ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎপাদন স্বল্পতার জন্য লোডশেডিং করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৩ মে ২০১৭

উৎপাদন স্বল্পতার জন্য লোডশেডিং করা হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার॥ চার দিনের মধ্যে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সরাদেশে ব্যাপক লোডশেডিংয়ের মধ্যে সোমবার জরুরী বৈঠকে বসে বিদ্যুত বিভাগ। বৈঠকে পিডিবি বিতরণ প্রতিষ্ঠানের ওপর দোষ চাপালেও বিতরণকারী কোম্পানি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে উৎপাদন স্বল্পতার কারণে লোডশেডিং করা হচ্ছে। বৈঠকে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসসহ বিদ্যুত বিভাগ, পিডিবি এবং বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বলা হয় পিডিবি সম্প্রতি সরকারকে জানিয়েছে, যে পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন হচ্ছে তা গ্রাহকের জন্য যথেষ্ট। এত বিদ্যুত দেশে প্রয়োজনও নেই। কিন্তু এখন এসে কেন দুর্ভোগে পড়তে হলো জানতে চাওয়া হয়। এ সময় পিডিবির পক্ষ থেকে সদস্য উৎপাদন আবুল বাশার খান বলেন বিতরণ সীমাবদ্ধতা এবং কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের স্বল্পতাকে উৎপাদন কম হওয়ার জন্য দায়ী করেন তিনি। বৈঠকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, গতকাল (রবিবার) আরইবির চাহিদা ছিল ৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট কিন্তু সরবরাহ পেয়েছে ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের লোডশেডিং করতে হয়েছে। বৈঠকে অন্য বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরাও চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৈঠকে বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চার দিনের সময় বেঁধে দেন। তিনি কোন কোন এলাকায় একেবারে শূন্য লোডশেডিং এবং কোন কোন এলাকায় তীব্র লোডশেডিং করার ক্ষোভ প্রকাশ করে এর জবাব চান বিদ্যুত সচিবের কাছে। বৈঠকের পর নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুত পরিস্থিতি আগামী চার দিনের মধ্যে উন্নতি হবে। টাওয়ার ভেঙ্গে যাওয়া, ১০টি বিদ্যুত কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণে থাকা ও গ্যাসের স্বল্পতার জন্য চাহিদামতো বিদ্যুত দেয়া যাচ্ছে না। চার দিনের ভেতর রক্ষণাবেক্ষণে থাকা বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসবে। রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি ভাল থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা উচিত। লোড ম্যানেজমেন্টে লোডশেডিং সমানুপাতিক হারে করতে হবে। গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানের আওতায় এ্যাকশন প্ল্যান করার গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রতিটি বিতরণ সংস্থার ডিম্যান্ড অনুসারে বিদ্যুত উৎপাদন করা প্রয়োজন। লোডশেড করতে হলে পূর্বেই গ্রাহকদের জানাতে হবে। তিনি রোজার সময় সার্বিক পরিস্থিতি উন্নত করতে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার এবং মন্ত্রণালয় থেকে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশনা দেন। উন্নত ডিম্যান্ড ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যুত সাশ্রয়ে গ্রাহকদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে বিতরণ সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানান। যে ১০টি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয় মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট, সামিট বিবিয়ানা ৩৪১ মেগাওয়াট, খুলনা সিপিপি ৭২ মেগাওয়াট, সিরাজগঞ্জ ২১০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ সাউথ ৩৬০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ ৭৫ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল-১ এ ৪০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল-৫ এ ১৯০ মেগাওয়াট, সান্তাহার পিকিং ৫০ মেগাওয়াট এবং হাটহাজারি পিকিং ৯৮ মেগাওয়াট। দশ বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকায় এক হাজার ৮৮৬ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হচ্ছে। এছাড়া গ্যাসের স্বল্পতার কারণে আরও ৮৯৩ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো রমজানের জন্য প্রস্তুত করতে নিয়মিত সংরক্ষণ করা হচ্ছিল। তবে এর সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে। বৈঠকে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণরত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুগ্ম সচিব শেখ ফয়েজুল আমীন এবং এলএনডিসি বিতরণ সংস্থাগুলোকে কিভাবে এবং কি পরিমাণ বিদ্যুত দিচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুগ্ম সচিব এ কে এম হুমায়ুন কবীরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
×