ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যৈষ্ঠের আকাশে মেঘের আচরণও বৈরী

খেয়ালি প্রকৃতি, আষাঢ়ের আগেই থোকায় থোকায় কদম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৩ মে ২০১৭

খেয়ালি প্রকৃতি, আষাঢ়ের আগেই থোকায় থোকায় কদম

সমুদ্র হক ॥ অচেনা খেয়ালি প্রকৃতি। জ্যৈষ্ঠের আকাশে মেঘের আচরণও বিরূপ। মেঘ দেখে কিছুই বলা যায় না। দিনে অগ্নিতাপে ঘাম ঝরে দরদর। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কালো মেঘ। চারদিকে ছেয়ে যায়। চাঁদকে ঢেকে দেয়। গ্রহ তারা লুকোয়। কখনও এক পশলা বৃষ্টি নেমে থেমে গিয়ে ওঠে ঝড়। তার আগে ধূলিঝড়। শিলাপাতও হয়। মাঠে ক্ষতি ফসলের। জলবায়ুর এমন খেয়ালিতে প্রকৃতিও হিসাব মেলাতে পারছে না। বলা নেই কওয়া নেই আষাঢ় মাসের পদধ্বনীর আগেই থোকায় থোকায় ফুটেছে কদম। এত কদম একসঙ্গে ফোটা দেখা যায়নি এর আগে। নীপবনে কদমের ডাগর চোখের চাহনী দেখে পথিক ভ্রান্তি বিলাসের মধ্যে পড়ে। মেঘ না দেখে ভাবে সত্যিই এত কদম ফুটেছে! সুরও ওঠে ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথি তলে এসো করো ¯œান নবধারা জলে....’। রোমান্টিক মনের তরুণ-তরুণীরা ভাবতে থাকে : এই বুঝি নীপবনে কৃষ্ণের বাঁশির মোহনীয় সুরে রাধা ঘর থেকে বের হয়ে নাচন শুরু করল...। নাচনের মতোই এবারের মৌসুমগুলো। সাজানো ঋতু কখন যে ছিটকে পড়েছে তা আবহাওয়াবিদগণও আঁচ করতে পারছেন না। যত দোষ নন্দঘোষের মতো দায় গিয়ে পড়ছে জলবায়ুর ওপর। ঘুরে ফিরে একই কথা- কার্বন নিঃসরণ, ওজন স্তর ফুটো হয়ে গিয়েছে, গ্রীন হাউস এফেক্ট সাগরের উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে-নানা কিছু। আম জনতা (সাধারণজন) এগুলো বোঝে না। চৈত্রের শেষ ভাগ থেকেই এবার বর্ষার আনাগোনা। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা এক সঙ্গে যুদ্ধ করছে। প্রকৃতির এই অসম যুদ্ধে কে হারে কে জেতে এমনই অবস্থা। কখনও বর্ষার মেঘ। কখনও কুয়াশা। আবার সাদা মেঘে তাপদাহ। অগ্নি হাওয়া। এর মধ্যেই গভীর রাতে ঠা-া। আবহাওয়াবিদদের কথা : এটা বিকিরিণজনিত ঠা-া। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এক অশনি সঙ্কেত দিয়েছে: এই বছর হবে বিশ্বে সর্বোচ্চ উষ্ণায়নের বছর। বড় প্রভাব পড়বে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ ও ভারতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ বইতে থাকবে। যা হবে দীর্ঘস্থায়ী। ভারতের আবহাওয়া গবেষণা বিভাগ ইতোমধ্যে তীব্র দাবদাহের সতর্কতা দিয়েছে। যা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশেও দাবদাহের সঙ্গে দেখা দেবে তীব্র খরা। বৈশ্বিক উষ্ণতার আভাস আরও খানিকটা ভাবিয়ে তুলেছে। দেশে বর্তমানে কোন ঋতুই ঠিকমতো চেনা যায় না। শরত হেমন্ত ঋতু শুধু কাব্যে। গ্রীষ্মটা একটু জানান দেয়। এবারের গ্রীষ্মের দাবদাহ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে তা ভাবছেন জলবায়ুর বিজ্ঞানীগণ। প্রকৃতির স্বাভাবিক চিত্র ক্রমেই সরে যাচ্ছে। দিনে দিনে উষ্ণ হচ্ছে বায়ুম-ল। বিজ্ঞানীগণ যে ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন তা হলো : গ্রীষ্ম ম-লীয় পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তনে (যাকে বলা হয় এল নিনো) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত এক মিটার বেড়ে তাপমাত্রা বিশ্বের বিপজ্জনক মাত্রার একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। যা ডেকে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয়। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার খবর : চলতি বছর পূর্বের সকল সময়ে চেয়ে তাপমাত্রা গড়ে ১ দশমিক ২ ডিগ্রী বেড়ে যেতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা প্রতি বছর একটু করে বাড়ছে। নিকট দিনে অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। যা হতে পারে ভয়ঙ্কর। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এটমোসফেরিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছরকে বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার আভাস দিয়েছে। যার প্রভাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় কৃষি ভূমি, জীববৈচিত্র্য, রোগব্যাধিসহ নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। সেচের পানি উত্তোলন সহজ হবে না। পানির স্তর যার পর নেই নিচে চলে যাবে। প্রভাব পড়বে আবাদ কার্যক্রমে। ভূগর্ভ থেকে সুপের পানি প্রাপ্তি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে না। এই অবস্থায় সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে রাজধানী ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের মানুষ।
×