ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জ্যৈষ্ঠের হাঁসফাঁস গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত- যেন লু হাওয়া বইছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৩ মে ২০১৭

জ্যৈষ্ঠের হাঁসফাঁস গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত- যেন লু হাওয়া বইছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা মিশে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়িয়ে তুলছে। ফলে ক্রমেই জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। একফোঁটা বৃষ্টির আশায় আকাশের দিকে চেয়ে আছে সবাই। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মে মাসে এ সময়ে ক্রমেই ব্যারোমিটারের পারদ উপরে উঠে যাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে বাতাসে মিশে থাকা আর্দ্রতা। ফলে গরমের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোমবার সারাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর সকাল থেকে বাতাসের আর্দ্রতার পরিমাপ ছিল ৯০ শতাংশ। এই দুইয়ে মিশে গরম আরও ভ্যাপসা হয়ে পড়ছে বলে তারা জানান। একই সঙ্গে তারা উল্লেখ করেন সামনে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে বয়ে যাওয়া মৃদু তাপপ্রবাহ রূপ নিতে পারে তীব্র তাপপ্রবাহে। তারা জানায়, জ্যৈষ্ঠের শুরুতে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপপ্রবাহ। যা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে বলে আভাস দিয়েছে। ঢাকা ও খুলনা বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চাঁদপুর, মাইজদীকোর্ট, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৌসুমের চতুর্থ তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্র বেড়ে সোমবার ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর গোপালগঞ্জের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রীর ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে দেশে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রী সেলিসিয়াস পার হলে তা তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নেবে। তারা জানায়, রাজশাহী, রংপুর খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বেশিরভাগ জায়গায় তাপমাত্রা বেড়ে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠে গেছে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার খুলনা এবং যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, প্রতিবছর এই সময় মূলত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশে গরমের মাত্রা অনেকে বেড়ে যায়। মে’র শেষ দশক থেকে শুরু করে গরমের এই ভয়াবহ তা-ব মূলত জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত চলে। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। জুনের প্রথম সপ্তাহে দেশের ভেতরে মৌসুমি বায়ু প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমি বায়ু দেশের ভেতরে প্রবেশ করলেই বৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। এদিকে তীব্র গরমের কারণে গত কয়েকদিন ধরেই অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনজীবন। ঢাকার শহরে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সারাদেশের মানুষ প্রচ- গরমের বৃষ্টির প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন তারা। এদিকে গরমের সঙ্গে যোগ হয়েছে লোডশেডিং। বিশেষ করে দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই গরমের সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই বিদ্যুত পাচ্ছে না তারা। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা শুরু হয়েছে। এদিকে বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। প্রচ- গরম থেকে মুক্তির জন্য নানা উপায় অবলম্বন করছেন তারা। বিশেষ প্রয়োজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যারা অফিস আদালতের প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের যন্ত্রণাটাও চরমে উঠছে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে পড়ছে। কেউ আবার গরমের যান্ত্রিক জীবনের একটু শান্তির আশায় ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করছেন। আবার ডাবের পানি ফলের জুস খেয়েই শান্তির পরশ খুঁজছেন অনেকে। দিনের মধ্য ভাগে রাজধানীতে যানচলাচল কমে যাচ্ছে অনেক। রিক্সাওয়ালা গরমের মধ্যে যাত্রী পরিবহনেও হাঁফিয়ে উঠছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে এই সুযোগে ডাবল ভাড়া আদায় করছেন। গরমের কারণে গন্তব্যস্থানে যেতে চাচ্ছে না রিক্সা ও সিএনজি। ফলে জনগণের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত এই গরমের কারণে বেশি সমস্যায় পড়ছে শিশুরা। ভ্যাপসা গরমের কারণে রাতে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে। বারবার ঘেমে যাওয়ার কারণে অনেকে আবার সর্দি-কাশি এবং ঘামাচিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডাক্তার জানিয়েছেন এই অবস্থায় শিশুদের হাম, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গরমে হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। তারা জানান অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ চলে যাচ্ছে। তাই সব বয়সী মানুষের উচিত ওরস্যালাইন খাওয়া। সকাল নয়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ঘরের বাইরে গেলে ছাতা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে শাক-সবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে। এদিকে প্রচ- গরমে সারাদেশে হাঁসফাঁস অবস্থা চললেও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। তারা উল্লেখ করেছেন দু-একদিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে গরমের ভ্যাপসা ও গুমোট অবস্থা আরও বেড়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিফতরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলছেন, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর নিচে থাকলে মাঝারি মাপের তাপপ্রবাহ বলে বর্ণনা করা হয়। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এখন তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাতাসের আর্দ্রতা যা গরমের ভাবকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, এ সময় সাধারণত গরম এ রকমই হয়। এ সময় বৃষ্টি কম হয়। তাপমাত্রা বেশি থাকে। তাপমাত্রার সঙ্গে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। সে কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি জানালেন এখন ঢাকা, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগ পুরোটা তাপ প্রবাহের আওতায় রয়েছে। এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, পাবনা এবং অন্যদিকে নোয়াখালী ও কুমিল্লাতেও হিট চলছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রীর ওপর তাপমাত্রা গেলে সেটিকে প্রবল তাপপ্রবাহ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আবহাওয়া বলছে, এখন যে তাপমাত্রা আছে ত আগামী দুই থেকে তিনদিন বজায় থাকবে। এর কোন পরিবর্তনের সম্ভাবনা তারা দেখছেন না। তারা উল্লেখ করেছেন এবারের এপ্রিল মাসের শেষ সময়ের এই বৃষ্টিপাত প্রায় ৪০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে এর আগে ১৯৮১ সালে এপ্রিল মাসের এই সময়ে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। সে সময় এপ্রিল মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬৮ পার্সেন্ট বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। এবারে এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হয়ে মে মাসের শুরুতে শুরু হয়েছে এই হিট ওয়েভ। যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে।
×