ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চৈতীর চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না ॥ চিকিৎসকদের দাবি

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২০ মে ২০১৭

চৈতীর চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না ॥ চিকিৎসকদের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না বলে দাবি করেছেন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা। তারা বলেন, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত চৈতীর অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল, তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্লাড ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর মূল চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করার পর ওই হাসপাতালের পরিচালক এম এ কাশেমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুম শুক্রবার তার জামিন মঞ্জুর করেন। অধ্যাপক কাশেম ছাড়াও অপর আসামিরা হলেন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ, কাশেম ইউসুফ, ডাঃ মর্তুজা, ডাঃ এএসএম মাতলুবুর রহমান, ডাঃ মাসুমা পারভীন, ডাঃ জাহানারা বেগম মোনা, ডাঃ মাকসুদ পারভীন ও ডাঃ তপন কুমার বৈরাগী। ভাংচুর ও মামলা দায়ের করার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা কর্মবিরতির ডাক দিলে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাইন চৈতীর সতীর্থদের অভিযোগ, বুধবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেও তাকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই ছাত্রীর মৃত্যু হলে তার সতীর্থরা গ্রিন রোডের বেসরকারী হাসপাতালটিতে ভাংচুর চালিয়েছিল। এরপর রাতে মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন ও সেন্ট্রাল হাসপাতালে অতিথি চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ শুক্রবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, আমি নিজেও রোগীকে দেখেছি। মূল দায়িত্ব পালন করেছেন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডাঃ মাসুমা পারভীন। যেখানে রোগীটির মূল চিকিৎসাই শুরু হয়নি, সেখানে চিকিৎসা ভুল হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠে না। রোগীটি ডেঙ্গু নয়, ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। হাসপাতালে নিয়ে আসার সময়ও জ্বর ও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণও হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় কোন ভুল ছিল না। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত চৈতীর অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্লাড ক্যান্সার শনাক্ত হওয়া এবং অবস্থা খারাপ থাকায় তাকে আইসিসিইউতে পাঠানোর পর মূল চিকিৎসা শুরু হওয়ার আগেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটে। অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ আরও জানান, হঠাৎ করে ইচ্ছেমতো কোন চিকিৎসাকে ‘ভুল’ বলে আখ্যায়িত করে দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসকদের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠিক না। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই ‘ভুল চিকিৎসা’ প্রচার করা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের প্রতি অমানবিক আচরণ। সেন্ট্রাল হাসপাতালের পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, কোন হাসপাতালেই সব রোগীকে বাঁচানো যায় না। ওই ছাত্রীকে আনা হয়েছিল খুব খারাপ অবস্থায়। আমরা নিতে চাইনি, কিন্তু শিক্ষার্থীরা বাধ্য করেছে। আমার ধারণা, আগে সে অন্য কোথাও লিউকেমিয়ার চিকিৎসা নিয়েছে। চৈতীর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলে সংযুক্ত এই ছাত্রী থাকতেন পলাশী এলাকায়।
×