ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৩ মে ২০১৭

নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে দলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় বাংলাদেশে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ। অথচ আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা আমাদের নেত্রীর থেকে অনেক নিচে। তাই নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে আমাদের দলের জনপ্রিয়তাও বাড়াতে হবে। আর বিএনপিকে দুর্বল মনে করবেন না। আওয়ামী লীগ বিরোধী সকল শক্তির একটা প্ল্যাটফর্ম আছে। এরা সবাই বিএনপির ব্যানারে আছে। এটা মনে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দক্ষিণের কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকম-লীর সভায় দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোথাও অন্য কোন দল থেকে যোগদান আওয়ামী লীগে স্বীকৃত হবে না। দল ভারী করতে গিয়ে কেউ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আওয়ামী লীগে ভেড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কার্যালয় উদ্বোধনকালে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এখন আমাদের সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন করছেন না। প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন করলে আমাদের কোন চিন্তাই ছিল না। তার (শেখ হাসিনা) জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও কেউ নাই। ’৭৫ পরবতীকার্লে এ পর্যন্ত শেখ হাসিনার মতো জনপ্রিয় নেতা তৈরি হয়নি। কিন্তু ইলেকশন তো ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতিতে হবে। মহানগর নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি পাড়া-মহল্লার শিক্ষিত গুণীজনসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দলের সদস্য করার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মূল ফোকাস হবে বাংলাদেশের ফাস্ট টাইম ভোটার। ১৮ বছর হয়ে গেছে এমন অসংখ্য তরুণদের সদস্য করতে হবে। ফাস্ট টাইম ভোটাররা হচ্ছে আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মূল টার্গেট। এদের সদস্য করতে হবে। কারণ একবার সদস্য হয়ে যায় তাহলে তাদের মনের মধ্যে একটা তাগিদ সৃষ্টি হয়ে যাবে। একটা আনুগত্য জন্ম হয়ে যাবে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। আমি এই দলের মেম্বার হয়েছি। তাই কাজটি অতি দ্রুত শুরু করতে হবে। আগামী ৩১ মের মধ্যে ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রদানের তাগিদ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন প্রজন্মের ভোটারদের পর সবার টার্গেট থাকবে আমাদের নারী সমাজ। কারণ দেশের অর্ধেক ভোটার হচ্ছে নারীরা। এদের মন জয় করতে হবে। নারীদের মধ্যেও সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। এই কাজগুলোর কথা আমি আগেভাগেই বলে গেলাম। আপনারা এই কাজগুলো করবেন। এখন থেকেই টাইমফ্রেম ঠিক করুন। তিনি বলেন, কালারফুল অফিস উদ্বোধন করলেই সংগঠন কালারফুল হবে না। ডিজিটাল উদ্বোধন করলেই আমাদের সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে যাবে না। মন-মানসিকতা না বদলালে ডিজিটাল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে না। কাজেই আমাদের নিজেদেরও পরিবর্তন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমাকে খুশি করার কোন প্রয়োজন নেই। এই পদে যতক্ষণ আছি ততক্ষণ আমাকে নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করবেন। আবার যখন পদ থেকে চলে তখন সালাম দিতেই কষ্ট হবে। আমরা একজনকে নিয়ে ভাবি। আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। আর এখন আমাদের সব কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এবং সাদেক খান। কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া যোগদান নয়Ñ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোথাও অন্য কোন দল থেকে যোগদান আওয়ামী লীগে স্বীকৃত হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগে কোনভাবেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আসতে পারবে না। দল ভারী করতে কেউ সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে আওয়ামী লীগে ভেড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সোমবার দুপুরে ধানম-িস্থ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আরেকটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়ন করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। এই স্বপ্নে আমরা আমাদের কর্মকা- দিয়েই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিরোধ মীমাংসায় স্থানীয় নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে সালিশ করার বিপক্ষে দলের সম্পাদকম-লীর সদস্যরা। তাদের মতে, তৃণমূল নেতাদের ঢাকায় ডেকে না এনে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় জেলায় গিয়ে সভা করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্যার সমাধান করা উচিত। তাহলেই সুফল পাওয়া যেত। তা না করে ঢাকায় ডেকে এনে মীমাংসার চেষ্টা করায় উল্টো তৃণমূলের বিরোধ বাড়ছে, স্থানীয় রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি হচ্ছে। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাহলে আমাদের বিকল্প ভাবা উচিত। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়ই হচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিষবাষ্পকে উপড়ে ফেলার এজেন্ডা আমাদের আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে সদস্য সংগ্রহ অভিযান আমরা শুরু করেছি। সদস্য নবায়নেরও সূচনা করেছি। আমরা এভাবে এখন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সদস্য সংগ্রহ এবং সদস্য নবায়নের কাজ করব। সদস্যপদ নবায়নের পরই নতুন সদস্য অভিযান শুরু হবে। দলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দলে কোনভাবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আসতে পারবে না। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কেউ দলে ভিড়িয়ে দল ভারী করার অবস্থা থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। অন্য কোন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের ব্যাপারে কেন্দ্রের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে। অন্য কোন দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে গেলে অবশ্যই কেন্দ্রের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে। কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া কোথাও কোন যোগদান আমাদের পার্টিতে স্বীকৃত হবে না। সদস্য নবায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে শুদ্ধি অভিযান চলবে এমন ইঙ্গিত দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতোপূর্বে নানাভাবে যারা দলে ঢুকে গেছে, তারা যদি সদস্য না হয় তাহলে নতুন করে সদস্য হতে গেলে সেখানে যাচাই-বাছাই হবে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা যার যার এলাকা অনুযায়ী এই বিষয়গুলো মনিটরিং করবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশে অপরাজনীতির সূচনা তো আপনারাই (খালেদা জিয়া) করেছেন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত অপরাজনীতি হয়েছে সবগুলো বিএনপি এবং তার দলের লোকেরাই করেছে। কাজেই অপরাজনীতি-অপকর্ম এসব নিয়ে আপনাদের মুখে বড় বড় কথা মানায় কি? দলের সবাইকে নৌকার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, এখন কেউ যেন কোথাও কোন বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে। কেউ যেন প্রার্থিতা ঘোষণা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করতে পারে। অহেতুক ভাল প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থিতা ঘোষণা করে সমস্যা সৃষ্টি করতে না পারে, নির্বাচনকে সামনে রেখে যেন বিভেদ না হয় সে ব্যাপারেও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও আসন্ন রমজান মাসে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দলের পক্ষে অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়াও রজমানে যাতে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতায় মধ্যে সহনীয় থাকে সে জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকম-লীর বৈঠকে এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আবদুস সবুর, সুজিত রায় নন্দী, আফজাল হোসেন, আবদুস সাত্তার, শামসুন্নাহার চাঁপা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×