ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মু. মিজানুর রহমান মিজান

কলম্বো কিংবা বেজিং নয়, মূল পরিকল্পনা নয়া দিল্লীর

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ২৪ মে ২০১৭

কলম্বো কিংবা বেজিং নয়, মূল পরিকল্পনা নয়া দিল্লীর

১৬ মে চীনের একটি সাবমেরিন শ্রীলঙ্কার পশ্চিম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোর বন্দরে নোঙ্গর করবে; এমনই কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। গত সপ্তাহের ৯ তারিখ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কা সাফ জানিয়ে দেয় যে, বেজিং কলম্বোকে ব্যবহার করতে চেয়ে যে অনুরোধ করেছিল সেটি তারা গ্রহণ করতে পারছে না। এর চেয়েও যে বিষয়টি বেজিং-কলম্বো ইস্যুতে সবার মুখে মুখে উঠে গেছে, তা হলো- ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাকি চীনের সাবমেরিন ইস্যুতে প্রভাব খাটিয়েছেন। মাহিন্দা রাজাপক্ষে যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন ২০১৪ সালের অক্টোবরে শেষ বারেরমতো চায়না সাবমেরিন কলম্বোয় নোঙ্গর করতে দিয়েছিল, সে সময়ও ভারত ভীষণ রকম চটেছিল। এরপর ২০১৫ সালের শুরুতে ক্ষমতার চেয়ারে বসেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। মাইথ্রিপালা চান না নয়া দিল্লীর সঙ্গে শ্রী জয়াবর্দেনেপুরা কোটের সঙ্গে সম্পর্ক বৈরি রূপ দেখুক, ২০১৪ সালের ঘটনার পুনরাবৃতি হোক বরং সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চান। আর এ কারণেই বেজিংযের ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি কলম্বো ডক। টাইমস অব ইন্ডিয়া ১১ মে একটি রিপোর্টে শ্রীলঙ্কা সরকারের এক উর্ধতন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলে, চীনের সাবমেরিন নোঙ্গর করতে দিতে তাদের সম্মত হওয়ার সুযোগ ছিল না এ নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন থাকায়। ওই কর্মকর্তার নাম তারা প্রকাশ করেনি। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক বিশারদদের অনেকেই প্রশ্ন করছেন, নরেন্দ্র মোদি যে শ্রীলঙ্কা সফর করবেন তা সবাই জানত এবং দিনক্ষণ সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা ছিল। বেজিং সাবমেরিন নোঙ্গরের জন্য যে সময়টি বেছে নিয়েছিল তা ভারতের প্রধামন্ত্রীর নিজ দেশে ফেরার কয়েকদিনের মাথায়ই। তবে কেন এই সময় চীন সাবমেরিন সংক্রান্ত এ উদ্যোগ নিয়েছিল? কেই আবার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন এভাবে- ‘চীন পরিকল্পনা করেছিল মোদির লঙ্কা সফরের আশপাশের কোন তারিখে নিজেদের ডুবোজাহাজ পাঠিয়ে নয়া দিল্লীকে বুঝিয়ে দেবে কলম্বোর ওপর বেজিংয়ের প্রভাব কতটা।’ বলা চলে এ পরিকল্পনা আপাতত পরিকল্পনাই রয়ে গেল। কিন্তু চীনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কলম্বোতে সাবমেরিন নোঙ্গরের অনুমতি চেয়েছে তবে এ ব্যাপারে শ্রীলঙ্কার হ্যাঁ কিংবা না সাড়া এখনও পায়নি, তারা এর জন্য এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন। সম্প্রতি বছরগুলোতে চীন শ্রীলঙ্কায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করেছে। বিমানবন্দর, সড়ক, রেলপথ ও নৌবন্দরের মতো খাতে অর্থায়ন করেছে। এটি ভারতের জন্য অস্বস্তিকর কারণ ঐতিহ্যগত দিক থেকে খেয়াল করলে ২১ মিলিয়ন মানুষের দ্বীপ রাষ্ট্রটির প্রধান অংশীদার হলো তারা। কলম্বো বন্দরেরও ট্রান্সশিপমেন্টের প্রায় ৭০ ভাগ আসে ভারত থেকেই। অন্যদিকে ক্ষতির মুখে পড়া হাবান্টোটা বন্দরেরও ৮০ ভাগ চীনের কাছে লিজ দেয়ার দলিলপত্র প্রস্তুত হয়ে আছে কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলনের জন্য চুক্তিটি আলোর মুখ দেখতে পারছে না। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স মনে করিয়ে দিয়েছে, ১৯৮৭ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে বলা হয়েছিল তাদের অঞ্চলগুলো একে অপরের ঐক্য, সংহতি ও নিরাপত্তা নিয়ে বৈরি কোন কার্যকলাপের জন্য ব্যবহার করতে দেবে না। একদিকে ভারত চাচ্ছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সম্পর্কটি তাদের সঙ্গেই বহুলাংশে মিলে থাক, কিন্তু সে সুযোগটি আর কোথায় থাকল? দ্বীপ রাষ্ট্রটি তো চীনের নিকট দায়বদ্ধ হয়ে আছে। বিশালাকার ঋণের চাপে এ পথ অনেকটাই সর। আবার প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সঙ্গে লঙ্কার সুসম্পর্ক থাকার কারণে পাওয়ার ইনক্রিজিংয়ের জন্য ভারত মহাসাগরে চাপ পড়বে। লঙ্কা-চীন নিয়ে ভারতের উদ্বেগের কারণ এখানেই। একটি হিসাব বলছে, ১৯৭১ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে চীন শ্রীলঙ্কাকে ৫ বিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য প্রদান করেছে। যার মধ্যে ৯৫ শতাংশ ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের সময়ে। আর এ মুহূর্তে এত অর্থ পরিশোধেরও সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কার কিছু সংবাদ মাধ্যম। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীনের ও শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য উপকারী, কোন তৃতীয়পক্ষ এর লক্ষ্য নয় এবং কোন তৃতীয়পক্ষের এতে হস্তক্ষেপ করাও উচিত নয়।’ এসব বললেও কোন রকম ব্যাখ্যা প্রদান করেনি তারা। শ্রীলঙ্কা চীনের সাবমেরিন নোঙ্গর করতে না দিলেও দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছে চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা বলছে নরেন্দ্র মোদির সরকারী সফরের কাছাকাছি সময়ে (আগে বা পরে) কোন রকম বিব্রতকর অবস্থায় পরতে চায়নি। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রণিল বিক্রমসিঙ্গে চীনের নতুন সিল্ক রোড পরিকল্পনা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। প্রতিবেশী দেশের দুদিনের এ সম্মেলনে যোগ দেয়নি ভারত, যা নিয়ে চীনা মিডিয়ায় চলছে কঠোর সমালোচনা। ১৫ মে শেষ হওয়া সম্মেলনটিকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। এ খবর জানায় দ্য টেলিগ্রাফ। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, রয়টার্স এবং দ্য টেলিগ্রাফ
×