ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তরবঙ্গের পণ্যবাহী যানবাহন ধর্মঘট বাড়ল আরও দুদিন

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ মে ২০১৭

উত্তরবঙ্গের পণ্যবাহী যানবাহন ধর্মঘট বাড়ল আরও দুদিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে সড়কে ‘পুলিশের হয়রানি’ বন্ধসহ সাত দফা দাবিতে উত্তরবঙ্গে পণ্যবাহী যানবাহনের ধর্মঘট বৃদ্ধি করে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ ট্রাক-লরি-কভার্ডভ্যান-পিকআপ মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের ডাকা এ ধর্মঘট শুরু হয় রবিবার সকাল থেকে। সোমবার আবারও কর্মসূচী বাড়ানো হয়। এতে সড়কপথ ও স্থলবন্দরগুলোতে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন নেতারা বলছেন, কর্মসূচীতে ট্যাঙ্কলরির নাম ব্যবহার করা হলেও এতে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের কোন সমর্থন নেই। তাছাড়া হঠাৎ করে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করায় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্কট সমাধানে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্মঘট আহ্বানকারী নেতাদের সবাই সরকার সমর্থন পরিবহন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তাছাড়া যাদের অনুমতি নিয়ে কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে তারাও সরকার সমর্থিত কেন্দ্রীয় পরিবহন সংগঠন। তারা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সরকারী দলের নেতারাই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ বাতিলসহ চালক-পরিবহন শ্রমিকদের সাজা মওকুফ করতেই নানা অজুহাতে ধর্মঘটের আহ্বান করা হচ্ছে। সম্প্রতি পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দেশের সকল জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ২০টি জেলায় পৃথক পৃথকভাবে পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মান্নান আকন্দ সোমবার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচী বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। আবদুল মান্নান বলেন, সাত দফা দাবিতে রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ধর্মঘট ডাকা হয়। সরকারী কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় আরও ২৪ ঘণ্টা বাড়িয়ে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, এর মধ্যে যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনায় না আসে তাহলে উত্তরবঙ্গের সকল ইউনিটের সঙ্গে বৈঠক করে আমাদের করণীয় কী সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সোমবার সকাল থেকে বগুড়ার মহাস্থান, তিনমাথা, চারমাথা, মাটিডালী মোড়, ভবের বাজার, বনানী এলাকা দিয়ে ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, কভার্ডভ্যান ও পিকআপ চলাচল বন্ধ দেখা গেছে। তবে বাসসহ যাত্রীবাহী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সাত দফা দাবি হলো- কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে মহাসড়কে ‘পুলিশের হয়রানি’ বন্ধ, অবৈধ যান চলাচল বন্ধ, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়নে ‘হয়রানি’ বন্ধ, নতুন ড্রাইভিং ও হেভি লাইসেন্স প্রদানের শর্ত সহজীকরণ, যান চলাচল বিষয়ক নতুন খসড়া আইন প্রত্যাহার, পথেঘাটে ‘চাঁদাবাজি’ বন্ধ এবং পণ্যবাহনের বাম্পার খোলার সরকারী আদেশ প্রত্যাহার। পরিবহন নেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেটে দাহ্য পদার্থবাহী ট্যাঙ্কলরিকে বিভাগ ভিত্তিক শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে। একই ঘোষণায় ট্রাক শিল্প থেকে ট্যাঙ্কলরিকে পৃথক করা হয়েছে। এই হিসেবে ট্যাঙ্কলরি এখন আর ট্রাকের সঙ্গে যুক্ত কোন শিল্প নয়। একেবারে পৃথক শিল্প। কর্মসূচীর প্রতি নৈতিক সমর্থনের কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল ইসলাম জনকণ্ঠ’কে বলেন, ধর্মঘটের বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোন আলোচনা হয়নি। এক্ষেত্রে ট্যাঙ্কলরিকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ট্রাক শিল্প থেকে ট্যাঙ্ক আলাদা হয়েছে। এ কারণে আমাদের পৃথক মতামতের সুযোগ ছিল। কিন্তু আমাদের কোন নেতাই এ ব্যাপারে অবগত নন। যদিও যেসব দাবি দাওয়া উল্লেখ করে কর্মসূচী চলছে এসব সমস্যা আমরাও মোকাবেলা করছি। এ কারণে কর্মসূচীর প্রতি নৈতিক সমর্থন রয়েছে বলেও জানান তিনি। বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যান ট্রাক পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব জনকণ্ঠ’কে বলেন, আঞ্চলিকভাবে কর্মসূচী পালিত হলেও এ ব্যাপারে আমাদের সমর্থন রয়েছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উত্তরবঙ্গের সকল জেলায় পণ্যবাহী পরিবহনের ধর্মঘট চলবে। তিনি জানান, হঠাৎ করেই আমরা কঠোর কর্মসূচীতে যাইনি। যেসব সমস্যার কথা উল্লেখ করে কর্মসূচী আহ্বান করা হয়েছে সেগুলো সমাধানে অনেক আগে থেকে আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা করা হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত কঠোর কর্মসূচী ছাড়া কোন উপায় ছিল না। ধর্মঘটের কারণে দেশের পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সরকার আজকের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করবে। স্থানীয় বা কেন্দ্রীয় নেতাদের ডেকে দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেই আমরা গাড়ি চালানো শুরু করব। কারণ কর্মসূচীর কারণে শ্রমিক মালিক থেকে শুরু করে সকল পর্যায়েই অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ ট্যাঙ্কলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শাজাহান সিরাজ জনকণ্ঠ’কে জানান, চলমান আন্দোলন কর্মসূচীর প্রতি আমাদের কোন সমর্থন নেই। আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। কারণ শ্রম মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী ট্রাঙ্কলরি এখন পৃথক শিল্প। আমাদের নাম ব্যহবার করা হচ্ছে এই কর্মসূচীতে। তিনি জানান, কর্মসূচীর কারণে আমাদের পণ্যবাহী পরিবহনগুলোও বিভিন্ন জেলায় চলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ২য় দিনের পরিবহন ধর্মঘট স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, সাত দফা দাবিতে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি ও কাভার্ডভ্যান পরিবহন ধর্মঘটের অংশ হিসেবে কুড়িগ্রামে ২য় দিনেও পরিবহন ধর্মঘট পালিত হচ্ছে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ পরিবহন ধর্মঘট মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংগঠনের নেতারা। পরিবহন ধর্মঘটের ফলে বন্ধ রয়েছে সোনাহাট স্থল বন্দরের পন্য আনা নেয়া। এ অবস্থায় মালামাল পরিবহন করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানিকারকসহ জেলার ব্যবসায়ীরা। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৭ সংশোধনসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে ট্রাক, ট্যাঙ্কলরি, কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন এ ধর্মঘট পালন করছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিংয়ের নামে সড়ক মহাসড়কে হয়রানি বন্ধ, গাড়ির বাম্পার সাইড এঙ্গেল ও হুক খোলার সরকারী আদেশ প্রত্যাহার, সড়ক মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধসহ ৭ দফা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
×