ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিকৃত মনের অপরাধ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৫ মে ২০১৭

বিকৃত মনের অপরাধ

ইতিহাস বলে, সকল সমাজব্যবস্থায় শক্তিশালী শক্তিহীনদের দমনপীড়ন-শোষণ-নির্যাতন করেছে। সম্প্রতি রাজধানীর অভিজাত এলাকার আবাসিক হোটেলে সংঘটিত অপরাধ তেমনি এক ঘৃণ্য বর্বরতার নাম। আমরা এখন আধুনিক-গণতান্ত্রিক সভ্যযুগের বাসিন্দা। সভ্যতার বিকাশ, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা অবশ্যই অপরাধ করার সুযোগকে ম্লান করতে সক্ষম। কিন্তু কি দেখছি? উল্টো ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করার মতো। প্রথমত- বলতে চাই রেইনট্রি আবাসিক হোটেলের নীতিমালা এবং মালিক ও তদারককারীদের পেশাদারিত্ব অত্যন্ত রুগ্ন ও নীচুমানের ছিল। অথচ এসব হোটেলের নীতিমালা হওয়া উচিত সুদৃঢ়- যেখানে একজন নারীও নিরাপদে অবস্থান করতে পারেন। ওইদিন হোটেলটিতে কি একজন মানুষও ছিলেন না যার কানে কোন একজন নারীর আর্তনাদ-আর্তচিৎকার পৌঁছায়নি? নাকি হোটেলটি তৈরিই হয়েছে এসব কর্মকা-ের জন্য? কথায় কথা আসে, আবার কথাটি সবার জন্য না হলেও বলতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি শুধুই বেতনের টাকা- ঘুষের টাকা গুনবেন আর ঘুমাবেন? দ্বিতীয়ত- বিকৃতমনের নির্যাতনকারীদের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া বলে দেয় এটি তাদের সংঘটিত প্রথম অপরাধ নয়। জবাবদিহিতার অভাব আর সময়, সুযোগ, অর্থপ্রবাহ অপরাধ করতে সাহায্য করছে বার বার। কখনও মনে হয়- এদের কি পরিবার বলে কিছু নেই? মা-বাবা নেই? বা অন্য কেউ- যারা প্রশ্ন করবেন এত এত টাকা আর সময় সে কোথায় ব্যয় করছে? যদি সন্তানকে কিঞ্চিত পরিমাণ সময় দিতে অক্ষম না হন- কোন বাবা-মা তাহলে সন্তান জন্ম দিলেন কেন? আর যদি মনে হয় সন্তান বিকৃত একটা বলদ হয়েছে তাহলে চিকিৎসা বা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না কেন? কি হবে বলুন তো- সম্পদ দিয়ে, যদি সন্তান মানুষ না হয়? তৃতীয়ত- পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যাই-ই বলুক না কেন আমরা প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা থেকে বলি, থানায় গেলাম আর কাজ হলো এ পরিবেশ নেই কোথাও। শুধু থানা কেন, মানুষ প্রয়োজনে যখন যার কাছেই যাক না কেন সবাই সাধ্যমতো সর্বেচ্চ ক্ষমতা প্রদর্শন করে। সাধারণের জন্য রেফারেন্স নয়ত হয়রানি ছাড়া কাজ হাসিল দুর্লভ। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা বলা যাবে না। চতুর্থত- কোন একজন নির্যাতিত নারী কখনই অপরাধী নন, তাই নিজেকে ছোট বা খারাপ ভাবার কোন অবকাশ নেই। বরং নিজের প্রতি যতœশীল হয়ে তিনি নিজে এবং সমাজের অন্য কোন নারী যাতে আর নির্যাতিত না হন সেটিকে সামনে রেখে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হোন। মনে রাখতে হবে অপরাধীরা শাস্তি না পেলে অপরাধী নিজে ও অন্যরা অপরাধ করতে উৎসাহবোধ করবে। পরিবার আর সমাজের মানুষকেও এই সত্যটি ধারণ করতে হবে। অসুস্থ সমাজব্যবস্থার মাঝেও ইতিবাচক পথে হাঁটার চেষ্টা অব্যাহত রাখা আজ সময়ের দাবি। থেমে যাওয়া মানে মৃত্যু আর বেঁচে থাকা মানে এগিয়ে চলা। চলুন সবাই মিলে আমার মা-বোন-কন্যা বা কারও স্ত্রীর জন্য নিরাপদ সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করি। খলিলগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে
×