ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমেনশিয়া ও পারিবারিক অশান্তি

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২৩ মে ২০১৭

ডিমেনশিয়া ও পারিবারিক অশান্তি

রহিমা বেগম ৬০ বছর বয়স। তাঁর সমস্যা কেবল ভুলে যান, কিছুই মনে থাকে না, একটু আগে কি খেলেন বলতে পারছেন না। রোগীর কথা শুনে মনে হয় মানুষটি বুঝি দুষ্টামি করছে, বা ভান করছে, রোগীর চোখ-কান সবই ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কি যেন নাই যার কারণে লোকটি তার নিকটআত্মীর নাম বলতে পারে না, চিনে না, ভুলে যাচ্ছে সবকিছু, আচরণ করছে শিশুর মতো। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাচ্ছে এটা যেমন সুখকর বিষয়, অন্যদিকে বয়স্কদের কিছু কিছু রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে যার ভোগান্তি শুধু রোগীরাই হয়Ñ না ঘরের সবাইকে ভোগ করতে হয়। ভুগতে হয় পরিবারের লোকদেরও। তেমন একটি অসুখ ডিমেনশিয়া যেখানে পুরুষ-মহিলা সবাই আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত ৫০ এর পরে এই রোগটি দেখা দেয়। এ রোগে মহিলারাই বেশি ভোগে। ১০% বয়স্কদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি হতে পারে,। অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক রোগে ভুগছেন এমন লোকদের মধ্যে বেশি হতে পারে। পৃথিবীর সবদেশের মতো আমাদের দেশেও এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের রোগের মধ্যে এ্যালজিমিয়াম ও ব্রেনস্টোক টাইপই বেশি। ৬৫ বছর বয়সে ১%, ৮০ বছর বয়সে ৮-১০%, ৯০ বছর বয়সে ৩০-৪০% এ্যালজিমিয়াম রোগে ভুগে থাকেন। লক্ষণসমূহ ১. ভুলে যাওয়া এমনকি নিজের পরিবার পরিজনদের নাম ভুলে যায়। ২. খেয়াল হারিয়ে ফেলা। ৩. মনে করতে না পারা। ৪. হিসাব-নিকাশে গ-গোল হওয়া। ৫. ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, দিনের বেলায় বেশি ঘুমায়। ৬. খেয়ে বলে খাইনি, সবকিছু খুঁজতে থাকে, রেগে যায়, মাঝে মধ্যে একদিকে চলে যায়। ৭. সেক্সয়াল অপ্রীতিকর আচরণ করে ফেলে ৮. অনেক সময় পায়খানা শরীরে ও বিভিন্ন জায়গায় মাখে। সমস্যা কি কি হতে পারে ১. খাওয়াতে গেলে রেগে যায়। ২. একদিকে চলে যেতে চায়। ৩. মারতে চায়। ৪. বিছানায় প্রস্রাব করে দেয় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে পায়খানা পর্যন্তও করে ফেলে। ৫. ওষুধ খেতে চায় না। ৬. রোগ আছে যে রোগী বুঝে না। ৭. অজানা-অচেনা নতুন পরিবেশে লক্ষণগুলো বেড়ে যায়। কি কি সতর্ক হওয়া উচিত ১. রোগীর প্রতি খেয়াল রাখা। ২. ঝঃৎড়শব হলো কিনা লক্ষ্য রাখা। ৩. শ্বাসকষ্ট, হেপাটিক, এন্ডোক্রাইন রোগ আছে কিনা তা রোগীকে কতটুকু ক্ষতি সাধন করছে ক্ষতিয়ে দেখা। ৪. মদ্যপানের অভ্যাস আছে কিনা। ৫. শরীরের কোন জায়গায় টিউমার হলো কিনা। ৬. হারিয়ে যাওয়ার ভয়। সাধারণ কারণ ১. এ্যালজিমিয়া ডিডিজ ২. স্টোক (ঝঃৎড়শব)। ৩. ভিটামিনের অভাব বিশেষ করে ভিটামিন বি১, বি১২, ফলিক এসিড। ৪. নিউরোসিফিলিস। ৫. হাইপোথাইর ডিজম ৬. মাথায় আঘাত অথবা বার বার মাথায় ইনজুরি হওয়া। ৭. দীর্ঘদিন মাদকাসক্ত, এ্যালকোহল ও অন্যান্য নেশাদ্রব্য দীর্ঘদিন সেবন। ৮. বিভিন্ন অর্গান ফেউলুর হওয়ার পর। ৯। এইডস রোগ। ১০. ব্রেন টিউমার ও অন্যান্য জায়গায় টিউমার। দেখা গেছে সাইকিয়াট্রিস্ট দ্বারা চিকিৎসা করার পর বেশির ভাগ রোগী মোটামুটি ভাল থাকে। অতএব সবাই সচেতন হন এবং বয়স্কদের চিকিৎসায় এগিয়ে আসুন। ডাঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, ধানম-ি ০১৮১৭০২৮২৭৭
×