ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে মাস্টার কার্ড

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ মে ২০১৭

নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে মাস্টার কার্ড

বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে জনগোষ্ঠীর সিংহভাগের অংশগ্রহণ যেমন জরুরী একইভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও এর কোন বিকল্প নেই। আর দেশের অর্ধাংশ নারী জাতির সরাসরি ভূমিকা ছাড়া অর্থনৈতিক খাত এগিয়ে যাওয়াও অনেকটা কঠিন সে কারণে উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে নারীকে সম্পৃক্ত থেকে আরম্ভ করে অর্থ যোগানদাতা বিভিন্ন সংস্থা নারী উন্নয়ন প্রকল্পে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে আসছে। সারা বাংলাদেশের সাধারণ এবং উদ্যোগী নারীদের নানামাত্রিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কিছু আর্থিক সংস্থা। মাস্টার কার্ড এবং ব্যুরো বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া নারীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সবধরনের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকও যথাযথ অবদান রাখতে উদ্যোগী হয়। গত ১৬ মে ২০১৭ মাস্টার কার্ড বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য চতুর্থ পর্যায়ে আর্থিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রকল্প উপস্থাপন করেছে। ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিন এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই কর্মসূচীকে সবার সামনে তুলে ধরা হয়। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৫ হাজার স্বল্প আয় এবং বেকার নারীকে আর্থিক এবং ব্যবসায়িক কর্মকা-ে প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেবে। যাতে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং আত্মবিশ্বাসী নারী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে। যা দেশের পুরো সমৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে এই মাস্টার কার্ডের সূচনা পর্বটি আজ থেকে চার বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে। সেই সময় বাংলাদেশের ৫৬টি তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে ৬টি ব্যাংক মাস্টার ডেবিট এবং মাস্টার ক্রেডিট কার্ড চালু করে। তখন ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫টি ডেবিট মাস্টার কার্ড এবং এক লাখ ২৮ হাজার ৪৮টি ক্রেডিট মাস্টার কার্ড চালু করানো হয়। এই কার্ড চালুর অগ্রণী ভূমিকা ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের। ব্যাংকটির মাধ্যমে এক লাখ ১৩ হাজার ১১৩টি ডেবিড কার্ড চালু করা হয়। আর ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের। প্রায় ৩৫ হাজার ৪৩১টি মাস্টার ক্রেডিট কার্ড আছে। বর্তমানে এই সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে। ১৬ মে ২০১৭ মাস্টার কার্ডের চতুর্থ পর্যায়ের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর শিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডি মিজানুর রহমান জোদ্দার। মাস্টার কার্ডের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকাস ভার্মা, মাস্টার কার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল এবং ব্যুরো বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জাকির হোসেন। শিতাংশু কুমার সুর সফল নারী উদ্যোক্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীরাও আজ জোরালো ভূমিকা রাখছে। এক সময় স্বপ্ন দেখতে ভয় পেত আর আজ তারা সমস্ত আধুনিক প্রযুক্তি থেকে আরম্ভ করে অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ সূচকে তাদের যুগান্তকারী অবদান দক্ষতার সঙ্গে প্রমাণ করছে। মাস্টার কার্ড এবং ব্যুরো বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার প্রক্রিয়ায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। আর এই চতুর্থ পর্যায়ের আর্থিক সহায়তা প্রদানসহ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নারী উদ্যোক্তা তৈরির সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের কর্মসূচীর আওতায় আর্থিকভাবে ঋণ গ্রহিতা এবং প্রশিক্ষিত ৪ জন সফল নারীকে অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়। যারা প্রত্যেকে এসেছে কুমিল্লা থেকে। তারা সেলাই মেশিন থেকে আরম্ভ করে কাপড়ের দোকান তৈরি করা, মাছ চাষে তাদের পুঁজি বিনিয়োগ করা এমনকি রূপচর্চার প্রতিষ্ঠান ‘বিউটি পার্লারেও তাদের সফল বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে যেমন সচল রাখছে একইভাবে নিজেরাও সচ্ছল জীবনযাপনে সংসার ধর্মে অবদান রেখে যাচ্ছে। পারিবারিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে দিয়ে সন্তান লালন- পালনেও যথার্থ অবদান রেখে যাচ্ছে। এ ধরনের একটি বৃহদাকার প্রকল্পের পাশে বাংলাদেশ ব্যাংকও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছে। যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের তাদের ক্ষমতা এবং দক্ষতা অনুযায়ী অগ্রগামী এবং স্বাবলম্বী নারী হিসেবে গড়ে তোলা। সুতরাং অর্ধাংশ নারী জাতির অগ্রযাত্রার পাশাপাশি পুরো অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনার ক্ষেত্রকে ও নতুন মাত্রা দেবে এই আশা করাই যায়।
×