ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্য মাল্টি টাস্কিং রোবট ও স্মার্ট ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম

যশোরের তরুণ বিজ্ঞানী মুনের নতুন দুই আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৫ মে ২০১৭

যশোরের তরুণ বিজ্ঞানী মুনের নতুন দুই আবিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ শুধু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোনই নয়। যশোরের খুদে বিজ্ঞানী নাইজা হাসান মুনের নতুন আবিষ্কার ‘দ্য মাল্টিটাস্কিং রোবট’ এবং ‘স্মার্ট ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম’ও চমক সৃষ্টি করেছে। সরকারের ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় মুনের এই আবিষ্কার উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পাশাপাশি খুলনা বিভাগেও বিজয়ী হয়েছে। যশোর উপশহর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক রাজেক জাহাঙ্গীর ও হাসনা জাহাঙ্গীরের একমাত্র ছেলে মুন। বর্তমানে সে যশোর শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, ভাবাভাবি। হাতের কাছে খেলনাপাতি যা কিছু পেত তা নিয়েই সে ভাবত। এ যেন ছোট্ট একটি শিশুর গবেষণা! অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনার ফাঁকে এই ছেলেটিই আবিষ্কার করে বসে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রোন। আর এই ড্রোনই এনে দেয় মেধাবী মুনের ব্যাপক পরিচিতি। যশোরের অনেকেই তাকে জানে ‘ড্রোনবয়’ হিসেবে। মেধাবী এই ছাত্র পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। নাঈম হাসান মুন ২০১৫ সালে সরকারের আইসিটি ডিভিশনের আয়োজনে হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগে (কুয়েটে অনুষ্ঠিত) প্রথম স্থান অধিকার এবং একই প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ে (বুয়েটে অনুষ্ঠিত) তৃতীয় স্থান অধিকার করে। এ প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে ৯ হাজার প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিল। একই বছর যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত প্রথম বিজ্ঞান মেলায় নিজের আবিষ্কৃত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘ড্রোন’ প্রদর্শনের মাধ্যমে চারশ’ প্রজেক্টের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে মুন। ২০১৬ সালে যশোর কালেক্টরেট চত্বরে অনুষ্ঠিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই বিভাগের আয়োজনে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় এই ড্রোনটি প্রদর্শনের মাধ্যমে সে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবক হওয়ার গৌরব অর্জন করে। একই বছর যশোর জিলা স্কুলে অনুষ্ঠিত জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় এই ড্রোন প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রথম স্থান অধিকার করে নাঈম হাসান মুন। এ বছরেই সে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০১৬ সালে মেধাবী ছাত্র নাঈম হাসান মুন আবিষ্কার করে ‘সাইবার স্পাই মেশিন’। ওই বছরের ৯ জুন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এই মেশিনটি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন। প্রতিমন্ত্রী এ সময় আবিষ্কারটি নিয়ে প্রশংসা করেন এবং নাঈম হাসান মুনকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ ও পরামর্শ দেন। একই বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান মেলা ‘গুগল সায়েন্স ফেয়ার’ এ খুদে বিজ্ঞানী মুন এই সাইবার স্পাই মেশিনটি প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রশংসা অর্জন করে। ২০১৬ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বিজ্ঞান মেলায় মুন নিজের আবিষ্কৃত ‘দ্য মাল্টিটাস্কিং রোবট’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আই সিমুলেটর’ প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রায় তিনশ’ প্রোজেক্টের মধ্যে যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ২০১৭ সালেও যশোর টাউন হল ময়দানে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই বিভাগের আয়োজনে তিনদিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় ‘দ্য মাল্টিটাস্কিং রোবট’ প্রদর্শনের মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবক হওয়ার গৌরব অর্জন করে নাঈম হাসান মুন। ২২ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৭-এর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দুটিতেই মুনের তৈরি এই রোবট প্রথম স্থান অধিকার করে। অপরদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি একই প্রতিযোগিতার বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে রোবটটি। গত ২২, ২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় উদ্ভাবনী মেলায় মুনের তৈরি রোবট এবং স্মার্ট ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। একই স্থানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই বিভাগের আয়োজনে ‘উদ্ভাবকের খোঁজে’ প্রতিযোগিতায়ও মুনের আবিষ্কার দুটি নির্বাচিত হয়েছে। এদিকে, গত ২২ ও ২৩ মার্চ রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারে অনুষ্ঠিত ‘উদ্ভাবকের খোঁজে’ প্রতিযোগিতায় মুনের রোবটটি সারাদেশে শীর্ষ-২০ এবং পরবর্তীতে শীর্ষ-১৫ এ স্থান লাভ করে। ২৪ মার্চ জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে অনুষ্ঠিত সল্ভ এ থন-২০১৭ প্রতিযোগিতায় মুনের তৈরি ‘কৃষিবন্ধু’ প্রজেক্টটি সারাদেশে শীর্ষ-১০ এ স্থান লাভ করে। এছাড়া চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি, ইংরেজীতে বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছে তরুণ বিজ্ঞানী নাঈম হাসান মুন। মেধাবী এই শিক্ষার্থী বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে দেশের জন্য কিছু করতে চায়। মুন জানায়, তার প্রতিটি প্রজেক্টই দেশের উপকারে আসবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা।
×