ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সনজিত দে

শহুরে কাক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ মে ২০১৭

শহুরে কাক

বনভোজনের গাড়ি সকালে এসে দাঁড়িয়েছে গলির মুখে। গাড়িতে লাগানো একটি মাইক। রেকর্ড প্লেয়ার থেকে সুন্দর সুন্দর গান শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর যাত্রীদের উদ্দেশে ঘোষণা করা হচ্ছে- যারা এখনও গাড়ির কাছে এসে পৌঁছাননি তারা তাড়াতাড়ি আসুন। গাড়ি ছেড়ে যাবে রামগড় চা বাগানের উদ্দেশে। মাইকের ঘোষণা শুনে যাত্রীরা তড়িঘড়ি এসে যার যার নির্দিষ্ট সিটে এসে বসে। এক সময় গাড়ি ছুটে আলকরণের গলির মুখ থেকে। বাসের ছাদে আগে থেকে বসে আছে শহুরে কাক। বাসের ছাদে বসে জীবনে প্রথম দেখতে পাচ্ছে গ্রামীণ এলাকা। না দেখলে কোনদিন জানত না কেমন হয় গ্রামীণ গাছ-গাছালি। মিষ্টি বাতাসে শহুরে কাকের মন ভরে যায়। খোলা আকাশ খোলা আবহাওয়া। সবুজাভ বন-বনানী পাহাড়-পর্বত। নানা পাখির কুজন। যত দেখে তত আগ্রহ বেড়ে যায় শহুরে কাকের। এক সময় গাড়ি থামে নূলুয়ার চা বাগান গার্ডের দোকান নামক স্থানে। চা বাগানের নাম শুনেছে শহুরে কাক। এই প্রথম বিশাল চা বাগান সেই দেখেছে। যাত্রীরা খুব হৈ হুল্লোড়ে নাস্তা পানি খেয়ে বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো খেয়ে শহুরে কাকও বেশ খোশ মেজাজে আছে। যাত্রীরা কেউ সেলফি তুলে। আবার কেউ কেউ চাপাতা গাছকে আলিঙ্গন করে ছবি তুলে যাচ্ছে। শহুরে কাক বাগানের পরিবেশ দেখে মুগ্ধ, থেকে যেতে ইচ্ছে করে তার এই বাগানে। হঠাৎ ঘাড় ফেরাতে দেখে এক গ্রামীণ কাক পরিবার। শহুরে কাক এবার উড়ে তাদের সামনে আসে। গ্রামীণ কাক পরিবার বলে, কে তুমি ভাই। শহুরে কাক নিজের পরিচয় দিলে গ্রামীণ কাক পরিবার তাকে সাদরে গ্রহণ করে। ভাল ভাল খাবারগুলো তাকে খেতে দেয়। শহুরে কাক তাদের আদর আপ্যায়ন দেখে অবাক হয়। শহরে এমনটি কল্পনাও করা যায় না। তোমরা এত ভাল। তুমি ইচ্ছে করলে এখানে থেকে যেতে পার। এখানের শিকারিরা অন্য পাখি শিকার করলেও কাককে কখনও শিকার করে না। কাককে তারা পরিবেশের বন্ধু মনে করে। কাক পরিবারের কথা ও এখানকার পরিবেশ শহুরে কাকের ভাললাগে। বিকেল হলো বনভোজনের গাড়ি শহরে ফিরে যাবে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে গাড়ি ছাড়ে শহরের উদ্দেশে। গাড়ি আস্তে আস্তে ছুটে চলে। শহুরে কাক থেকে যায় চা বাগানে। এই বাগানে সেই বন্ধুও পেয়েছে।
×