ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৩ মে ২০১৭

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি

সরকারী ভর্তি নীতিমালা মেনে রাজধানীসহ সারাদেশের কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। দেশে এবারই প্রথম অনলাইন ও এসএমএসের মাধ্যমে ফিসহ আবেদনপত্র জমা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও বেজায় খুশি। কেননা, এতে কলেজ থেকে কলেজে এই ব্যাপক রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ছোটাছুটির ঝক্কিঝামেলা নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে এটিও একটি শুভ লক্ষণ বৈকি। উল্লেখ্য, আজকাল খুব সহজেই ঘরে বসে জানা যায় এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার ফল। ৯ মে থেকে শুরু হওয়া এই ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে সব সরকারী-বেসরকারী কলেজে ২৬ মে পর্যন্ত। প্রত্যেক শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৫টি থেকে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের অনুকূলে আবেদন করতে পারছে। গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে ৮ লাখ ২০০ এবং এসএমএস করেছে ২ লাখ ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী। মোট আবেদন জমা পড়েছে ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৪৯টি। চলতি বছরের মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ছাড়াও ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পাস করা শিক্ষার্থীরাও পাবে ভর্তির সুযোগ। ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে। অবশ্য হাতেগোনা কয়েকটি নামী-দামী কলেজ আদালতের রায় নিয়ে নিজস্ব নিয়মে অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে এই সংখ্যা নগণ্য বলা চলে। সরকারী নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া এসএসসির ফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। এই নীতি সরকারী-বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে বাস্তবতা হলো, দেশের সব কলেজের মান একই রকম নয়। নামী-দামী কলেজের পাশাপাশি অনেক অখ্যাত, প্রায় অজ্ঞাত কলেজও আছে। আবার শহর ও গ্রামের শিক্ষার মানও এক রকম নয়। বরং বৈষম্য বিরাজমান। সর্বোপরি দেশে গত কয়েক বছরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত এসএসসি পাসের সংখ্যা আশাব্যঞ্জকহারে বাড়লেও পরীক্ষার ফল ও মান নিয়ে প্রশ্ন আছে বিস্তর। সর্বোপরি দীর্ঘদিন থেকে নামী-দামী কলেজসহ অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসৃত হচ্ছিল পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে। সরকার ঘোষিত নতুন ভর্তি নীতিমালায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের এই বিড়ম্বনা এবং ভোগান্তির অবসান ঘটেছে। কমেছে ভর্তিবাণিজ্যও। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয়। আর তা হলো প্রায় সব শিক্ষার্থী চায় সেরা কলেজে ভর্তি হতে। এক্ষেত্রে অভিভাবকরাও কিছু কম যান না। সে অবস্থায় স্বভাবতই বাড়ে তীব্র প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে নামী-দামী কলেজে ভর্তি হতে প্রায় সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আদা-জল খেয়ে লেগে পড়ে। অনেক কলেজের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মসহ ভর্তিবাণিজ্যের অভিযোগও ওঠে বৈকি। এসবের মধ্যে গুটিকতক ভাল কলেজ চোখে পড়ে, যাদের পরীক্ষা ও ভর্তি পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ। এসব কলেজের কর্তৃপক্ষ প্রকৃতই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে চান মেধার মূল্যায়নের ভিত্তিতে। এও তো সত্যি যে, বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদ দিলেও সব সরকারী কলেজের শিক্ষার মান একরকম নয়। ফলে প্রতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিয়ে একদিকে সৃষ্টি হয় টানাপোড়েন, অন্যদিকে প্রাণান্ত ঘটে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। প্রতি বছরের এই বিতর্ক ও বিড়ম্বনা এড়াতে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত ভর্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বিশেষ করে শিক্ষাবিদ-চিন্তাবিদের সঙ্গে জরুরী বৈঠকে বসে একটি সুষ্ঠু ও সমন্বিত ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন করা। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা একটি অধিকার। কাউকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আবার এর মানও অক্ষুণœ রাখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় পর্যায়ক্রমে হলেও অন্তত অধিকাংশ স্কুল-কলেজের অবকাঠামোসহ শিক্ষা ও পাঠদানের মানোন্নয়ন করা। এর পাশাপাশি সরকারের উচিত হবে ডিপ্লোমা শিক্ষা তথা পলিটেকনিক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা।
×