ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চরমপন্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’ ;###;মুসলিম উম্মার বিভেদ বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের আহ্বান

আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনে শেখ হাসিনা ॥ বন্ধ করতে হবে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ মে ২০১৭

আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলনে শেখ হাসিনা ॥ বন্ধ করতে হবে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোরভাবে জঙ্গীবাদ মোকাবেলা নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থায়নের যোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রবিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই।’ খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এটি সকলের জন্য বিজয়-বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে।’ অনুষ্ঠানে সৌদি আরবের বাদশাহ ও দুটি বড় মসজিদের খাদেম সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও চরমপন্থা বিশ্বের শান্তির জন্য কেবল বড় হুমকিই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও হুমকি। তিনি বলেন, ‘এটি যে কোন দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সকল প্রকার চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সর্বদাই যে কোন ধরনের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উৎসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম কখনও সহিংসতা বা হত্যাকা- সমর্থন করে না এবং ‘আমরা যে কোন ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্ম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ইরাক ও সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় সন্ত্রাসী সংগঠনসমূহের অভিযান এবং সদস্য সংগ্রহের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুক্তরাষ্ট্রের মার্শাল পরিকল্পনা অনুসরণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর জন্য একটি পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা আশঙ্কা করে বলেন, বিশ্বব্যাপী শরণার্থী সঙ্কটের কারণে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বেড়ে যেতে পারে। কারণ, শরণার্থী সঙ্কট সন্ত্রাস ও সহিংসতার একটি আশঙ্কার উৎসে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লানের লাশের ছবি অথবা আলেপ্পোতে ওমরানের রক্তাক্ত মরদেহ প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। একজন মা হিসেবে আমাকেও এ ছবি কঠিনভাবে নাড়া দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, শরণার্থীদের বেদনা আমি বুঝি। কারণ, আমিও শরণার্থী ছিলাম। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের বন্দিত্ব এবং ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের শাহাদাত বরণের পর প্রবাস জীবনের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ৬ বছর আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে শরণার্থী ছিলাম। তাই শরণার্থীদের বেদনার বাস্তবতা আমি বুঝতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনী জনগণের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি ও বঞ্চনা নতুন প্রজন্মের মনে অন্যায়-অবিচারের প্রতি ঘৃণার মনোভাবের সৃষ্টি হয়। তাই একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গীবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে তার সরকার জনগণকে যুক্ত করে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবেলা করছি। বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব গোষ্ঠী কোন কোন মহল থেকে সমর্থন পেয়ে আসছিল। পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সমাজের সকল শ্রেণী বিশেষ করে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ছাত্র এবং দেশব্যাপী মসজিদের ইমামদের সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার সুযোগ পেয়ে তিনি আনন্দিত। তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বাদশাহ সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার জন্যও বাদশাহ সালমানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী জেদ্দা পৌঁছেছেন বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত মোহাম্মদ (স)-এর রওজা মোবারক জেয়ারত শেষে আজ সন্ধ্যায় মদিনা থেকে জেদ্দা পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ ফ্লাইটে সাতটা ২৫ মিনিটে বাদশাহ আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছলে ডেপুটি গবর্নর, মেয়র এবং পুলিশ প্রধান তাঁকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দর থেকে শেখ হাসিনাকে মোটর শোভাযাত্রাসহকারে মক্কায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদের আমন্ত্রণে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে যোগদানে ২১ মে সৌদি আরব পৌঁছেন। রবিবার সৌদি রাজধানীতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের সফর শেষে আগামীকাল দেশে ফিরবেন।
×