

প্রকাশিত: ২১:৪২, ২৫ মে ২০১৭

বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফ রিমান্ডে

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বনানীর ধর্ষণ মামলার আসামি নাঈম আশরাফকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে হাজির করে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য ভাবার সময় দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, সাত দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নাঈম আশরাফকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। “মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের খাস কামরায় তাকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য নেওয়া হবে। তার আগে নিয়ম অনুযায়ী তাকে ভেবে দেখার সময় দেওয়া হয়েছে।” মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিদর্শক ইসমত আরা এমি আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য হাকিমের কাছে আবেদন করেছেন। তবে নাঈম আশরাফ নিজের অপরাধ স্বীকার করবেন কিনা, তা জবানবন্দি শেষ হওয়ার আগে বলা যাবে না। গত ১৭ মে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার আসল নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম। পরদিন তাকে ঢাকার হাকিম আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এ ধর্ষণ মামলার বাকি চার আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার বন্ধু সাদমান সাকিফ, সাফাতের দেহরক্ষী রহমত আলী এবং গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনও ইতোমধ্যে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ৬ মে বনানী থানায় দায়ের করা এ মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও নাঈম। বাকি তিনজন তাদের সহযোগিতা করেন। সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের হালিম নাম গোপন রেখে ঢাকায় নাঈম আশরাফ নামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন বলে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর প্রকাশ পায়। গত ৬ মে মামলার পর গণমাধ্যমে নাঈমের ছবি দেখে তাকে হালিম বলে শনাক্ত করেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের গাইন্দাইল গ্রামের বাসিন্দারা। হালিম ওই গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে। এলাকায় প্রতারক হিসেবে তার পরিচয় ছিল। গ্রামবাসী জানায়, হালিম প্রভাবশালী বিভিন্ন জনকে তার বাবা পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা আদায় এমনকি বিয়েও করেছিল দুই বার। ঢাকায় এসে নাঈম আশরাফ নাম নিয়ে ‘ই-মেকার্স’ নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান খুলে ২০১৪ সালে ভারতের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টের আয়োজন করেন তিনি। ২০১৬ সালে ঢাকায় ভারতের আরেক শিল্পী নেহা কাক্কারকে নিয়ে ‘নেহা কাক্কার লাইভ ইন কনসার্ট’ অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন নাঈম বা হালিম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈম বিভিন্ন জনের সঙ্গে নিজের সেলফি দিতেন, যা সুবিধা নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হত বলে এখন মনে করছেন ওই ছবিতে থাকা ব্যক্তিরা। নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দিয়ে হালিম এলাকায় পোস্টার-ব্যানারও লাগাতেন; যদিও সংগঠনে তার কোনো পদ ছিল না বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কাজীপুরের নেতারা। আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাতের সঙ্গে নাঈমের নিবিড় ঘনিষ্ঠতার কথা সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারাহ মাহবুব পিয়াসাও জানিয়েছেন। সাফাত সব সময় নাঈমের কথায় চলতেন বলে পিয়াসার ভাষ্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের নিজের পাতায় সাফাতের বাড়িতে পারিবারিক আবহে ছবিতে তাকেও দেখা যায়। অভিযোগকারী তরুণীদের দাবি, সেদিন রেইনট্রি হোটেলে নাঈম ও সাফাত ধর্ষণের পাশাপাশি তাদের নির্যাতনও করেন। পা ধরে নিস্তার চাইলেও তারা ছাড়া পাননি।
×