ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হোক

প্রকাশিত: ০৩:২০, ২০ মে ২০১৭

পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হোক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পিপিপি প্রকল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পে সরকারি অর্থায়নের বিকল্প খুঁজতে হবে। কিন্তু পিপিপি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা না থাকায় বেসরকারী বিনিয়োগকারিরা এখাতে বিনিয়োগে আসছে না। এ অবস্থায় পিপিপিতে বিনিয়োগের মন্দা কাটাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দিয়ে অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। শনিবার গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘পিপিপিতে বিনিয়োগ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের করুনীয়’ সংক্রান্ত এক গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ এবং ওয়াটারমার্ক এমসিএল। এতে সভাপতিত্ব করে করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, পিপিপি বাস্তবায়নে সরকার সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে। কিন্তু বেসরকারি খাত সব কিছু নিয়ে গেলে এমন ভুল ধারনা সমাজে রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগকারিদের মধ্যে পিপিপি সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। এ কারণে পিপিপি বিষয়ে সহজবোধ্য ধারনা উপস্থাপনের জন্য সহজবোধ্য ধারনা দিতে পিপিপি কর্তৃপক্ষেকে পরামর্শ দেন তিনি। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, ড. শামসুল আলম বলেন, সমাজে এখন প্রচুর কালো টাকা রয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগের সুযোগ না পেয়ে এ দেশে থেকে বড় অংকের অর্থ বিদেশে প্রচার হচ্ছে। বিনিয়োগের পরিবেশের ওপর আস্থা থাকলে এ সব অপ্রদর্শিক অর্থ বা প্রাচার হওয়া অর্থ বড় অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, মাধ্যমে পিপিপি বাস্তবয়নের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা দক্ষতা, অর্থ সংগ্রহ, প্রজেক্ট অপারেশনে দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে বিশেষজ্ঞ লোকবলের। এ কারণে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ ক্যাডার তৈরির করারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে প্রায় ৮ বছরে ধরে আমরা পিপিপিতে কেন পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আসছে না তার জন্য গবেষণার ওপর তাগিদ দেন তিনি। পিপিপি প্রকল্পের বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে অপ্রদর্শিত অর্থ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দেন সড়ক ও পরিবহন সচিব এম এ এন সিদ্দিক । তিনি বলেন, প্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগে আসলে একটি অর্থের বৈধতা পাবে। অন্যদিকে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, সরকার পিপিপি আইন তৈরি করেছে। এছাড়াও পিপিপিতে বিনিয়োগ আনতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন বিনিয়োগ আসছে না তা ভেবে দেখতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ওয়ে আমিন বাজার ফ্লাইওভারের মতো পিপিপি প্রকল্পে কেন অর্থায়ন পেতে দেরি হচ্ছে তা চিহ্নিত করতে হবে। সচিব আরও বলেন, পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু আগেই ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা সমাধানে সহায়ক প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। সরকার পিপিপি প্রকল্পে ৩০ শতাংশ অর্থায়ন করে। বাকি ৭০ শতাংশ বেসরকারি অর্থায়ন । এর জন্য বেসরকারি উদ্যোগতা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। পিপিপি প্রকল্প থেকে অর্থায়ন উঠে আসার বিষয়ে আস্থা ফেলে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে উৎসাহী হবে। সাবেক সচিব ও ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান বলেন, অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দাতাদের নমনীয় ঋণ পাওয়া যাবে না। এর বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। এর সরকারি সরকারি বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে। এছাড়াও পিপিপিতে সুশাসনের ওপর গুরুত্ব দেয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল বলেন, সব অপ্রদর্শিত অর্থই কালো টাকা নয়। এসব অপ্রদর্শিত অর্থ সমাজে অস্থিরতা তৈরি করছে। এ কারণে পিপিপিতে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন , বড় বড় অবকাঠামো খাতে উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অর্থায়নের প্রয়োজন। কিন্তু পিপিপি খাতে মানুষের ধারনা ভাসা ভাসা । এ কারণে পিপিপিতে বিনিয়োগ করতে ভয় পায়। প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাবারক হোসেন ভূঁইয়া বলেন, অপ্রদর্শিত অনেক টাকা দেশে রয়েছে কিন্তু বিনিয়োগের জায়গা নেই। ফলে দেশে যে বিশাল কালো টাকা রয়েছে তা পিপিপিতে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত টাকা সব সময় কালো টাকা হয় না। ভূমি রেজিস্টেশনের সময়ও কালো টাকা তৈরি হয় এদেশে। তিনি আরও বলেন, সরকারি খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক সময় লাগে। এ কারণে প্রকল্পের সুফল পেতে বেসরকারি খাত উৎসাহিত করতে হবে। পৃথিবীতে ৬০ টি দেশে পিপিপিতে সফল হয়েছে। আমাদের এ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু পিপিপি সম্পর্কে এখনও অনেক বেসরকারি উদ্যোগতা , ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতি¯¤ানগুলো তেমন কিছু জানে না। এ কারণে সচেতনা মূলক কর্মকান্ডের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পিপিপি পাঠ্যসূচীতে অন্তভূক্তিরও পরামর্শ দেন তিনি। ব্যবসীয়দের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির উদ্দিন বলেন, গত ছয় সাত বছর ধরে পিপিপি কথা শুনে আসছি। কিন্তু সরকারের পিপিপিতে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং অনুমোদন পর্যায়ে সরকার সময় মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। ভূমি অধিগ্রহণের দীর্ঘ সময় লাগে। এখানে ডুইয়িং বিজনেক অনেক কঠিন। কিন্তু বিনিয়োগ ছাড়া অবকাঠামো গড়ে উঠবে না। বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দিতে হবে। তিনি বলেন, পিপিপির মাধ্যমে নির্মিত অবকাঠামো থেকে টোল আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে সরকারই লাভবান হবে। মাইক্রোসফট বাংলাদেশে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিশ্বে সব প্রযুক্তি নির্ভর প্রতিষ্ঠাগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কারণ এখানে ১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজার রয়েছে। মাইক্রোসফট তাদের বিনিয়োগের ৩০ শতাংশ পিপিপির মাধ্যমে করছে।
×