ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী চ্যানেলের সিরিয়াল দেখে খুনের পরিকল্পনা সাজানো হয়

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২০ মে ২০১৭

 বিদেশী চ্যানেলের  সিরিয়াল দেখে  খুনের পরিকল্পনা  সাজানো হয়

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ স্কুলছাত্র মাশুক ফেরদৌসের (১৫) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় তারই বন্ধু বিদারুল ইসলাম নাঈম (১৫) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শিউরে ওঠার মতো বর্ণনা উঠে এসেছে। নাঈম শহরের মাটিডালী হাই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। হত্যাকা-ের ৪ দিনের মাথায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সে খুনের কথা স্বীকার করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। কিভাবে হত্যাকা-টি ঘটিয়েছিল সে বিষয়ে কিশোর নাঈম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। সুত্র জানায়, হত্যাকা-ের কৌশল নিয়ে বিস্মিত ও হতবাক করে দেয়ার মতো সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণে কিশোর নাঈম তার বন্ধু মাশুককে কৌশলে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে প্রথমে দুর্বল ও পরে হত্যা করে। বিদেশী টিভি চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোলের সিরিয়াল দেখে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যাকা-ের পরিকল্পনা তার মাথায় আসে বলে পুলিশ সূত্র জানায়। সূত্র জানায়, নাঈম ও নিহত মাশুক ছোটবেলার বন্ধু। দু’জন পৃথক স্কুলে পড়লেও একই এলাকায় বাড়ি। শারীরিক গঠনে নাঈমের চেয়ে নিহত মাশুক শক্তিশালী ছিল বলে অনেক সময়ই খেলাচ্ছলে সে নাঈমকে মারপিট করত। এ নিয়ে নাঈমের মনে ক্ষোভ জমে। তবে তারা একই সঙ্গে খেলাধুলা করে আসছিল। সম্প্রতি মারপিটে হারজিত নিয়ে মাশুক ও নাঈমের মধ্যে মারপিট নিয়ে চ্যালেঞ্জ হয়। এই মারপিটে নাঈম লাঠি নিয়ে আর মাশুক খালিহাতে মারপিট করবে বলে কথা হয়। এ ঘটনার পর থেকে নাঈমের মাথায় চিন্তা আসে কি ভাবে তাকে হারানো যায়। তাকে মারার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে। এরই মাঝে বিদেশী টিভি সিরিয়ালের একটি ঘটনা দেখে সে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে মাশুককে দুর্বল করে মারার পরিকল্পনা করে। সে অনুযায়ী সে শহরের ঝাউতলা এলাকার একটি ফার্মেসিতে গেলে দোকানি তাকে ঘুমের ওষুধ না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। পরে সে তার চেয়ে বড় এক পরিচিত ভবঘুরে বখাটে যুবকের মাধ্যমে ঘুমের ওষুধ সংগ্রহ করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বীকারোক্তিতে নাঈম উল্লেখ করে, সে ঘটনার রাতে মাশুককে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে কৌশলে কফির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাকে খাওয়ায়। পরে দুর্বল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে এবং এক পর্যায়ে বাড়ির বাইরে এসে ইতোপূর্বে দু’বন্ধুর চালেঞ্জ হওয়া মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে দুর্বল মাশুককের মাথায় নাঈম লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সে পড়ে যায়। এর পর নাঈম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বুধবার পুলিশ শাজাহানপুর এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তাকে গ্রেফতার করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আসলাম আলী জানান, মাশুক হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে কিভাবে সে হত্যাকা- ঘটিয়েছে তার পুরো বর্ণনা দিয়েছে। যে পাত্রে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে মাশুককে কফি খাওয়ানো হয়েছিল সেটি ও মোবাইল ফোনসহ অন্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আরও তদন্ত অব্যাহত থাকবে। তদন্তকারী কর্মকতা জানান, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর পর আদালতের নির্দেশনায় নাঈমকে যশোরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠান হয়েছে। তবে মামলার বাদী জাসদ নেতা এ্যাডভোকেট এমদাদুল হক নাঈমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীকে পুলিশের নাটক হিসাবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
×