ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এস এম মুকুল

বড় হচ্ছে দেশের বিস্কুটের বাজার

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২১ মে ২০১৭

বড় হচ্ছে দেশের বিস্কুটের বাজার

চায়ের সঙ্গে টা বা বিস্কুট এ জাতীয় কিছু না থাকলে যেন বাঙালীর আতিথ্যপনায় পূর্ণতা আসে না। তাছাড়া সকাল বিকাল কিংবা মধ্য দুপুরে চায়ের সঙ্গে অথবা হাল্কা ক্ষুধা মেটাতে বিস্কুটের জুড়ি নেই। একসময় মানুষ বিদেশ থেকে আমদানিকৃত বিস্কুট বেশি খেত। কিন্তু এখন বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভাল মানের বিস্কুট উৎপাদন করায় আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসছে। ভালমানের বিস্কুট মানে বিদেশী সেই ধারণার দিন পাল্টে গেছে। দেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন বিস্কুট কোম্পানি। দেশে ৫ হাজার কোটি টাকার বিস্কুটের বাজার। যা গড়ে প্রতিবছর ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আবার আমদানির বিকল্প দামী বিস্কুটও তৈরি করছে দেশের বিস্কুট কোম্পানিগুলো। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে প্রিয় ও পছন্দের রকমারি বিস্কুট শিল্প ডালপালা মেলছে আধুনিক সময় ও চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে। মিষ্টি, নুনতা, ঝালসহ হাজারো রকমের স্বাদ, আকার-আকৃতি, ধরন-বৈচিত্র্য ও বাহারি নামে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের বিস্কুট শিল্পটি। আর তাই দিন দিন সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকায় জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বিস্কুট। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামে গত পাঁচ বছরে বিস্কুট শিল্পে গড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে বিস্কুট শিল্পের প্রবৃদ্ধি গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ। তারপরও সুসংবাটি হলো- ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান ও বেকারিতে উৎপাদিত বিস্কুট ছাড়াই এ খাতে বার্ষিক টার্নওভার ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন- আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বিস্কুট শিল্পের বাজার দ্বিগুণ হবে। আইবিআইএস ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণে সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা- যার বার্ষিক বিস্কুট গ্রহণের হার ৪ কেজি, সবচেয়ে কম বাংলাদেশ- যার বার্ষিক বিস্কুট গ্রহণের হার ১ দশমিক ৮০ কেজি। ভারতে মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের হার ২ দশমিক ২ কেজি, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫০ কেজি ও জাপানে ৫ কেজি। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে শতাধিক কোম্পানির বার্ষিক উৎপাদন ৪ লাখ ৫০ হাজার টন। বিস্কুট উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অলিম্পিক, আল আমিন ব্রেড এ্যান্ড বিস্কুট, হক, নাবিস্কো, ড্যানিশ, বঙ্গজ, প্রাণ, রহমানিয়া, ডেকো, গ্লোব, ফু-ওয়াং, বনফুল, কিশোয়ান, থাই ফুড, বেঙ্গল, মাশাফি, নিউ অলিম্পিয়া, কোকোলা, পিনাকল, কাকলী, শিফা বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিজসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, বিস্কুট বাজারে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে দেশের দুই বড় শিল্পগ্রুপ কোহিনূর কেমিক্যালস ও বসুন্ধরা গ্রুপ। শিল্পের প্রবৃদ্ধি নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইবিআইএস ওয়ার্ল্ডের এক তথ্যে দেখা গেছে, ২০১০-১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিস্কুট শিল্পের বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১ শতাংশ, ভারতে ১০-১২ শতাংশ, পাকিস্তানে ১২-১৪ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়। আশার খবর হলো- মানসম্পন্ন বিস্কুটের উৎপাদন বাড়ায় আমদানি নির্ভরতাও কমে ১০ শতাংশেরও নিচে নেমে এসেছে। দেশের বার্ষিক বাণিজ্যিক উৎসব ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় দেশীয় ব্র্যান্ডের বিভিন্ন কোম্পানির বিস্কুটই বেশি বিক্রি হয়। কাজেই দেশের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেই চাহিদা মেটানো সম্ভব। দেশের বিস্কুটের বাজারের আকার প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গের বিস্কুটের বাজারের আকার তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। শিল্পটি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এ খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দুটোই বাড়ছে। বড় কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগেও গড়ে উঠছে অনেক বিস্কুট শিল্প। বিস্কুটের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার প্রতি মাসে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা যা বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় পাঁচ হাজারের বেশি বিস্কুট কোম্পানি রয়েছে। শতাধিক মধ্যম ও বড় কোম্পানিও আছে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ লাখ লোক জড়িত। গুণমান বৃদ্ধির ফলে প্যাকেটজাত বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিস্কুট দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১২৩টি দেশে সীমিত আকারে রফতানি করা হচ্ছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে বিস্কুট উৎপাদন হলেও বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলারের বিস্কুট আমদানি করেছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশ, ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে কিছু বিস্কুট এ দেশে আমদানি হয়। এসবের গুণগতমান দেশীয় বিস্কুটের কাছাকাছি হলেও দাম অনেক বেশি। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশেই অনেক ভাল মানের বিস্কুট উৎপাদন সম্ভব হবে। দেশের বিস্কুট শিল্প বিকাশের স্বার্থে আন্তর্জাতিক মানের বিস্কুট দেশে উৎপাদনে সহায়তা দিয়ে বিস্কুট আমদানি বন্ধ করতে হবে। তাহলেই বিরাট বাজার খুলে যাবে দেশের মাটিতেই।
×