ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মসংস্থানের শ্রমিক দিয়ে পুকুর খনন ॥ মেম্বার চেয়ারম্যানকে শোকজ

প্রকাশিত: ০৪:০২, ২৪ মে ২০১৭

কর্মসংস্থানের শ্রমিক দিয়ে পুকুর খনন ॥ মেম্বার চেয়ারম্যানকে শোকজ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ এবার মণিরামপুরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে পুকুর খননসহ ব্যক্তিগত কাজ করানোর তথ্য ফাঁস হয়েছে। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অভিযুক্ত ঢাকুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিন মেম্বরকে শোকজ করেছেন। এর আগে চৌগাছায় এক ইউপি মেম্বরের বিরুদ্ধে প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে নিজের পাট ক্ষেতে কাজ করানোর অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সচেতন মহলের অভিযোগ সরকারের এ প্রকল্পের অর্থ হরিলুটের মহোৎসব চলছে। কর্মসংস্থানের কাজে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকছেন। বাস্তবের সঙ্গে কাগজপত্রের মিল নেই। তারপরও চেয়ারম্যান-মেম্বররা প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে তাদের ব্যক্তিগত কাজ করাচ্ছেন এমন প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে উপরিমহলের তেমন কোন মাথা-ব্যথা নেই। জানা যায়, সরকার দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ২০০৮ সালে এ প্রকল্প গ্রহণ করে। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১৭ ইউনিয়নে ৩ হাজার ৯২৮ শ্রমিকের বিপরীতে তিন কোটি ১৪ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে উপজেলায় গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায় চলতি মাসের ২ মে থেকে শুরু হয়েছে। সরেজমিন ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ২৫ জনের স্থলে মাত্র ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। এ সময় শ্রমিকরা পুকুর খনন করে রাস্তায় মাটি ফেলছে। পুকুর খননের বিনিময়ে টাকা নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত পুকুরের মালিক সৈয়দ আলী বলেন, কিছু না দিলে কি হয়? উপস্থিত শ্রমিক সেলিম হোসেন বলেন, প্রথমবার মাত্র ১২-১৩ জন শ্রমিক কাজ করত। স্যারেরা বকাবকি করায় এবার কিছু শ্রমিক বাড়ানো হয়েছে। পরে ২নং ওয়ার্ডে গেলে দেখা যায় সেখানে মাত্র ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ওয়ার্ডে নিয়মিত ২৫ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা। এ সময় শ্রমিক সরদার আতিয়ার রহমান বলেন, মিথ্যা কথা বলব না, প্রতিদিন এ দলের ১৪-১৫ শ্রমিক কাজ করে। বাকিদের চেহারা দেখেননি তিনি। এ সময় নারী শ্রমিক ফাতেমা ও কাজল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখনও তারা প্রথম পর্যায়ের ১৫ দিনের হাজিরার টাকা পাননি। কি কারণে পাননি তাও তারা জানেন না। একই অবস্থা দেখা যায় পার্শ্ববর্তী ৫নং ওয়ার্ডে। সেখানে ২২ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা থাকলেও মাত্র ১৪ জনকে উপস্থিত দেখা যায়। বাকিদের শ্রমিক সরদার আবুল খায়ের বলেন, তারা কেন আসে না, বিষয়টি চেয়ারম্যান-মেম্বর ভাল বলতে পারবেন। এরপর ৪নং ওয়ার্ডে গেলে সেখানে ২৭ জন শ্রমিকের স্থলে মাত্র ১৬ জনকে উপস্থিত দেখা যায়। এসব ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা ইয়ারুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ওই ইউনিয়নের অনিয়মের বিষয়টি তিনি সরেজমিন গিয়ে দেখেছেন। যা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। কর্মসৃজন প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার বলেন, অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ায় ইতোমধ্যে ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুর্গাপদ সিংহ, মেম্বর গৌর চন্দ্র দে ও হোসেন আলীকে শোকজ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান দুর্গাপদ সিংহ বলেন, তিনি এখনও অফিসিয়ালি চিঠি পাননি।
×