ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রঙিন বিদায় লাম-এ্যালানসোর

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২২ মে ২০১৭

রঙিন বিদায় লাম-এ্যালানসোর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন। চলতি মৌসুমই (২০১৬-১৭) শেষবার খেলবেন, শেষ করবেন পেশাদার ক্যারিয়ার। অবশেষে সেটাই হলো। শনিবার জার্মান বুন্দেসলিগায় বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছেন ফিলিপ লাম ও জাবি এ্যালানসো। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে বুটজোড়া পাকাপাকিভাবে তুলে রাখলেন এই দুই তারকা। শেষ ম্যাচে জিতে শেষটাও রাঙিয়ে গেলেন লাম-এ্যালানসো। স্বাভাকিভাবেই মিউনিখের এ্যালিয়েঞ্জ এ্যারানায় বাভারিয়ানদের জন্য ছিল আবেগের সন্ধ্যা। শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচটি ছিল তাদের জন্য শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। তবে সব ছাপিয়ে লাম ও এ্যালানসোর বিদায়টাই মুখ্য হয়ে ওঠে। কারণ এ দু’জন এ রাতে শেষবারের মতো পেশাদার ফুটবল খেলেছেন। বয়স যে খুব বেশি তা নয়, মাত্র ৩৩ বছর। যে পারফর্মেন্স তাতে হয়ত ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপও খেলতে পারতেন। কিন্তু নিজেকে কি দুর্দান্তভাবেই না নিয়ন্ত্রণ করেছেন লাম। ২০১৪ সালে জার্মানিকে দুই যুগ পর বিশ্বকাপ জেতানো এই অধিনায়ক ওই বছরের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন। অনেকটা আচমকাই জাতীয় দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন তারকা এই ফুলব্যাক। তখন বলেছিলেন চালিয়ে যাবেন ক্লাব ফুটবল। কথা অনুযায়ী এতদিন প্রাণের ক্লাব বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা চালিয়ে গেছেন। তবে এবার ক্লাবের মায়াও ছিন্ন করলেন জার্মান তারকা। জাতীয় দল থেকে অবসরের তিন বছর পর এবার সবধরনের ফুটবল থেকে অবসর নিলেন লাম। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অবশ্য পুরো ক্যারিয়ারে লাম খুব একটা সহজ পথ পাড়ি দিতে পারেননি। প্রায় সময়ই তাকে ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। তবে পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বেয়ার্ন মিউনিখের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে শেষটাও এখান থেকেই করলেন। এই ক্লাবের হয়ে তিনি খেলেছেন পাঁচ শতাদিক ম্যাচ। মাঝে অবশ্য দুই মৌসুমের জন্য ধারে স্টুটগার্টে খেলেছেন। ২০০৪ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর জার্মানির হয়ে লাম খেলেছেন ১১৩ মাচ। ১৯৯৫ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি বেয়ার্নে যোগ দেন। ওই সময় নিজেকে এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে পরিচিত করেছিলেন। লাম নিজেকে সেরা প্রমাণে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মাঠে তার ওপর পুরো দলের আস্থা আনতে সক্ষম হয়েছেন। আর সে কারণেই জার্মান গণমাধ্যমে তাকে ‘মি: ১০০ পারসেন্ট’ নামে আখ্যায়িত করতেও ভুল করেনি। জার্মানির হয়ে লাম পাঁচটি গোল করেছেন। কিন্তু ২০০৮ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে তুরস্কের বিপক্ষে ৯০ মিনিটে তার দেয়া গোলে জার্মানদের জয়টিকে এখনও সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে ধরে রেখেছেন লাম। বেয়ার্নের হয়ে লাম সাতটি বুন্দেসলিগা শিরোপা, ৬টি জার্মান কাপ, তিনটি জার্মান সুপার কাপ ও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ, ইউরোপিয়ান সুপার লীগ ও ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছেন। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ডাচ মিডফিল্ডার মার্ক ভ্যান বোমেলের কাছ থেকে তিনি বেয়ার্নের অধিনায়কত্ব লাভ করেন। জার্মানির হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার দিক দিয়ে চতুর্থ স্থানে লাম। তিনি খেলেছেন ১১৩টি ম্যাচ। দেশটির হয়ে সর্বোচ্চ ১৫০টি ম্যাচ খেলেছেন লোথার ম্যাথাউস। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিরোসøাভ ক্লোসা এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৩৭টি ম্যাচ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা মিডফিল্ডার লুকাস পোডলস্কি খেলেছেন ১১৬টি ম্যাচ। এদিকে অবসরের পর জীবনটা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন তারকা মিডফিল্ডার জাভি এ্যালোনসো। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে লিভারপুল, রিয়াল মাদ্রিদ ও বেয়ার্ন মিউনিখের হয়ে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও পাঁচটি লীগ শিরোপা ছাড়াও স্পেনের হয়ে বিশ^কাপ ও দুটি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে তার। অবসরের পর এখন অনেকটাই অবসর জীবনযাপন করবেন ৩৫ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। এ্যালোনসো বলেন, ফুটবলার হিসেবে এই সময়ে এসে অবসরের সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমি দারুণ সন্তুষ্ট। এখানে অনেক বেশি আবেগ জড়িত। এই ম্যাচটিতেও সবকিছুই জড়িয়ে ছিল। আবেগ, স্মৃতি, কষ্ট, সবকিছুই। কিন্তু একইসঙ্গে নিজের সন্তুষ্টি নিয়ে বিদায় নিচ্ছি, এটাই বড় কথা। আমি জানি ফুটবলকে অনেক মিস করব। কারণ এটা আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ ছিল। এই শূন্যতা পূরণ অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তারপরও জীবন ঠিকই চলবে, এটা আমার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, এখন এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই অনুভূতিটা দারুণ আনন্দের। এসব স্মৃতি আমার মনে অনেকদিন থাকবে। আমার মনে আছে আমি বাবার সাথে ফুটবল খেলেছি, আমার বাচ্চারাও আমার সাথে খেলার স্মৃতি মনে রাখবে। বিদায়বেলায় বেয়ার্ন মিউনিখের প্রতি শুভকামনা জানান তিনি।
×