ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসির খাতা রাবি হলে ॥ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৪ মে ২০১৭

এইচএসসির খাতা রাবি হলে ॥ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের গণরুম থেকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চলতি উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ১০০ উত্তরপত্র উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকালে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তদন্ত কমিটি গঠন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর তরুণ কুমার সরকার। তিনি বলেন, কমিটির প্রধান করা হয়েছে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহঃ হবিবুর রহমানকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সরকারী সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোল্লা মফিজুদ্দিন ও শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আকবর হোসেন। বিষয়টি তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি বড় ধরনের অপরাধ। কেন, কি উদ্দেশে পরীক্ষক উত্তরপত্র রাবির ছাত্রী হলে পাঠিয়েছিল তার তদন্ত করা হবে। এর পর প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের মুন্নুজান হলের দ্বিতীয় তলার বারান্দায় পড়ে থাকা একটি ব্যাগ থেকে সদ্য সমাপ্ত এইচএসসি পরীক্ষার ১০০ উত্তরপত্র উদ্ধার করা হয়। পরে খাতাগুলো শিক্ষা বোর্ডে নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। এই খাতার কোড নম্বর ২৬৮। ইসলামের ইতিহাসের খাতাগুলো মূল্যায়নের জন্য রাজশাহী নিউ গব: ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আবুল কালামের কাছে বোর্ড থেকে পাঠানো হয়েছিল। তবে ওই শিক্ষক খাতাগুলো নগরীর শাহ মখদুম কলেজের শিক্ষক মাহামুদুল হাসানকে দেন। তার মাধ্যমে খাতাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যায়। খাতা উদ্ধারের পর রাতে দুই শিক্ষককে শিক্ষা বোর্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বোর্ড থেকে তাদের বোর্ড সচিবের জিম্মায় রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে অসুস্থতার কারণে খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন নিউ গবর্মেন্ট ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ। এর পেছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না বলেও তিনি দাবি করেন। তবে খাতাগুলো মাসুদুল হাসানের কাছ থেকে রাবির মুন্নুজান হলে কিভাবে গেল তার কোন জবাব দেননি মাসুদুল। রাবির প্রক্টর অধ্যাপক মজিবুল হক আজাদ বলেন, খাতাগুলো রাজশাহী নিউ গবর্মেন্ট ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক আবুল কালাম আজাদকে মূল্যায়ন করতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটি না করে এমপি থ্রি’র পরিচালক মাসুদ নামের এক ব্যক্তিকে দেন। মাসুদ আবার রাবির এক ছাত্রকে দেন। ওই ছাত্র পরবর্তিতে তার বান্ধবীকে দিয়ে খাতাগুলো মূল্যায়ন করতে দেন। প্রক্টর আরও বলেন, হয়ত প্রেমিকের কাছ থেকে ওই ছাত্রী খাতগুলো নিয়ে মন্নুজান হলেই মূল্যায়ন করছিল। তিনি ওই হলেই থাকেন। কিন্তু কে সে? তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ ওই কক্ষে ১০০ ছাত্রী থাকে। তাদের মধ্যে কেউ একজন খাতাগুলো মূল্যায়ন করার দায়িত্ব নিয়েছিল বলে জানান তিনি। তাকেও শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার জানান, তদন্ত প্রতিবেদনের পর বোর্ড কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরীক্ষক ওএসডি রাবির ছাত্রী হল এইচএসসি পরীক্ষার ১০০টি খাতা উদ্ধারের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ওএসডি করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্সবার্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রাজশাহীর নিউ গবর্মেন্ট ডিগ্রী কলেজে এসেছে বলে জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ জার্জিস কাদির। অধ্যক্ষ জার্জিস কাদির জানান, তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সিনিয়র সচিব আবু কায়সার খানের স্বাক্ষর করা এক পত্রে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
×