ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাস্টিন গোমেজ

কঠোর আইন চাই

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৫ মে ২০১৭

কঠোর আইন চাই

বন্ধুত্বের ফাঁদে ধর্ষণ! তাও কি সম্ভব! আগে ধর্ষণ করা হতো জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে। আর বর্তমানে বের হয়েছে এক অভিনব কৌশল। সেটি হলো বন্ধুত্বের ফাঁদ পেতে ধর্ষণ। সম্প্রতি রেইন ট্রিতে যে ধর্ষণের চিত্র ফুটে ওঠেছে, তাতে এ ঘটনা সবার চিন্তা চেতনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। কেননা সেখানে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আজ সমগ্র ছেলে-মেয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটিকে প্রবল জটিল করে দিয়েছে। ভালবাসায় মোড়ানো দেয়ালে চিড় ধরিয়ে দিয়েছে। বন্ধুত্বের মোড়কে কামনা চরিতার্থের যে ফাঁদ তাতে কোন মেয়ে কি আর তার যুবাবয়সী ছেলে বন্ধুকে আগের মতো নিরাপদ ভাবতে পারবে? পরিস্থিতি এখন এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, প্রেমে পড়া তো দূরের কথা, এখন থেকে কোন মেয়ে ছেলের হাতে হাত রাখতে, চোখে চোখ রাখতে ভয় পাবে। আর রাখলেও হাজারটা দুশ্চিন্তা করবে। এটা তো চিন্তা করাই কষ্টকর যে, জন্মদিনে দাওয়াত দিয়ে ধর্ষণ করবে। দু’জনের এমন সম্পর্ককে আমরা বন্ধুত্ব বলব? এছাড়া এ ধরনের অভিনব পদ্ধতি যে অন্য আট দশ জন বখাটে ছেলেরা প্রয়োগ করবে না তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই? এটা তো গেল সবচাইতে আলোচিত ঘটনা। এছাড়াও কত যে অমানবিকভাবে নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে তার কোন হিসেব নেই। বেশি না প্রতিদিনকার পত্র পত্রিকা খুললেই পাওয়া যায় নারী ধর্ষণের প্রতিবেদন। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, নারী হয়ে জন্মানোটাই যেন অভিশাপ। আর এ অভিশাপ আগেও যেমনি ছিল, বর্তমানেও আছে। পার্থক্য শুধু এটা এখন এক অসহনীয় ও অবর্ণনীয় পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে, এই বীভৎসতা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্যাতনের বিভিন্ন মাত্রা, ধরন ও নির্মমতায় আতঙ্কিত আজ পুরো নারী সমাজ। আমরা এমনি এক সমাজ ব্যবস্থায় এসে গিয়েছি, যেখানে শুধু যে রাতের আঁধারে নির্জন রাস্তায় নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে তা নয়, এই বর্বরতার চিত্র আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর-পরই ঝড় ওঠে নিন্দা ও প্রতিবাদের। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাময়িক সক্রিয়তার ফলে আসামি ধরা পড়ে। তথাপি আটকের পর বেশিরভাগ মামলার আসামিই জামিনে বেরিয়ে যায়। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের অবলা ও অসহায় নারী কেউ নিস্তার পাচ্ছে না এই ধরনের ধর্ষক প্রতারকদের হাত থেকে। প্রাইমারী স্কুলগামী থেকে শুরু করে ভার্সিটি এমনকি গৃহবধূকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করছে। আর এটার মাত্রা দিন দিন ক্যান্সারের মতো বিস্তার লাভ করছে। মূলত যেসব কারণে এই ধর্ষক শ্রেণীর উৎপাত বাড়ছে, তার প্রধান কারণ অপরাধ করার পর তারা জামিনে মুক্তি পায়। এছাড়াও যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত অপরাধীদের বিচার দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয় না। তাই সরকারের কাছে বিনীত আবেদন- এই ধরনের অপরাধীরা যেন জামিনে মুক্তি না পায় সেজন্য আইন কঠোর করা হোক। আর অভিযুক্ত অপরাধীরদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা জরুরি এবং বিচার বিভাগ যেন দ্রুত গতির ক্ষমতাসম্পন্ন হয় সে জন্য প্রয়োজনে বিশেষ আদালত গঠন করা উচিত। আরেকটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আমাদের দেশে বর্তমানে যে হারে নারীদের প্রতি যৌন হয়রানি ও নারী ধর্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে কিন্তু প্রচলিত আইনের আওতায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন খুবই কঠোর আইন প্রণয়ন। এছাড়াও আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট মহলকে আবেগ ও সঙ্কীর্ণতার উর্ধে থাকতে হবে। তাদের বিবেকের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে। যাতে অপরাধীরা আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×