ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুমি নোমান

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতির মোহনায় মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২১ মে ২০১৭

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  স্মৃতির মোহনায় মিলনমেলা

সকাল থেকেই অনুষদ ভবনের তৃতীয় তলায় সাজ সাজ রব! কেউ করছে আল্পনা, কেউ সাজাচ্ছে কক্ষগুলো আবার কেউ বা সিঁড়ি ও প্রবেশপথের কারুকার্যে ব্যস্ত সময় পার করছে। এগুলো কিন্তু কোন বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের জন্য নয়! ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রজতজয়ন্তী ও এ্যালামনাই সম্মেলনের জন্যই এতসব আয়োজন। গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ইতিহাসবিদদের এ মিলনমেলা। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯১ সালে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর নূর মুহাম্মাদ মিয়ার হাত ধরে মাত্র তিনজন শিক্ষক ও ৪৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিশ্ববিদ্যলয়ে এ বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে ১৩ জন দক্ষ ও মেধাবী শিক্ষক অনার্স ও মাস্টার্সে নিষ্ঠার সঙ্গে পাঠদান করে যাচ্ছেন। এ বিভাগটি ২৫ বছর পদার্পণ উপলক্ষে রজতজয়ন্তী ও এ্যালামনাই পুনর্মিলনীর দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজনের। শুক্রবার ও শনিবার এ অনুষ্ঠানে বিভাগের নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় মুখরিত হয়ে উঠে ক্যাম্পাস। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন শুক্রবার নবীন ও প্রবীণ শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারণ, নিবন্ধন ও উন্মুক্ত আলোচনা ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্মৃতিচারণের সময় তাদের অতীত ইতিহাস বলতে বলতে অনেকের চোখে আবার পানি দেখা যায়। আবেগঘন মুহূর্তে এ্যালামনাই প্রবীণরা তাদের নিজ নিজ বক্তব্যে বিভিন্ন স্মৃতির কথা তুলে ধরেন। ১৯৯২-৯৩ সেশনের জাহাঙ্গীর আলম এসেছিলেন দুই সন্তান শুয়াইব ও ফাতেমাকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে অনেক স্মৃতি মিশে আছে। যা কোন দিন ভোলার মতো নয়। তবে আমার সৌভাগ্য যে ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিতে হয়নি। এখানেই চাকরিরত আছি।’ দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ১১টায় অনুষদ ভবনের সামনে গ্রীষ্মের প্রখরতা উপেক্ষা করে নবীন ও প্রবীণদের অংশগ্রহণে মনোমুগ্ধকর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে সবাই আলোচনা সভায় মিলিত হয়। বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফের সভাপতিত্বে এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী রেজওয়ানা কান্তা ও ওয়ালিউর রহমান পিকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। ইতিহাস বিভাগ নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেছেন ‘আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন ও ইসলামের অপব্যাখা দিয়ে কিছু ধর্মব্যবসায়ী লোক যুব সমাজের মাঝে সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গীবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। ইসলামের মূল ইতিহাসকে ব্যাখ্যার জন্য ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।’ এছাড়া খুব কম সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষীত সমাবর্তনের আয়োজন করা হবে বলেও বলেন তিনি। বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া পারভীন অন্তরা বলেন ‘এই বিভাগ একটি পরিবারের মতো। এ্যালামনাই সম্মেলনের মাধ্যমে আজ আমরা ২৮টি সেশনের পরিবারের সবাই এক সঙ্গে মিলিত হতে পেরে ভাল লাগছে। আমরা একে ওপরের হৃদয়ের আবেগ অনুভূতি বিনিময় করতে পেরেছি। আমি চাই এই ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হোক।’ প্রবীণরা বর্তমানে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের তাদের কর্ম দিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে এ বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন নিজেদের মেধা ও মননকে কাজে লাগিয়ে দৃঢ় প্রত্যায়ের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিভাগের বর্তমান সভাপতি ছাড়াও প্রফেসর ড. রুহুল কে এম সালেহ, ড. এমতাজ হোসেন, ড. তালুকদার লোকমান হাকিমসহ বিভাগের সকল শিক্ষার্থীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ মিলনমেলা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ্যালামনাই অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. সেলিম তোহা বলেন ‘তিনি বলেন বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি অনেক বড় হয়েছে। আগে বিভাগ ছিল হাতেগোনা কয়েকটি তার মধ্যে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছিল অন্যতম। এ্যালামনাই হচ্ছে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি সেতুবন্ধন, সে বন্ধনটি চিরদিন থাকুক অটুট।’ প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান বলেন ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ হাঁটি হাঁটি পা করে আজ ২৫ বছরে পদার্পণ করেছে। তোমাদের রজতজয়ন্তী ও এ্যালামনাইয়ের মাধ্যমে তোমাদের এই ভালবাসা চিরদিন থাকুক অম্লান।’ আলোচনা সভা শেষে, দুপুরের খাবর বিতরণ করা হয়। মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর দিন শেষে বেজে ওঠে বিদায়ের সানাই। নবীনরা প্রবীণদের অশ্রুসিক্ত বিদায় জানানোর প্রাক্কালে স্মরণ করে কবির সেই বিখ্যাত কবিতা ‘সবাই তো চলে যাবে স্মৃতির ধুলো উড়িয়ে, তবু হারানো তোমার সেই দৃপ্ত পদক্ষেপ স্মরণে, ফেলে যাওয়া পদচিহ্নগুলো আমাদের মননে।’
×